সচেতনতা

শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্নে করণীয়

বাড়ছে শীত। এ সময় শিশুর ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। নবজাতক হলে তো কথাই নেই। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখতে মনোযোগী হতে হবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ থেকেই। স্বাভাবিকভাবে পূর্ণ গর্ভাবস্থায় (৩৭ সপ্তাহ) যদি ঘরে শিশুর জন্ম হয়, তাহলে কক্ষের তাপমাত্রা হতে পারে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। জন্মের পর নবজাতক যে কক্ষে থাকবে, তখনো এটি প্রযোজ্য। রুম হিটার জ্বালিয়ে, দরজা-জানালা বন্ধ রেখে এ তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে পারেন। অনেকে ঘরের কোণে কয়লা ও তুষের আগুন রাখেন।

এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতকের শরীর সুতির পুরনো পরিষ্কার ও নরম কাপড়ে মুছে ফেলুন। শরীরে গর্ভজাত তরল লেগে থাকলে খুব দ্রুত দেহের তাপ বের হয়, যাকে ইভাপোরেটিভ হিট লস বলে। নবজাতককে আলাদা বিছানা বা ঠাণ্ডা কোনো স্থানে না রেখে মায়ের পেটের কাছে বা বুকের ওপর রাখুন। খেয়াল রাখুন, নবজাতকের ত্বকের সঙ্গে মায়ের ত্বক লেগে থাকবে। নবজাতককে উষ্ণ কাপড়ে ঢেকে যত দ্রুত সম্ভব শালদুধ দিন। এতে থাকা গ্লুকোজ, প্রোটিন, চর্বি শিশুর শরীর উষ্ণ করে। দুধ খেতে হালকা ব্যায়াম হয় বলে শরীর নিজ থেকে উত্তাপ তৈরি করে।

যা করবেন না : শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই প্রচলিত কিছু আচরণে শীতে নবজাতকের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শিশুকে গোসল করিয়ে দেবেন না। কারণ জন্মের পর নবজাতকের দেহে এক ধরনের সাদা আবরণ দেখা যায়। অনেকে এটি নোংরা ভেবে মুছে দেন বা গোসল করিয়ে ধুয়ে দেন। কেউ লিকুইড প্যারাফিনেও মুছে ফেলেন। কিন্তু এটি মূলত নবজাতকের সুরক্ষা কবচ। এটি নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখে, যে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের সুরক্ষা দেয়। অধিকাংশই জন্মের একদিনের মধ্যে মাথার চুল কামিয়ে দেন।

কিন্তু কখনো কখনো এ কারণে নবজাতকের নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। চুল নবজাতকের মাথার তাপমাত্রা ধরে রাখে। খুব বেশি বড় চুল হলে এবং তাতে সমস্যা তৈরি হলে কাঁচি দিয়ে বড়জোর একটু ছেঁটে দেওয়া যায়। রোদে দিতে অনেকে নবজাতককে ভোরের ঠাণ্ডা বাতাসে খালি গায়ে ফেলে রাখেন। শীতের ঠাণ্ডা বাতাস, কুয়াশা বা মেঘলা অবস্থায় শিশুকে বাইরে নেওয়া ঠিক নয়। রোদ উঠলে, বাতাস কম থাকলে বেলা হলে আগে নবজাতককে কোলে নিয়ে রোদে বসতে হবে। শরীর উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকলে একটি একটি করে পুরো অঙ্গ শরীরে রোদ লাগাতে হবে, তাও আধাঘণ্টার বেশি নয়। বিকালের রোদ নবজাতকের শরীরে লাগানো ক্ষতিকর।

আরেকটি প্রচলিত আচরণ হলো, নাভির নাড়িতে তেল মেখে রোদে রাখা। হাড় শক্ত করতে ও শরীর গরম করতে নবজাতকের শরীরে তেল বা লোশন মালিশ করা বহুল প্রচলিত ঘটনা। অথচ চিকিৎসকরা বলেন, প্রথম এক মাস শিশুকে তেল, সাবান, পাউডার, লোশন, ক্রিম, কালি, কাজল কিছুই ছোঁয়ানো যাবে না। দুই থেকে তিন মাস পর অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মালিশ করা যেতে পারে। অনেকেই উন্নতমানের ভেবে বিদেশি কোম্পানির তেল, লোশন ব্যবহার করেন। এগুলো আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী কিনা, দেখে বুঝে নিন। এসবে শিশুর অ্যালার্জির আশঙ্কাও থাকে।

শীতকালে অন্তত এক মাস নবজাতককে সরাসরি পানিতে গোসল করানো উচিত নয়। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া বা প্রি-ম্যাচিউর শিশুকে দুমাস গোসল করানো ঠিক নয়। তিন দিন পর কুসুম গরম পানিতে শরীর হালকা মুছে দিতে পারেন। এক বা দুমাস পর সপ্তাহে একদিন পানিতে গোসল করানো যাবে। গোসল বা গা মোছানোর পানি প্রথমে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর হালকা কুসুম গরম করে নিন। পানিতে জীবাণুনাশক তরল মেশানো যাবে না। পানি সূর্যের রোদে গরম করা হলেও হবে না। শিশুর গোসল অবশ্যই বদ্ধ কোনো ঘরে হতে হবে। এতে বাতাসে নবজাতক ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবে না।

পোশাক হবে কোমল। সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। কারণ উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি পোশাকের ওপর উলের সোয়েটার চাপাতে পারেন। নবজাতকের সর্দি মুছতে রাবারের নেজল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করুন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নবজাতকের পর বড় শিশুর ক্ষেত্রেও যত্নবান হোন। শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। গ্রাম-গঞ্জে শীত খুব প্রকট। সব শিশুর প্রতি অভিভাবকের সতর্ক থাকতে হবে। নইলে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া দেখা দেবে ঘরে ঘরে। হাসপাতালগুলোয় এখন ওমিক্রনের ভয়। যদি এখনই সাবধান না হই, ভয় থেকেই যায়। তাই রোগের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এন এইচ, ২৬ জানুয়ারি

Back to top button