ক্রিকেট

ঢাকাকে হারিয়ে শুভ সূচনা খুলনার

ঢাকা, ২২ জানুয়ারি – প্রথম ইনিংসে ম্যাচ জেতার জন্য অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন ব্যাটাররা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাকিটা করতে পারলেন না বোলাররা। যে কারণে পরাজয়ে শুরু হলো মিনিস্টার ঢাকার বিপিএল। রনি তালুকদার, আন্দ্রে ফ্লেচার ও থিসারা পেরেরার ঝড়ে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে খুলনা টাইগার্স।

আগে ব্যাট করা ঢাকা নিজেদের ২০ ওভারে ১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল। জবাবে আন্দ্রে ফ্লেচার ২৩ বলে ৪৫, রনি তালুকদার ৪২ বলে ৬১ ও থিসারা পেরেরা ১৮ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললে এক ওভার আগেই ম্যাচ জিতে যায় মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন খুলনা।

১৮৪ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই শুভাগত হোমের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তরুণ বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। আউট হওয়ার আগে জুনিয়র তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ২ রান।

তবে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার। জার্সির পেছনে ‘স্পাইসম্যান’ লিখে খেলতে নেমে ঢাকার বোলারদের নিজের ঝাঁজ পুরোটা দেখিয়ে দেন ক্যারিবীয় তারকা। ফ্লেচারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করেছেন তিনে নামা রনি তালুকদারও।

সবচেয়ে বড় ঝড়টা বয়ে যায় রুবেল হোসেনের ওপর দিয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে প্রথম চার বলে ফ্লেচারের কাছে ৪, ৬, ৪ ও ৪ হজম করেন রুবেল। এক বল ডট দিয়ে শেষ বলে আবার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেই ওভার থেকে ২২ রান নিয়ে নেন ফ্লেচার।

পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে স্বদেশি আন্দ্রে রাসেলকেও জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান ফ্লেচার। তার ঝড়ে প্রথম ৬ ওভারেই ৬৫ রান করে ফেলে খুলনা। দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা ফ্লেচারের বিদায়ঘণ্টা বাজে আম্পায়ারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। রাসেলের লেগস্ট্যাম্পের ডেলিভারি তার প্যাড ঘেঁষে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শেহজাদের গ্লাভসে।

ঢাকার জোরালো আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। যা দেখে রীতিমতো হতবাক এক অভিব্যক্তি দেন ফ্লেচার। রিভিউ সিস্টেম না থাকায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ফিরতে হয় তাকে। সাজঘরে ফেরার আগে সাত চার ও এক ছয়ের মারে মাত্র ২৩ বলে ৪৫ রান করেন ফ্লেচার।

এরপরও রানের গতি থামতে দেননি রনি তালুকদার। তবে হতাশ করেন অধিনায়ক মুশফিক। রুবেল হোসেনের এক বাউন্সারে গ্লাভসে লাগার পর এবাদত হোসেনের বাউন্সারেই পরাস্ত হন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ৬ রান।

রুবেলের যেই ওভারে হাতে লাগে মুশফিকের, সেই ওভারটিতে শেষ দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচের সমীকরণ নিজেদের পক্ষেই রাখেন রনি। ইনিংসের ১২তম ওভারে মাত্র ৩১ বলেই নিজের ফিফটি তুলে নেন এ ডানহাতি টপঅর্ডার। তাকেও আউট করেন এবাদত। রনির ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪২ বলে ৬১ রান।

রনি সাজঘরে ফেরার সময় ৩২ বলে ৫০ রান প্রয়োজন ছিল খুলনার। এই চাহিদাকে খুব বেশি বড় হতে দেননি লংকান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। স্বদেশি পেসার ইসুরু উদানার দুই ওভারে দুইটি করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচটি নিজেদের হাতেই রাখেন থিসারা।

শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য খুলনার বাকি থাকে মাত্র ১২ রান। রাসেলের করা সেই ওভারের তৃতীয় বলে চার ও শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান। তিনি অপরাজিত থাকেন ৫ বলে ১২ রান করে। থিসারার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৬ চারের মারে ৩৬ রান।

এর আগে কুয়াশার কথা মাথায় রেখে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তার সিদ্ধান্তের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি খুলনার বোলাররা। শুরু থেকেই মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন শেহজাদ। অপর প্রান্তে রয়ে-সয়ে উইকেট বাঁচিয়ে খেলছিলেন তামিম।

