কারো ব্যক্তিগত অনুভূতিকে কখনোই ছোট করা উচিত না: সিয়াম
ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর – ক্যারিয়ারের শুরুটা মডেলিং দিয়ে হলেও নাটকেই পেয়েছেন পরিচিতি। অভিনয়গুণেই দর্শকমহলে হয়ে উঠেন প্রশংসিত। নিজেকে ছোট পর্দায় আবদ্ধ না রেখে ২০১৭ তে নাম লিখান বড় পর্দায়। নিজের অভিষেক সিনেমা ‘পোড়ামন ২’তে রীতিমত বাজিমাত করে বসেন। প্রয়াত সালমান শাহের পর এ নায়কই মনে হয় প্রথম সিনেমায় সাফল্য পেয়ে নিজেকে রাঙিয়ে চলেছেন আপন মনে। বলছি তারুণ্যের প্রিয় মুখ সিয়াম আহমেদের কথা, যিনি এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে ব্যস্ত নায়ক। তার হাতে রয়েছে ৮টি সিনেমা ‘শান’, ‘পাপ পুণ্য’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘অন্তর্জাল’, ‘দামাল’, ‘রাস্তা’, ‘স্বপ্নবাজী’ ইত্যাদি। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তার সিনেমা ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমা। মুক্তির পর দর্শকমহলে কুড়াচ্ছেন দারুণ প্রশংসা।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমার দর্শক সাড়া প্রসঙ্গে সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সবগুলো ছবিতেই কম বেশি দর্শক সাড়া পেয়েছি। কিন্তু একাধিক মানুষ কিংবা দর্শকের কাছ থেকে একই প্যাটার্নের, একই রকম কথা এবং সবারই কমন ভালো লাগার যে একটা বিষয় থাকে সেটা যে কতটা এক হতে পারে তা আমি প্রথমবারের মত দেখতে পেলাম, এই সিনেমা। যারাই এই ছবিটা নিয়ে কথা বলেছেন কিংবা তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন তাদের সবারই একটা জায়গা কমন ছিল। এতে করে বুঝতে সুবিধা হয় যে দর্শক আসলে কোন জায়গাটা গ্রহণ করেছে বা তাদেরকে কোন জায়গাটা বেশি ভালো লাগিয়েছে বা কোন জায়গাটা বেশি ভাবিয়েছে বা কাঁদিয়েছে। এই জায়গাটা থেকে ফিডব্যাক পাওয়াটা আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে।
পর্দার বাবা-ছেলেকে কাঁদতে দেখা গিয়েছে, সেইসাথে দর্শকদেরও কাঁদতে দেখা গিয়েছে। আপনার বাবার সঙ্গে পরবর্তীতে এমন কোনো কিছু হয়েছে কিনা বা আপনি কতটুকু বিষয়টাকে অনুভব করেছেন? নায়কের উত্তর, ‘দেখার পর বিষয়টা অনুভব করেছে আমার বাবা আর আমি অনুভব করেছি যখন আমি শুটিং করছিলাম তখন। আমার অভিজ্ঞতাটা ছিল ওই সময়ে। আর তাই তখন থেকে অভিজ্ঞতাটাকে আমার মত করেই লালন করে আসছি। ছবিটা পরিবার নিয়ে দেখে আসার পর বাবার অনুভূতিটা বুঝতে পেরেছি। কারণ, একসঙ্গে খেতে বসে কিংবা আড্ডা দিতে বসেও দুইদিন আমরা শুধু এই সিনেমাটার বিভিন্ন অংশ নিয়ে কথা বলছিলাম। কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে ছবির গল্পের কিছু অংশের সাথে আমাদেরও মিল আছে। আবার বাবা বলছেন, তোমার এই অংশের কাজটা খুব ভালো হয়েছে, আর পাঁচ জনের চেয়েও অনেক ভালো করেছো।’
‘প্রিমিয়ারের পরে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখেছি আমাদের ইমোশনাল দৃশ্যগুলো নিয়ে কয়েকজন বিভিন্নরকম কথা বলছেন। অনেকের কাছে মনে হতে পারে এটা লোক দেখানো। এটা হতেই পারে, কারও ইমোশন কম আবার কারও বেশি, কারও নাও থাকতে পারে। কারণ, এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। আমার খারাপ লেগেছে যে, একটা মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতিকে কখনোই ছোট করা উচিত না। আমি চেষ্টা করি কারও ব্যক্তিগত অনুভূতিকে ছোট না করতে। কারণ, ওই মুহূর্তে তার ভিতরে কি চলছে, এখানে বসে আমি তা দেখতে পারছি না। আমরা তো কাজ করি, শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি। যখন কাজ করি তখন ওই মুহূর্তটা সৃষ্টি করতে হয়, ভাবতে হয় যে, আমার