সচেতনতা

যেসব সমস্যা থেকে পায়ুপথের ক্যানসার

পায়ুপথের ক্যানসারের (precancerous conditions) পূর্ববর্তী পরিস্থিতি বা কোনো অবস্থা থেকে শুরু হতে পারে, এখন পর্যন্ত তার কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। কিন্তু জেনে নেওয়া ভালো, কিছু কিছু ক্ষেত্র ক্যানসারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে, যেগুলো এখনো ক্যানসার নয় কিন্তু ক্যানসারের পূর্বাববস্থা এবং চিকিৎসা না করলে বা অপসারণ না করলে ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। এ বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা-

পলিপ বা মাংসপি- : এটি আলগা মাংসের টুকরো, যা পায়ুপথের সঙ্গে লেগে থাকে। এটি পরীক্ষা করলে, এমনকি ক্যানসার পূর্ববর্তী অবস্থায়ও এর সঙ্গে অস্বাভাবিক কোষ যুক্ত থাকতে পারে। হতে পারে এক বা একাধিক পলিপ। এটি পায়ুপথ ক্যানসারের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। শিশু বলে সাধারণত কিছু একটা পায়ুপথ দিয়ে বেড়িয়ে আসে। সঙ্গে রক্তপাত থাকে। এটি ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ নয়। কিন্তু তরুণ বা চল্লিশোর্র্ধ্ব কেউ একই সমস্যায় ভুগলে এটি জটিল সমস্যা বলে ধরে নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস থাকে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কম বয়সীদের একশোর বেশি ছোট ছোট পলিপ থাকে। এটা জিনগত ত্রুটির কারণে এবং বংশানুগত কারণে হতে পারে। এর নাম ঋধসরষরধষ অফবহড়সধঃড়ঁং ঢ়ড়ষুঢ়ড়ংরং (ঋঅচ)। বয়স্কদের পলিপ কিছুটা কম থাকে- এক-দুটি। এগুলো ক্যানসার সিন্ড্রোমের সঙ্গে জড়িত। এটিও জিনগত ত্রুটির কারণে হতে পারে। যা-ই হোক, জেনে রাখা ভালো, এই পলিপ বা এডেনোমা একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। ফলে এগুলো থেকে ক্যানসার হতে পারে। এ ক্যানসারের নাম অফবহড়সধ পধৎপরহড়সধ ংবয়ঁবহপব.

পলিপের ধরন : পলিপ নানা ধরনের হতে পারে। ঞঁনঁষধৎ ধফবহড়সধ : এটি আঙুলের মতো হয়। পায়ুপথের সঙ্গে সরু নালির সাহায্যে ঝুলে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও বড়দের ক্ষেত্রে এটি অপসারণ করে পরীক্ষা করা উচিত।

ঠরষষড়ঁং ধফবহড়সধ : এটি ফুলকপির মতো দেখা যায়। পায়ুপথের সঙ্গে বড় জায়গাজুড়ে লেগে থাকে। এ থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি। ফলে রুটসহ কিছুটা স্বাভাবিক পায়ুপথের স্থান নিয়ে অপসারণ করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্যানসার আক্রান্ত বা ক্যানসার পূর্ববর্তী পর্ব আসতে পারে।

ঞঁনঁষড়ারষষড়ঁং ধফবহড়সধ : এটি পূর্ববর্তী দুটির মিশ্রিত রূপ। এটিকেও ক্যানসার পূর্ববর্তী পর্ব বলে ধরে নেওয়া হয়।

লক্ষণ : প্রথম কথা হলো- কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে পাতলা পায়খানা, আমযুক্ত রক্তমিশ্রিত পায়খানা, রক্তপাত, পেটে মোচড় দেওয়া, অস্বস্তি ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।

অনেক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে কোলনস্কোপি করে দেখা যায় এক বা একাধিক পলিপ আছে।

নির্ণয় পদ্ধতি : পায়ুপথে আঙুলের সাহায্যে পরীক্ষা এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পলিপ ছাড়াও আঙুলের মাথায় রক্তের ভাব, আম ইত্যাদি দেখে বোঝা যায়, সমস্যা আছে কিনা। যেহেতু অনেক সময় এ পলিপের কোনো লক্ষণ থাকে না, তাই কোলনস্কোপি পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষ করে হঠাৎ কোনো সমস্যা অনুভব হলে অথবা যাদের পারিবারিকভাবে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে। নির্ণয় করা সম্ভব হলে পলিপ ক্যানসারে মোড় নেওয়ার আগেই তা অপসারণ করা সম্ভব।

চিকিৎসা পদ্ধতি : রোগী কোন অবস্থায় এসেছেন, তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে যদি জটিল না হয় বা অন্য কোনো রোগের সঙ্গে না থাকে, তাহলে শুধু কোলনস্কোপি করেই পলিপ অপসারণ করে নির্মূল করা যায়। তবে যেহেতু এগুলো পারিবারিক এবং কিছু সিন্ড্রোম এর সঙ্গে থাকে, তাই পুরো শরীরের চেকআপ করা জরুরি। অবস্থাবিশেষে অনেক বড় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। তবেই সম্ভব এ জাতীয় পরিস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় ও সম্পূর্ণ নির্মূল করতে। তাই সচেতন হোন।

এন এইচ, ২১ জানুয়ারি

Back to top button