নারায়নগঞ্জ

নির্বাচনে পরাজয়েই বহিষ্কার তৈমুর-কামাল?

কিরণ শেখ

নারায়ণগঞ্জ, ১৯ জানুয়ারি – দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ভোট করার অপরাধে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। আর তৈমুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

কিন্তু তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে জিতে গেলে বিএনপি তাদের বহিষ্কার করতো না বলে মনে করছেন দলীয় অনেক সিনিয়র নেতা। তারা বলছেন, তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে যদি হারাতেন, তাহলে তাকে বিজয়ের মালা পরিয়ে বিএনপির বরণ করে নিতো। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং ৬৬ হাজার ৫৩৫ ভোটের তিনি হেরেছেন। এই হার দলের জন্য বিব্রতকর। সেজন্যই তৈমুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৫ জানুয়ারি তৈমুর আলম খন্দকারকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরআগে গত ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে তৈমুরকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় বিএনপি। পরে ৩ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকেও তৈমুরকে প্রত্যাহার করা হয়।

বহিষ্কারের পরও তৈমুরের পক্ষে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামেন। আর তার প্রধান এজেন্ট হিসেবে ভোটের মাঠে ছিলেন কামাল। ওই সময় তৈমুর বলেছিলেন, বিএনপির সব নেতাকর্মী তার পক্ষে রয়েছেন।

এদিকে এর আগেও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর। কিন্তু ওই সময় পরে দলের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

তৈমুর ও কামালের বহিষ্কারের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। এ অভিযোগে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু তখন বহিষ্কার করেনি। কারণ এই সময় বিএনপি পর্যবেক্ষণ করেছে যে, তৈমুর নির্বাচনে হারে নাকি জেতে। কিন্তু তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। মূলত এই কারণেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পরাজয়েই কারণেই কি দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, জানতে চাইলে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, দেখুন, এই রকম দৃষ্টান্ত কুমিল্লায়ও আছে। কুমিল্লায় নির্বাচনে জেতার পর তাকে আবার দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।

নির্বাচনে হারার কারণেই কি তাহলে বিএনপি আপনাকে বহিষ্কার করেছে- এই প্রশ্নের জবাবে তৈমুর বলেন, সেটাই হয়তো হতে পারে।

অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ভোট করেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। এই অভিযোগে তৈমুরকে বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর এবার তাকে দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তৈমুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালও হয়েছেন বহিষ্কৃত।

গত ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত তৈমুর ও কামালকে বহিষ্কারাদেশের আলাদা চিঠি তাদের কাছে পাঠানো হয়। এই চিঠিতে তাদের বহিষ্কারের কারণ হিসেবে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশের চিঠিতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হল। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।

জানতে চাইলে এ টি এম কামাল বলেন, আমি মানবিক কারণে নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারের পাশে ছিলাম। একারণে দল যে শাস্তি দিয়েছে তা মাথা পেতে নিয়েছি। আর দল যদি চায় দলের একজন কর্মী হিসেবেও থাকতে পারবো না, তাহলে একজন সমর্থক হিসেবেই থাকতে চাই। কিন্তু এর আগেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনে দলের পদে থাকা ব্যক্তিরা নির্বাচন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন নির্বাচনে পরাজয়ের কারণেই আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, বড় ধরনের ব্যবধানে হারার কারণে হয়তো দল বিব্রত। একারণে হয়তো এই সিদ্ধান্ত।

বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর তৈমুর আলম খন্দকারকে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ১৯ জানুয়ারি

Back to top button