প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ ও মোকাবেলার উপায়
কোন সতর্কবানী ছাড়া আকস্মিক প্রচন্ড ভয়ের অনুভূতির ফলে প্যানিক অ্যাটাক হয়ে থাকে। এটি যেকোন সময় হতে পারে, এমনকি ঘুমের সময়ও। প্যানিক অ্যাটাক হলে অনেকেই মনে করে যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে অথবা সে মারা যাচ্ছে বা পাগল হয়ে গেছে। প্যানিক অ্যাটাক হলে মানুষ যে প্রচন্ড ভয় বা আতংকের শিকার হয় তার অনুপাত বাস্তবতার সাথে মেলেনা এবং তা তার চারপাশের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। হ্যাঁ এই প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার লক্ষণ এবং এর মোকাবেলা করার উপায় সম্পর্কেই জেনে নেব আজ।
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার লক্ষণ সমূহ :
– হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়
– দুর্বল অনুভব করে, অজ্ঞান হয়ে যায় বা মাথা ঘোরায়
– হাত ও আঙ্গুল অসাড় হয়ে যায় বা কাঁপে
– আতংক অনুভব করে বা মৃত্যুভয় পায়
– ঘামতে থাকে ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়
– বুকে ব্যথা হয়
– শ্বাসকষ্ট হয়
– নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি হয়
প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়, ১০ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয়। যদিও কিছু লক্ষণ দীর্ঘসময় যাবত থাকতে পারে। যাদের একবার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে তাদের পরবর্তীতে আবারও অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদি বার বার এই অ্যাটাক হতে থাকে তাহলে তা চিন্তিত হওয়ার মত বিষয়। তখন তাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলা হয়। প্যানিক ডিজঅর্ডার অত্যন্ত ভীতিজনক বা উদ্বেগের বিষয় কারণ পরবর্তী অ্যাটাক কখন হবে এটি বলা যায় না। আমেরিকায় ৬ মিলিয়ন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্যানিক ডিজঅর্ডারের শিকার। পুরুষের চেয়ে নারীদের প্যানিক ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। সাবালকত্ব অর্জনের প্রথম দিকে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার কারণ :
কী কারণে প্যানিক ডিজঅর্ডার হয় সে সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানা যায়নি। জৈবিক দুর্বলতার কারণে কিছু মানুষের প্যানিক অ্যাটাক হয়। তাদের জীবনে বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের কারণের (যেমন- বিয়ে হলে, বাচ্চা হলে অথবা নতুন চাকরিতে জয়েন করলে ইত্যাদি) সাথে সম্পর্কিত হতে পারে প্যানিক অ্যাটাক। পারিবারিক ভাবে প্যানিক ডিজঅর্ডার বিকাশের প্রবণতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগা, আত্মহত্যার প্রবণতা ও অ্যালকোহল বা মাদকের প্রতি আসক্ত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
প্যানিক অ্যাটাক মোকাবেলা করার উপায় :
যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে তাহলে গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। যদি ভিড়ের মধ্যে থাকেন তাহলে নিরিবিলি স্থানে যান এবং সাথে কেউ থাকলে তাকে বলুন আপনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে এবং আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। যদি পাশের মানুষটি আশ্বস্ত করেন যে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে এবং আপনি দ্রুত ভালো হবেন তাহলে লক্ষণের তীব্রতা কমতে থাকবে। লক্ষণ না কমলে ডাক্তারের সাথে দেখা করে ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হোন যে আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়নি। এছাড়া নিজেকে বোঝান যে আপনি মারা যাচ্ছেন না এবং এই সমস্যাটি অস্থায়ী এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। যদি আপনার সমস্যাটি প্যানিক অ্যাটাক হয় তাহলে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে আলোচনা করতে দ্বিধান্বিত হবেন না।
সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে প্যানিক ডিজঅর্ডার নিরাময়যোগ্য সমস্যা। প্যানিক ডিজঅর্ডার সফলভাবে নিরাময়ের জন্য সাইকোথেরাপি ও ঔষধ উভয়ই একসাথে বা আলাদা আলাদা ব্যবহার করা হয়। যদি ঔষধের প্রয়োজন হয় তাহলে ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিঅ্যাংজাইটি ঔষধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ, অ্যান্টিকনভালসেন্ট ঔষধ অথবা বিটা-ব্লকার ধরণের হার্টের ঔষধ দেবেন প্যানিক ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের জন্য।
লিখেছেন- সাবেরা খাতুন
এম ইউ