সামনে দাঁড়ানো এই মানুষটা-ই আমার বাবা! নিজেকে এই জায়গাটাতে কনভিন্স করতে হয়। তখন নিজের বাবার সমান শ্রদ্ধা,অনুভূতি,অভিমান, ভালবাসাটা দিয়েই সহশিল্পীর সঙ্গে (তারিক আনাম খান) সেই কাজটা করতে হয়। একটা দীর্ঘ সময় আমাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুটিংয়ে এমনও হয়েছে যে, আমার শট শেষ হয়ে গেলে উনার (তারিক আনাম খান) পাশের চেয়ারে বসে উনার কাঁধে আমার মাথা রেখে বলছি আব্বু কি খেতে মন চায় তোমার? আজকে কি করা যায়? আজকে কোথায় যাওয়া যায়!, যেটা আমি আমার আব্বুর সাথে করি। আমি তখন থেকেই তারিক স্যারকে আব্বু বলে ডাকতে শুরু করি। আমার মধ্যে সেই অনুভূতিটুকুই কাজ করেছিলো পুরো শুটিংয়ের সময়।
এতগুলো মানুষের সঙ্গে এতদিন কাজ করার পর এত এত অভিজ্ঞতা অর্জন হলো এরপর সেই অর্জনের লাস্ট ভার্সনটা (সিনেমাটা) যখন সবার সঙ্গে দেখলাম তখন নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন ছিলো। আমিও একজন দর্শক, হলে দেখার আগে আমি পুরো কাজটি দেখিনি। ডাবিংয়ে দেখেছিলাম জাস্ট। আমি চেয়েছিলাম সবার সঙ্গে হলে বসেই প্রথম দেখবো দর্শকের প্রতিক্রিয়া কি হয় আর আমার প্রতিক্রিয়া কি হয়! এত সুন্দর একটা জার্নি আমি সবসময় মনে রাখবো। জীবনের সব জার্নি কিংবা অভিজ্ঞতা হয়তো ফিডব্যাক দেয় না কিন্তু এই জার্নিটা আমি মনে রাখবো। আমি খুবই ভাগ্যবান, আলহামদুলিল্লাহ।’ -যোগ করেন সিয়াম।
মাঝখানে অনেক দিন আপনার সিনেমা মুক্তি পায় নি। এখন একসঙ্গে অনেকগুলো ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এতে করে কোনো চাপ অনুভব করছেন কি? এমন প্রশ্নে সিয়াম বলেন, ‘চাপ নিচ্ছি না কোনো। আমি বলবো একটু এক্সাইট্মেন্ট কাজ করছে। আমি নিজেকে কখনও পৃথিবীর সেরা অভিনেতা মনে করি না, এমনকি এই তুলনাতেই আমি বিশ্বাসী না। কিছু দর্শক আমাকে পছন্দ করেছেন, আমার কাজ দেখতে আসেন সেই ভালোবাসা থেকেই কাজ করি। কাজের প্রতি বিশ্বাস রেখে একজন শিল্পী হিসেবে নিজেকে তৈরি করে যাচ্ছি। এতটুকুই তো জার্নি আমাদের। তারপরও বলবো আমি শিল্পী হিসেবে যেই কাজটাকে বিশ্বাস করছি সেই কাজটা যখন দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে না পারি, তখন খুব খারাপ লাগে। কারণ এই কাজের রেসপন্সটা দেখার জন্যই তো আমাদের কাজ করা। রেসপন্স দেখে দর্শক ভালো বলেন কিংবা কোথায় ভালো করা যেত সেটাও জানান। যেন পরবর্তী কাজে সেই অপূর্ণতটা পূরণ করতে খুশি মনে ঝাপিয়ে পড়তে পারি।
যখন পরপর কাজ আসে তখন প্রতিটা কাজের জন্যই আমি সচল থাকার চেষ্টা করি। কাজটি ভালো করার জন্য টিমকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় বা প্রমোশন করা যায়; সবকিছুই আমি করার চেষ্টা করি। এমন কোনো জায়গাতে আমি অনধিকার চর্চা করতে পারি না যেখানে আমার মতামত চাওয়ায় হচ্ছে না।’
নতুন বছরের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে নায়ক বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতে আমার ‘শান’ সিনেমা মুক্তি পাবে। এই ছবিটা সবাইকে দেখাতে চাই। সেইসঙ্গে আমার ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমাটিও যেন এই বছরে সিনেমা হলে চলে। সেটা আরও মানুষকে দেখাতে চাই। এরপর ওটিটিতে মুক্তি পেলে সবাই যেকোন প্রান্ত থেকে যেন ছবিটি দেখে। এরপর সামনে আমার যে কাজগুলো আসছে সেগুলোতে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সততার সঙ্গে শতভাগ এফোর্ট দিতে চাই। কাজ করার জন্য করতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা যদি সুস্থ রাখেন তাহলে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। এটা নিজের কাছে নিজেরই একটা প্রতিজ্ঞা।’
এন এইচ, ২৯ ডিসেম্বর