অপরাধ

ফারইস্ট লাইফে অনিয়ম: ২৩ কর্মকর্তার পদাবনতি

ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি – বিমা খাতে ব্যাপক সমালোচিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৩ কর্মকর্তার পদাবনতি হয়েছে। এদের অধিকাংশই ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পদাবনতি কার্যকর হবে।

অর্থাৎ গত ২ বছরে তারা অতিরিক্ত যে সব বেতন-ভাতা নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে। এ বিষয়ে ২৩ জানুয়ারি চিঠি ইস্যু করে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স। পদাবনতি হয়েছে তাদের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মো. মোশাররফ হোসাইনের বোন ফেরদৌসি আকতারও আছেন। বর্তমান পদ থেকে তাকে ৩ ধাপ পিছিয়ে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার করা হয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে জয়েন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বা (জেভিপি) হিসাবে পদোন্নতি পান।

জানতে চাইলে ফারইস্টের চেয়ারম্যান ড. রহমত উল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা একটি কমিটি করে নিয়মের মধ্যে এনেছি। আগে উনারা যেসব বেতন-ভাতা নিয়েছিলেন, তা সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, পদাবনতি মানে এই নয় যে উনারা এ অবস্থানে থাকবেন। ইতোমধ্যে অনেকের ৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ আমরা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই।

২০১৭ সালের ২ জুলাই পদ্মা লাইফ থেকে এ কোম্পানিতে এসইও পদে যোগদান করেন ফেরদৌসি আক্তার। মাত্র আড়াই বছরে তিনটি প্রমোশন পেয়ে জয়েন ভাইস প্রেসিডেন্ট বা (জেভিপি) হয়েছিলেন তিনি। প্রথম বছরে ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, এরপর অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেভিপি হিসাবে পদোন্নতি পান এ কর্মকর্তা। স্বাভাবিক নিয়মে এ তিনটি প্রমোশনের জন্য ৯ বছর সময় লাগে।

কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তিতে লাফিয়ে লাফিয়ে পদোন্নতি পান তিনি। আর্থিক সংকটের কারণে গত ৬ বছর কোম্পানির কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং পদোন্নতি বন্ধ। সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাকে আটকাতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে অন্য কর্মকর্তাদের ক্ষোভ থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের বোন হওয়ায় কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিবেদক। এরপরই নড়েচড়ে বসে কোম্পানিটি। কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেয় বিএসইসি।

অন্যদের মধ্যে মাজেদুল ইসলামকে এএমডি থেকে পদাবনতি করে এসইভিপি করা হয়েছে। কামাল আহমেদ হাওলাদারকে এসইভিপি থেকে জেইভিপি, শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাককে এসইভিপি থেকে এসভিপি, মো. ফিরোজ শাহ আলমকে ইভিপি থেকে এসইভিপি, মো. নজরুল ইসলামকে ইভিপি থেকে এসভিপি, মাহমুদুল হাসানকে ইভিপি থেকে এফএভিপি, মো. আমিরুজ্জামানকে জেইভিপি থেকে এসভিপি, মো. শাহ আলমকে এসভিপি থেকে জেএসভিপি, মো. শহিদুল আলমকে এসভিপি থেকে ভিপি করা হয়েছে। এদিকে মামুনুর রশিদকে এসভিপি থেকে ভিপি, শাহাদত হোসেন হাজারিকে এসভিপি থেকে জেএসভিপি, মাহমুদ হাসানকে জেএসভিপি থেকে জেভিপি, মো. ইলিয়াসুর রহমানকে জেভিপি থেকে এভিপি, মো. নূরে আলম আল কায়সারকে ভিপি থেকে জেভিপি, মো. আজহারুল ইসলামকে ভিপি থেকে এভিপি করা হয়েছে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে পদাবনতি প্রাপ্তদের মধ্যে ওসমান গণি এভিপি থেকে এসও, ফারহানা ইয়াসমিনকে এভিপি থেকে এসও, অনামিকা ইসলামকে এভিপি থেকে অফিসার, মো. মাসুম হোসাইনকে এফএভিপি থেকে এসইও, মো. নূরে আলম মিয়াজিকে এফএভিপি থেকে এসইও এবং মো. মকবুল এলাহীকে এফএভিপি থেকে ইও করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বোর্ডের বেশ কয়েকজন পরিচালক পদাবনতির সঙ্গে একমত নন। তাদের যুক্তি হলো, এটি আইনসঙ্গত নয়। এছাড়াও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা পদোন্নতির যোগ্য।

জানা গেছে, ফারইস্ট লাইফের দুর্নীতির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বিমা খাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ বছরে ফারইস্ট লাইফে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে মূল লুটপাট হয় ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে।

এ সময়ে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ও এফডিআর ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রাসাদ সমান বাড়ি ও তিনটি ব্যবসা খুলেছেন। দুটি জমি ক্রয় দেখিয়ে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু বিমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এর সঙ্গে সাবেক অডিট কোম্পানির চেয়ারম্যান এমএ খালেকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে আইডিআরএ। এছাড়াও লুটপাটের সময় অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে ছিলেন আইডিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন।

সূত্র : যুগান্তর
এন এইচ, ২৬ জানুয়ারি

Back to top button