জানা-অজানা

দুই এলিজাবেথের গল্প

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর – প্রথম এলিজাবেথ ডার্নলি পোর্ট্রে; ইংল্যান্ডের গ্রিনউইচে ৭ সেপ্টেম্বর ১৫৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২৪ মার্চ ১৬০৩ সালে ৬৯ বছরে বয়সে ইংল্যান্ডের রিচমন্ড প্রাসাদ, সারে মৃত্যুবরণ করেন। ১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের , ফ্রান্সের (পদাধিকার অনুসারে) এবং আয়ারল্যান্ডের রাণী ছিলেন। মৃত্যুর ২০ বছর পরও সোনালি যুগের শাসক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন তিনি। তার শাসনকাল ‘এলিজাবেথান এরা’ বা এলিজাবেথীয় যুগ নামে পরিচিত।

তার বাবা ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি। তিনি ছিলেন টিউডর রাজবংশের পঞ্চম ও সর্বশেষ রানী। এলিজাবেথের আড়াই বছর বয়স সময়কালে তার মা অ্যান বোলিনকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয় এবং এলিজাবেথকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।

এ অবস্থায় উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে ভাই ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনের ভার অর্পণ করেন লেডি জেন গ্রে-এর উপর। এরপর এলিজাবেথ সেবান রানী প্রথম মেরির স্থলাভিষিক্ত হন ১৫৫৮ সালের ১৭ নভেম্বর । প্রোটেস্ট্যান্ট বিদ্রোহীদের সহযোগিতা দানের অভিযোগে এলিজাবেথ ক্যাথলিক অনুসারী মেরির শাসনকালে এক বছর অন্তরীণ ছিলেন।

এলিজাবেথ ছিলেন অবিবাহিতা। পরবর্তীকালে রানী হিসেবে এলিজাবেথের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইংলিশ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা করা, যার সর্বোচ্চ গভর্নর ছিলেন তিনি নিজেই। এজন্য বিতর্কও তার পিছু নিয়েছিল।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ লন্ডনের মেফেয়ারে ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেস (পরে রাজা জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যুক্তরাজ্য সহ আরও ১৫টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রাণী ছিলেন তিনি। তার বাবা ১৯৩৬ সালে নিজের ভাই রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে সিংহাসনে আরোহণ করার পর থেকেই এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তিনি বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে কর্মরত থেকে জনসাধারণের দায়িত্ব পালন আরম্ভ করেছিলেন।

তিনি সবচেয়ে দীর্ঘজীবী এবং সবচেয়ে দীর্ঘকাল ধরে শাসনকারী ব্রিটিশ রাজ্যশাসক। তিনি বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাসনকারী নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত রাজ্যশাসক। বর্তমানে জীবিত রাজা-রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক দীর্ঘকালীন ধরে শাসনকারী রাজ্যশাসক এবং বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সর্বাধিক প্রবীণ ও দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান। ২০১৭ সালে তিনি নীলকান্তমণি জয়ন্তীতে পৌঁছানো প্রথম ব্রিটিশ রাজ্যশাসক হয়েছিলেন।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বাবা রাজা জর্জ মারা যাওয়ার পর তিনি কমনওয়েলথের প্রধান হওয়ার পাশাপাশি এবং যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং সিলন এই সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হন।

এর আগে ১৯৪৭ সালে গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন তিনি। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় চারটি সন্তান: ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস, রাজকুমারী অ্যান, ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু, এবং ওয়েসেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড।

১৯৫৩ সালে তার রাজ্যাভিযান এবং ১৯৭৭, ২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে তার রৌপ্য, স্বর্ণ এবং হীরক জয়ন্তী উদ্যাপন তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এলিজাবেথ মাঝে মধ্যে প্রজাতন্ত্রের অনুভূতি এবং রাজপরিবারের চাপে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিশেষ করে সন্তানদের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৯২ সাল ছিল তার জন্য এক ভয়াবহ বছর। এরপর ১৯৯৭ সালে প্রাক্তন পুত্রবধূ ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের মৃত্যুর পরেও সমালোচিত হন তিনি। যাই হোক যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিলো।

অনেক বছর ধরেই জল্পনা-কল্পনা ছিল এলিজাবেথের ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা নিয়ে । ১৯৭১ সালে তার প্রাক্তন প্রাইভেট সেক্রেটারি এবং তার ব্যাঙ্কের পরিচালক কৌটস জোক কলভিলি তার সম্পদের পরিমাণ অনুমান করেছিলেন ২ মিলিয়ন ডলার ২০১৯ সালে প্রায় ২৮ মিলিয়ন ডলার।

১৯৯৩ সালে বাকিংহাম প্যালেস ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুমান করে বলেছিল ‘মোটামুটি ওভারস্টেটেড’। ২০০২ সালে তিনি তার মায়ের কাছ থেকে আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি সম্পত্তি পেয়েছিলেন । দ্যা সানডে টাইমস রিচ লিস্ট ২০২০ সালে তার ব্যক্তিগত সম্পদ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অনুমান করেছে যা যুক্তরাজ্যের ৩৭২তম ধনী ব্যক্তি বানিয়েছে তাকে ।

১৯৮৯ সালে সানডে টাইমস রিচ লিস্টে যখন এটি শুরু হয়েছিল তখন তালিকার শীর্ষে ছিলেন তিনি, যার প্রতিবেদনে তার ৫.২ বিলিয়ন ডলার রয়েছে দেখানো হয়, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ব্যক্তিগতভাবে তার ছিল না, আনুমানিকভাবে যার আজকের মূল্য ১৩ বিলিয়ন ডলার।

২০১৫ সালে তার সরকারি বাসভবন যেমন বাকিংহাম প্যালেস এবং উইন্ডসর ক্যাসল,এবং ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টর, ৪৭২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তির মালিক তিনি। ২০১৩ সালে ফাস হওয়া প্যারাডাইজ পেপারস দেখায় যে ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টর বিদেশের দুটি কর অঞ্চল, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং বারমুডায় বিনিয়োগ করেছিল। সান্দ্রিংহাম হাউস এবং বালমোরাল ক্যাসল ব্যক্তিগতভাবে রাণীর মালিকানাধীন। ব্রিটিশ ক্রাউন এস্টেট ২০১২ সালে যার মূল্য ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার তার আস্থায় রাখা এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতায় তার কাছে বিক্রি বা মালিকানাধীন হতে পারে না।

তিনি ২১ এপ্রিল ১৯২৬, ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে ইয়র্কের রয়্যাল হাইনেস প্রিন্সেস এলিজাবেথ ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৬, ২০ নভেম্বর ১৯৪৭, হার রয়েল হাইনেস দ্য প্রিন্সেস এলিজাবেথ, ২০ নভেম্বর ১৯৪৭ – ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি হার রয়েল হাইনেস দ্য প্রিন্সেস এলিজাবেথ, ডাচেস অফ অ্যাডিনবার্গ, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে হার ম্যাজেস্টি দ্য কুইন উপাধিতে ভূষিত হন।

এন এইচ, ২৯ ডিসেম্বর

Back to top button