জাতীয়

৩৪ কোটির পরিবহন পরিকল্পনা, পরামর্শক ব্যয়ই ২৫ কোটি!

মফিজুল সাদিক

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি – ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ট্রান্সপোর্ট পরিকল্পনায় ২৫ কোটি টাকা পরামর্শক খাতে ব্যয়ের আবদার করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। মিডটার্ম রিভিউ অ্যান্ড আপডেটিং অব স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে এমন আবদার করা হয়েছে। ডিটিসিএর এমন প্রস্তাবনায় প্রশ্ন তুলেছে কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় এ প্রশ্ন তোলা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় মোট ২৫ কোটি টাকা বিভিন্ন পরামর্শক খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কনসালটেন্সি সার্ভিস ফর মিডটার্ম রিভিউ অ্যান্ড আপডেটিং অব স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট পরিকল্পনা খাতেই ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরামর্শক সেবার প্রয়োজনীয়তা, ধরন, কর্মপরিধি, সময়সীমা, রিপোর্টিং সিস্টেমসহ এ খাতের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন ডিটিসিএকে জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। বিভিন্ন পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের বিস্তারিত বিভাজনসহ সুস্পষ্টভাবে পুনর্গঠিত টিএপিপিতে (কারিগরি সহায়তা প্রকল্প) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে পরামর্শকের রিপোর্টিং মেকানিজম।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পের পুরো কাজই পরামর্শকের। কীভাবে পরিবহন পদ্ধতি চালু করা হবে এর সবই প্রকল্পে আছে। প্রকল্পে জাপানি টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। তারপরও কীভাবে পরামর্শক নেওয়া হবে, কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হবে পুরো বিষয় আমরা জানতে চেয়েছি।

ডিটিসিএ জানায়, ঢাকা মহানগরী ও এর পাশের এলাকার জন্য একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন (বাস ও রেল পরিবহন) ব্যবস্থা গড়ে মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করা হবে। নগরীর প্রবেশ ও বহির্গমন মহাসড়কের যানজট নিরসন এবং আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা করা হবে। এ লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরবর্তীসময়ে এসটিপি হালনাগাদ ও সংশোধন করে ২০১৫ থেকে ২০৩৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যা ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট অনুমোদিত হয় মন্ত্রিপরিষদ সভায়।

বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় প্রতি পাঁচ বছর পরপর আরএসটিপির মধ্যবর্তী পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়নের বিধান রাখা হয়েছে। এটা হালনাগাদ করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক অনুদানে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৪ কোটি ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়ন, বাকি ২৪ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেবে এডিবি। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চার বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার বলেন, এটা টিএ (কারিগরি সহায়তা) প্রকল্প। এ প্রকল্পের কাজই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এখানে কোনো অবকাঠামোগত কাজ নেই। এ কারণেই প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় বেশি।

নৌপরিবহন, রেলপথ এবং পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও উন্নত ট্রাফিকের বিষয়গুলো নতুন পরিকল্পনায় ঠাঁই পায়নি। ডিটিসিএর আওতায় মহানগর ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদী জেলাও অন্তর্ভুক্ত আছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের শিরোনাম মিডটার্ম রিভিউ অ্যান্ড আপডেটিং অব স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট ফর ঢাকার পরিবর্তে ডিটিসিএ এরিয়া রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় গবেষণা কাজে ৫০টি কার্যক্রম ও জরিপ কাজের জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া কী ধরনের গবেষণা ও জরিপ করা হবে তার বিস্তারিত বিবরণ পুনর্গঠিত টিএপিপিতে সংযোজনের বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। যানবাহন কিনতে অর্থ বিভাগের সবশেষ পরিপত্র অনুসরণে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও জানায় পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ০১ জানুয়ারি

Back to top button