অপরাধ

মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নামে নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো চক্রটি

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর – মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ভিসায় লোক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে শতশত মানুষকে প্রতারিত করেছে একটি চক্র। তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তারা প্রথমে এক থেকে দুই লাখ টাকা নিতো। বাকি টাকা বিদেশে পৌঁছানোর আগে ব্যাংক থেকে লোন করে দেওয়া হবে বলে প্রলোভন দেখানো হতো। পরবর্তীতে ভুয়া বিমান টিকিট, ভিসা ও করোনার ভ্যাকসিন কার্ড তৈরি করতো। কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে বিদেশ গমনকারীরা জানতে পারতেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। এসময় ভুক্তভোগীর অফিসে গিয়ে দেখতেন চক্রটি অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে।

এই চক্রের মূলহোতাসহ দুইজনকে আটক করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাটারার বারিধারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- মো. সুজন শেখ ও মো. আমিনুল ইসলাম রনি। এসময় ১৩৮টি পাসপোর্ট, তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটাকে পুঁজি করে সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাসে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এমন অভিযোগে গতরাতে দুইজনকে আটক করা হয়।

কমান্ডার মঈন জানান, আটক দুজন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। সুজন শেখ এই দলের মূলহোতা এবং আমিনুল তার অন্যতম সহযোগী। দীর্ঘ দুইবছর ধরে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। চক্রে ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছে। তারা সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজিচালক, গৃহকর্মী এসব শ্রেণির কর্মজীবীদের টার্গেট করতেন। বিদেশে গেলে দেশে উপার্জনের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেতন বেশি বলে আশ্বস্ত করতেন।

এছাড়া স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাতেন। এই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানাতো। তারা যেতে রাজি হলে প্রথমে এক থেকে দুই লাখ টাকা নেওয়া হতো। বাকি টাকা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিতেন চক্রের সদস্যরা। এতে ভুক্তভোগীরা প্রলুব্ধ হতেন। নগদ টাকা নেওয়ার পরপরই অফিস পরিবর্তন করে ফেলতো চক্রটি। এভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা
চক্রটি সাবলেটে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিতো। এতে অফিস ভাড়া কম হতো এবং সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারতো। তারা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বা বায়রার ওয়েবসাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানির নাম ব্যবহার করতো। ওইসব রিক্রুটিং কোম্পানির নামে ভিজিটিং কার্ড, স্ট্যাম্প ও অন্যান্য নথিপত্র বিদেশে গমনেচ্ছুদের দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতো।

কে এই সুজন
র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক সুজন জানিয়েছেন তিনি ১৫ বছর ধরে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মালিবাগ, কাকরাইলে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি করেছেন। তার এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কৌশল নেন।

অন্যদিকে আটক আমিনুল ২০০১-২০১৫ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিলেন। তার প্রবাস জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এতে তার কথাবার্তায় সাধারণ মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পরবর্তীতে প্রতারিত হতেন।

সূত্র: জাগো নিউজ
এম ইউ/৩০ ডিসেম্বর ২০২১

Back to top button