অপরাধ

গোল্ডেন মনিরের ৫২১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

দুলাল হোসেন

ঢাকা, ০৫ জানুয়ারি – স্বর্ণ চোরাচালানি করে রাতারাতি শত-শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে গোল্ডেন মনিরের ২১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার নামে ৪১টি প্লটের তথ্য মিলেছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। দুদক ওই ৪১টি প্লটের বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। একই সঙ্গে তার স্ত্রী রওশন আক্তারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের সুপারিশ করে কমিটি। দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর কমিটি গোল্ডেন মনিরের অবৈধ সম্পদের প্রতিবেদনসহ তার স্ত্রী ও অন্যদের বিষয়ে সুপারিশ দাখিল করেন। এদিকে দুদক ছাড়াও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটি গোল্ডেন মনিরসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

সিআইডির তদন্তে মনিরের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৯০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।

তথ্যমতে, ২০২০ সালে গোল্ডেন মনিরের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। তার সম্পদ অনুসন্ধান কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় উপপরিচালক সামছুল আলমকে। তার বদলি হলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে। অনুসন্ধানের স্বার্থে একই বছরের ২৬ নভেম্বর গোল্ডেন মনির ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের নামে/বেনামে থাকা সম্পদের হিসাব দাখিলের নোটিশ দেয় দুদক।

নোটিশে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধান টিম গোল্ডেন মনির দম্পতির অনুসন্ধান শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে বলা হয়, গোল্ডেন মনির ২০২১ সালের ২ মার্চ দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। আর গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী রওশন আক্তার ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোল্ডেন মনির তার সম্পদ বিবরণীতে ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৫ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ২০১ টাকার সম্পদের তথ্য দেন। দুদকের অনুসন্ধানে ৩৩ কোটি ৯৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ টাকার অর্জনের উৎস পাওয়া গেলেও ২১ কোটি ৮২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৯ টাকার সম্পদ অর্জনের উৎস পাওয়া যায়নি। এসব অর্থ তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোল্ডেন মনির রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ৪১টি প্লট দখলে রেখেছে। দুদকের অনুসন্ধানে ২১ কোটি ৮২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখায় একটি মামলা করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া তার স্ত্রী রওশন আক্তার রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ৪১টি দখলে রাখাসহ আরও কয়েকটি প্লট-ফ্ল্যাট অর্জনে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান শুরুর সুপারিশ তুলে ধরে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গোল্ডেন মনির বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এদিকে, গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী রওশন আক্তারের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক জানান, ঘুষ দিয়ে রাজউক ও গণপূর্তের কাজ বাগিয়ে নিতেন গোল্ডেন মনির। তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছেন এবং মনিরের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়েছিল দুদক। ওই তালিকায় রয়েছেন প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু ও শাহীনুল ইসলাম, রাজউকের সিবিএ নেতা আবদুল জলিল আকন্দ, নিম্নমান সহকারী মো. ওবায়দুল্লাহ ও উচ্চমান সহকারী আবদুল মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ওরফে সোনা শফিক ও বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর এমএ কাউয়ুম। তাদের মধ্যে কাইয়ুম বিদেশে আত্মগোপনে থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি দুদক।

সূত্র : আমাদের সময়
এম এস, ০৫ জানুয়ারি

Back to top button