সিলেট, ১৮ জানুয়ারি – কখনো বিপদজনক ওয়েল্ডিং এর কাজ, কখনো বা ইটভাঙা, কখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে আবর্জনা সংগ্রহসহ কঠোর পরিশ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়েছে সিলেট জেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের শিশুরা।
দারিদ্রের যাতাকলে নিষ্পেষিত এসব শিশুর জীবন। শিক্ষা যেখানে অমাবশ্যার চাঁদ। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে নিয়মিত যাদের নিয়ে যায় বিপজ্জনক শ্রমে।
শিশুদের যেখানে হাসি-খুশি ও আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানে শুধুই দারিদ্রের কষাঘাত। অনিশ্চয়তায় বিবর্ণ হয়ে ওঠে হাজারো শিশুর শৈশব। বিপজ্জনক শিশুশ্রমের বেড়াজালে বন্দিজীবন কাটে তাদের। যেখানে শিশুর হাতে থাকার কথা বই, সেখানে কোমলমতি শিশুদের কাঁধে ওঠে সংসারের বোঝা।
শিশুদের অন্তহীন দুর্দশার কথা বিবেচনা করে তাদেরকে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা আকবেট(UKBET)।
আকবেট-টুকেরবাজার ইউনিয়নের লার্নিং সেন্টারে ৬৫ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত লার্নিং সেন্টারে এসে লেখাপড়া করছে এবং এর মধ্য থেকে কয়েকজন কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। দিনের বেলা যারা কাজ করে তাদের জন্য নৈশকালীন স্কুলের ব্যবস্থাও করেছে আকবেট। আকবেট টুকের বাজার লার্নিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেলো বেশিরভাগ শিশুরাই করোনাকালীন সময়ে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ে। অনিশ্চিত সেসব শিশুদের শিক্ষাজীবনে আলোর দূত হয়ে এসেছে আকবেটের টুকেরবাজারস্থ লার্নিং সেন্টার।
এই সকল শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও সুযোগ বৃদ্ধির জন্য শিশুদের অভিভাবক ও শিশুরা যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে কমিউনিটি শিক্ষক সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখেন।
টুকেরবাজার ইউনিয়নে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, লেখাপড়ায় ব্যস্ত রয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ জন শিশু। বাধন রায় নামের একজন শিক্ষক তাদেরকে পাঠদান করাচ্ছেন।
টুকেরবাজার বাজারে ভাড়া করা একটি স্কুল ঘরে মেঝেতেই শিশুরা সুশৃঙ্খলভাবে ক্লাস করছে। শিশুকেন্দ্র গুলোর শিক্ষার মান এবং অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সুন্দর আচরণে যে কেউ মুগ্ধ হবে।
গতকাল ১৭ই জানুয়ারি আকবেট টুকেবাজার লার্নিং সেন্টার ঘুরে দেখেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জিয়া উদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডাঃ ফাতেমা আহমেদ ,অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবদুস সালাম বীরপ্রতীক ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক নজরুল ইসলাম বাসন। আকবেটের কান্ট্রি ডিরেক্টর আসাদুজ্জামান সায়েম উপস্থিত থেকে লার্নিং সেন্টারের সার্বিক কার্যক্রম এবং “শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের” ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থিত অতিথিদের অবহিত করেন।
ডাঃ জিয়া উদ্দিন উপস্থিত শিশুদের সাথে কথা বলেন ও করোনাকালীন সময়ে এই সব ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম কোনোভাবে যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে সবার জোর প্রচেষ্টা কামনা করেন এবং আকবেটের এইরকম কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বেশ কিছু সময় শ্রমজীবী শিশুদের সাথে কাটান এবং তাদের সুস্থ ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে সবসময় পাশে থাকার আশা প্রকাশ করেন।
এম ইউ/১৮ জানুয়ারি ২০২২