রাজশাহী বিভাগ

হেরোইন আত্মসাতে হত্যার পর ‘নাটক’, এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন পুলিশের পাঁচ সদস্য!

রাজশাহী, ০১ নভেম্বর- রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার চরে চলতি বছরের ২২ মার্চ রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। এতে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয় ‘বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে’।

দকিন্তু হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাত মাস পর উন্মোচিত হলো এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন পুলিশের পাঁচ সদস্য। এ মামলায় গ্রেফতার এক ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, হেরোইন আত্মসাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্যদের নাম উল্লেখ করেছেন।

নিহত রফিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গাইনাপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। গত ২২ মার্চ সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা দেওয়ানপাড়া এলাকার পদ্মার চর থেকে রফিকুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্তভার নেওয়ার পর গোদাগাড়ীর ইসাহাক আলী ইসা নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি ইসা বলেন, গোদাগাড়ী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, এসআই আবদুল মান্নান, এসআই রেজাউল ইসলাম, কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম পরিকল্পিতভাবে রফিকুলকে হত্যা করে মরদেহ চরে ফেলে রাখে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ‘বজ্রপাত নাটক’ সাজিয়ে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।

ইসা তার জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, তিনি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। গত মার্চে রফিকুল ও তার সঙ্গী জামাল উদ্দীন ৫০০ গ্রাম হেরোইনের চালানটি নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে আসেন। ইসা পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করেন, হেরোইনের চালানটি তিনি ধরিয়ে দেবেন। বিনিময়ে তাকে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। ২১ মার্চ রাতে ইসাসহ ওই পাঁচ পুলিশ সদস্য চরে অবস্থান নেন। জামাল ও রফিকুল হেরোইন নিয়ে ওই পথে এলে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের মারধরের একপর্যায়ে রফিকুল মারা গেলে চরে তার মরদেহ ফেলে রাখা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনাটি ঘটে।

রফিকুলের সঙ্গে থাকা জামালকে ধরে এনে ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা দেওয়া হয়। আর অবশিষ্ট ৪০০ গ্রাম হেরোইন পুলিশের ওই সদস্যরা আত্মসাত করে। পুলিশের হাতে রফিকুলের মৃত্যু দেখে ইসা ভয় পেয়ে যান। তখন তিনি পুলিশকে তার এক আত্মীয় মারা যাওয়ার কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান।

এ ঘটনার পরে ১৭ জুন রফিকুলের স্ত্রী রুমিসা খাতুন বাদী হয়ে দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আবদুল মালেকের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩২) এবং একই এলাকার আজাদ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিনকে (৩২) আসামি করা হয়। এদের মধ্যে জামালকে ২১ মার্চ রাতে পুলিশ আটক করে।

রফিকুলের স্ত্রীর মামলাটি প্রথমে পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পিবিআই স্বতপ্রণোদিত হয়ে তদন্তভার নেয়। ২৩ জুন আদেশ হওয়ার পর ৭ জুলাই পিবিআইকে থানা থেকে মামলার নথিপত্র হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ের এসআই জামাল উদ্দিন মামলাটির তদন্ত করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পিবিআই ইসাহাক আলীসহ তিন জনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার সকালে তাদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর দুপুরে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল মাহমুদের কাছে ইসা জবানবন্দি দেন।

রফিকুল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, মামলায় এ পর্যন্ত চার জন গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু ইসা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, তিনি গোদাগাড়ীতে যোগ দেওয়ার কয়দিন পরই পদ্মার চরে রফিকুলের মরদেহ পাওয়া যায়। রফিকুলে বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে তিনি প্রথমে শোনেন। এরপর হত্যা মামলা হলে জামালকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর কয়দিন পরই মামলাটি পিবিআইতে চলে যায়। ওই হত্যাকাণ্ডে কোনো পুলিশ জড়িত কি না সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি প্রথম শুনলেন। কনস্টেবল শফিকুল ছাড়া অন্যরা থানা থেকে ইতোমধ্যে বদলি হয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমি রাজশাহী আসার আগের। বিষয়টি প্রথম শুনলাম। এ নিয়ে আমরা তদন্ত করে দেখবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

সূত্র : বাংলানিউজ
এন এইচ, ০১ নভেম্বর

Back to top button