জাতীয়

‘ওমিক্রন’ ঠেকাতে লকডাউন, যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর – করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে ছড়িয়ে গেছে। আগের ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়ে ‘ওমিক্রন’ খুব দ্রুত সংক্রমণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ‘লকডাউন’ জারি করেছে। ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই দুইজন শনাক্ত হয়েছেন। তারা দুজনই জিম্বাবুয়েফেরত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সদস্য। আক্রান্ত দুই নারী ক্রিকেটার সুস্থ আছেন।

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ লকডাউন দিয়েছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও এই ব্যবস্থায় যাবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ইউরোপের অনেক দেশ লকডাউন দিয়েছে। আমরা আমাদের দেশে লকডাউন চাচ্ছি না।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী একথা বলেন।

সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নেই, কিন্তু করোনা তো (অন্য ভ্যারিয়েন্ট) আছে! ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও যদি আমরা রক্ষা পেতে চাই, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে- যেটি আমরা করছি না।

মাস্ক না পরলে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন’ বিশ্বের ৯০ দেশে ছড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশেও ধরা পড়েছে। কিন্তু মানুষ মাস্ক পরছে না এবং স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না। এ জন্য ওমিক্রন বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার।

এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যেন বেপরোয়াভাবে না ঘুরে বেড়ায়; কিন্তু সেটা হচ্ছে, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলো কীভাবে হয়? কক্সবাজারে লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছে, কেউ মাস্ক পরছে না। বিয়ে হচ্ছে, কেউ মাস্ক পরছে না। তাহলে সংক্রমণ বাড়ার সুযোগ তো রয়েছে! আমরা এ বিষয়ে দুঃখিত।’

জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশের মানুষ যাতে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, এ জন্য জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোভিড নিয়ন্ত্রণে সফলতার উদাহরণ হয়েছে। সব হাসপাতালে এখন অক্সিজেন সাপোর্ট আছে। সংক্রমণ কমে গেছে। এটি ধরে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে সাত কোটি, যা ৬০ শতাংশ মানুষ পেয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে সাড়ে চার কোটি, শতকরা হিসাবে তা ৩০ ভাগ।

তিনি বলেন, সরকারের টার্গেট ১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ মানুষকে।

উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

চলতি বছরের গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে।

২০২০ সালের এপ্রিলের পর চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুহীন দিন পার করে বাংলাদেশ।সর্বশেষ দ্বিতীয়বারের মতো গেল বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) মৃত্যুশূন্য দিন পার করেছে দেশ।

করোনা ঠেকাতে গত বছরও দীর্ঘ সময় লকডাউনে ছিল পুরো দেশ। এ বছরও বহুদিন লকডাউনে রাখা হয় সারা দেশকে। পরে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়।বর্তমানে সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/২১ ডিসেম্বর ২০২১

Back to top button