জাতীয়

আবারও ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিড়িক

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর – থামছে না নির্বাচনী সংঘাত-সংষর্ঘ। গতকালও প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকের ব্যানার-পোস্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে। পাবনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণার সময় নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৩ জন।

এদিকে গতকাল পঞ্চম ধাপের ইউপি ভোটের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ হয়েছে। অনেক এলাকায় জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধাপের নির্বাচনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হিড়িক দেখা গেছে। এর আগে প্রথম ধাপের ১৪১ জন, দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭ জন, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন এবং চতুর্থ ধাপে ২৯৫ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হন।

বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো খবর:
পাবনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণার সময় নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত সেলিম হোসেন (৩৫) জেলার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের জমসেদ আলীর ছেলে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এম শাহীনের নির্বাচনী কর্মী ছিলেন তিনি।

শাহীন বলেন, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রায়পুর গ্রামে গণসংযোগে যান। এ সময় নৌকার কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে সেলিম হোসেনকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ শেষে দেবোত্তর বাজার চৌরাস্তা মোড়ে লাশ রেখে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার প্রার্থী মোহাইমিন হোসেন চঞ্চল।

তিনি বলেন, হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেলিমের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তার মৃত্যুকে পুঁজি করে মিথ্যা অভিযোগ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। পুলিশও ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেলিম মারা গেছেন’ বলে জানিয়েছে। আটঘরিয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকের বক্তব্য অনুযায়ী সেলিমের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীকের ব্যানার-পোস্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে। শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন নারায়ণখানা, সাতুরিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবার রাতে নৌকা প্রতীকের ব্যানার-পোস্টারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী যজ্ঞেশ্বর বৈদ্য অনুপ জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আসন্ন নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৫) ও তার সহযোগী বাদল সরকারকে (২৫) গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। রবিবার নিহত এরশাদুল হকের ছোট ভাই আকতারুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জনসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে নজরুল ইসলামকে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থীও রয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় চতুর্থ দফায় ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ফাঁশিয়াখালী ও হারবাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই নেতা নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তাদের নিজ ভাইকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। এ ছাড়া নৌকাকে পরাজিত করতে ওই দুই ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষেও তারা কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফার বিরুদ্ধে এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুল এ আলম তুহিন সংবাদ সম্মেলনে তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মারপিট, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন।

নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান ওরফে শিপন। গতকাল দুপুরে স্থানীয় খলিফারহাট বাজারে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নৌকা প্রতীকে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার নোহালী ইউনিয়নে কে বা কারা নৌকা প্রতীকে আগুন দিলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এ উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিবাদে গতকাল দিনভর নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। শনিবার রাতে জাপা প্রার্থীর বাড়ির কাছে নৌকা প্রতীকে আগুন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গঙ্গাচড়া থানার ওসি।

পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় যুবক খুন: পৌর নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জেরে সাব্বির (২০) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাব্বির স্থানীয় শংকরপুর এলাকার আকবর আলীর ছেলে। তিনি চায়ের দোকান চালাতেন।

এলাকাবাসী জানান, গত পৌরসভা নির্বাচনে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় অপর পক্ষ সাব্বিরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আবার ২২ জুলাই রাতে একই এলাকায় শাওন নামে এক যুবক খুন হয়েছিলেন। এসবের কোনো একটির সূত্র ধরেই সাব্বিরকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, বেলা ১২টার দিকে সাব্বির ও তার বন্ধুরা বাস টার্মিনাল এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন সেখানে গেলে সাব্বিরের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে যান। সাব্বিরকে একা পেয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান সাব্বির।

যশোর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপন কুমার সরকার জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরেই সাব্বিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হত্যায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।

সূত্র : বাংলানিউজ
এন এইচ, ২০ ডিসেম্বর

Back to top button