শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা দিলাম, আমাকে অ্যারেস্ট করুক

সিলেট, ২৬ জানুয়ারি – অবশেষে অনশন ভাঙতে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকের হাতে পানি পান করে অনশন ভাঙবে বলে কথা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাত ৩টা ৫৫টায় সস্ত্রীক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।

টানা দুই ঘণ্টারও বেশি কথা বলার পর শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙবে বলে জানান ড. জাফর ইকবাল।

এ সময় শিক্ষার্থীরা তাকে পেয়ে গ্রেফতার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি তোলেন।

শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

পকেট থেকে টাকা বের করে বলেন, ‘আমি আসলে এসেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। আমি খুব ইমোশনাল, আমার চোখে পানি চলে আসে। ওরা (সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী) টাকা-পয়সা দেওয়ায় গ্রেফতার হয়েছে। তোমাদেরকে সাহায্য করতে যদি এরেস্ট হতে হয় তাহলে আমিও হব। আমি তোমাদেরকে এই ১০ হাজার টাকা দিলাম। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে এরেস্ট করে কিনা।’

ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে শাবির সাবেক অধ্যাপক বলেন, ‘আমি ধরে নিয়েছিলাম, অনশনের এখানে মেডিকেল টিম আছে। তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, ডাক্তাররা ছিলেন কিন্তু তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি এসব ঘটনা বলব। এখানের অনশনকারীদের অবস্থাই যখন এতো খারাপ, তাহলে অসুস্থ ২০ জনের কি অবস্থা! আমি শঙ্কিত। এটা চরম অমানবিকতা। ’

গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আইজিপিকে বলেছি, ছাত্রদের বিশ্বাস করুন। ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তাদের মারবেন না। সবার হাতে স্মার্টফোন থাকে একটা ছবি দেখান যে, ছাত্ররা গুলি করেছে। এসবের কোনো প্রমাণ নেই।’

শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমগুলোর সামনে কথা দিয়েছ, এই অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দেবা এটা মানা যায় না। সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে তো আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’

‘তোমরা টের পাচ্ছ না তোমরা কি করেছে। ৩৪ জন ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমরা সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে নাড়া দিয়েছ। তোমাদের আমি অভিনন্দন জানাই। এমন আন্দোলনে বাইরের মানুষ নিজেদের স্বার্থে নিয়ে নেয়। তোমরা সেটা হতে দাওনি। আমি বহিরাগত। এরপরও তোমরা যদি আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব।’

প্রসঙ্গত, আন্দোলনে অর্থ জোগানের অভিযোগে শাবিপ্রবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর আগে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই ৫ জনকে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলা দায়েরের পর তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ।

গ্রেফতার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন – হাবিবুর রহমান খান (২৬), রেজা নুর মুইন (৩১), এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), একেএম মারুফ হোসেন (২৭), ফয়সাল আহমেদ (২৭)।

সূত্র : যুগান্তর
এন এইচ, ২৬ জানুয়ারি

Back to top button