শেখ মেহেদির করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন শেহজাদ। মেহেদির পরের ওভারে টানা তিন চার মারেন আফগান তারকা ওপেনার। ফরহাদ রেজার করা পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আরও দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রথম ছয় ওভার থেকে ঢাকার সংগ্রহ ৫৬ রানে পৌঁছে দেন শেহজাদ।

তবে তার ইনিংসের সমাপ্তিটা ঘটে দূর্ভাগ্যজনক এক রানআউটে। ইনিংসের নবম ওভারের প্রথম বলে সরাসরি থ্রোয়ে আউট হন শেহজাদ। ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই দুই রানের জন্য ছুটেছিলেন তামিম, খানিক ধীরে দৌড়াচ্ছিলেন শেহজাদ। সুযোগ বুঝে বাউন্ডারি থেকে থ্রো করে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তানজিদ হাসান তামিম, ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ২৭ বলে ৪২ রান করা শেহজাদের।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর হাত খোলেন তামিম। ফরহাদ রেজার করা ১১তম ওভারে পরপর তিন বলে তিন চার মারেন দেশসেরা ওপেনার। এক ওভার পর মুখোমুখি ৪১তম বলে নিজের ক্যারিয়ারের ৪১তম ফিফটি পূরণ করেন তামিম। কিন্তু এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি।

ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ মিড উইকেটে নবীন উল হকের দারুণ এক ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে হয় ৫০ রান করা তামিমকে। হতাশ করেন তিন নম্বরে নামা নাইম শেখ। ইনিংসের ১৫তম ওভারে আউট হওয়ার আগে মাত্র ৯ রান করেন তিনি।

তামিম আউট হওয়ার পর উইকেটে এসেই প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন মারকুটে ব্যাটার আন্দ্রে রাসেলও। থিসারা পেরেরার করা ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে কাউ কর্নার দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান এ ক্যারিবীয় তারকা।

কিন্তু পরের বলেই অদ্ভুতুড়ে এক রানআউট হন রাসেল। মিডল স্ট্যাম্পে থাকা স্লোয়ার ডেলিভারিটি থার্ড ম্যানের দিকে ঠেলে দিয়ে কুইক সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দেন রাসেল ও রিয়াদ। থার্ডম্যানে দাঁড়ানো মেহেদি বল ধরেই থ্রো করেন স্ট্রাইক প্রান্তে, যা ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। মাহমুদউল্লাহ পপিং ক্রিজে ঢুকে যাওয়ায় বেঁচে যান।

তবে স্ট্রাইক প্রান্তে স্ট্যাম্প ভাঙার পর সেই বলই আবার আঘাত হানে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। কিন্তু তার আগে পপিং ক্রিজে ঢুকতে পারেননি রাসেল। অপরপ্রান্তে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের উইকেটই হারিয়ে বসেন তিনি। আর এক থ্রোয়ে দুই স্ট্যাম্প ভেঙে বিরল রানআউটের জন্ম দেন মেহেদি।

রাসেল মাত্র ৭ রান করে আউট হলেও ঢাকার বড় সংগ্রহ পেতে সমস্যা হয়নি অধিনায়কের চওড়া ব্যাটের কল্যাণে। নবীন উল হকের ১৯তম ওভারে জোড়া ছক্কা হাঁকান রিয়াদ। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে হাঁকান একটি করে চার ও ছক্কা।

পরপর তৃতীয় বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড উইকেটে তানজিদ তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হন রিয়াদ। তার ব্যাট থেকে আসে দুই চার ও তিন ছয়ের মারে ২০ বলে ৩৯ রান। ইনিংসের একদম শেষ বলে হাঁকানো বাউন্ডারিতে দলীয় সংগ্রহ ১৮৩ রানে নিয়ে যান ইসুরু উদানা। অন্য প্রান্তে শুভাগত হোম অপরাজিত থাকেন ৪ বলে ৯ রানে।

খুলনার পক্ষে কামরুল রাব্বি ৩ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে খরচ করেন ৪৫ রান। আরেক পেসার থিসারা পেরেরা ২৭ রানে নেন একটি উইকেট।

সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ২২ জানুয়ারি

Back to top button