ফুটবল

ইপিএলে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা: শীর্ষ তিন দলেরই জয় পেনাল্টিতে

‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’- রবি ঠাকুরের এই চরণকেই হয়তো বুকে ধারন করে লড়াই করে চলেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (ইপিএল) শীর্ষ তিন দল। ইপিএলের চলতি মৌসুমে ১৬তম রাউন্ডের পর শীর্ষ তিন দলের পয়েন্ট যেন সে কথাই বলছে। ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি, ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল আর চেলসি তৃতীয় স্থানে আছে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে।

শনিবারে শীর্ষ এই তিন দলই নিজেদের মাঠে জয় তুলে নিয়েছে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। আশ্চর্যজনকভাবে টেবিল টপার তিন জায়ান্টই জয় পেয়েছে পেনাল্টি গোলে। সিটিজেনরা ১-০ গোলের জয় পায় উলভসের বিপক্ষে, লিভারপুল ১-০ গোলে জিতেছে নিজেদের ঘরের ছেলে স্টিভেন জেরার্ডের অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে। আর চেলসির ৩-২ গোলের জয় লীডস ইউনাইটেডের সাথে।

এদিন প্রথম মাঠে নামে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে অপেক্ষাকৃত দুর্বল উলভসের বিপক্ষে জয়ের জন্য সবই করেছে তার দল। কিন্তু কাঙ্খিত গোলের দেখাই পাচ্ছিলো না সিটিজেনরা। অবশেষে ৬৬ মিনিটে রাহিম স্টার্লিংয়ের পেনাল্টিতে লীড পায় তারা। অবশ্য এই পেনাল্টি নিয়েও ছিলো বিতর্ক। এর আগে ম্যাচের প্রথম ভাগের ইঞ্জুরি টাইমে মাত্র ৩১ সেকেন্ডের ভিতরে দুই হলুদ কার্ড দেখে ড্রেসিং রুমে ফেরে উলভসের সবচেয়ে বড় তারকা রাউল জিমেনেজ। শেষ পর্যন্ত স্টার্লিংয়ের ঐ পেনাল্টিতেই পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে গার্দিওলা বাহিনী। এই জয়ে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষস্থান ধরেই রাখলো সিটিজেনরা, তবে মাত্র ১ আর ২ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে তাদের ঠিক পিছনেই আছে লিভারপুল আর চেলসি।

লিভারপুলের জন্য অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিলো অবশ্য অন্যরকম আবেগে ঠাসা। নিজেদের ঘরের ছেলে স্টিভেন জেরার্ড এদিন ফিরে আসেন ঘরের মাঠে। কিন্তু খারাপ হয়তো অলরেড সমর্থকদেরও লেগেছে। জেরার্ড যে আজ অ্যানফিল্ডে পা রেখেছিলো অ্যাস্টন ভিলার কোচ হয়ে। যেই জেরার্ড ছিলো একসময়ের লিভারপুলের সমার্থক শব্দ, তার পক্ষেই আজ গলায় সুর তুলে গাইতে পারেনি ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’। জেরার্ডকে বরং আজ চলতে হয়েছে একাই, ছক কষতে হয়েছে অ্যানফিল্ডের ঐ লাল দুর্গের বিপক্ষে। একা চলতে গিয়ে অবশ্য হোচটই খেতে হয়েছে এই অলরেড কিংবদন্তিকে। দুর্দান্ত সালাহ-মানেদের মুহুর্মুহু আক্রমনের সামনে দাড়াতে পারেনি তার দল। ম্যাচের স্কোরকার্ড হয়তো সে কথা বলবে না।

ম্যাচের একমাত্র গোলটি এসেছে ফর্মের তুঙ্গে থাকা মো সালাহর পেনাল্টি থেকে, আজও দুর্দান্ত খেলে পেনাল্টিটি অর্জনও করে নিয়েছিলেন তিনিই। পেনাল্টির আগে পরে পুরো ম্যাচেই দাপট দেখিয়েছে ক্লপের শিষ্যরাই। ঘরের মাঠে ক্লপের হাই-প্রেসিং ফুটবলের বিপক্ষে কোন জবাবই দিতে পারেনি অ্যাস্টন ভিলার কাউন্টার এট্যাকের ফুটবল। তাই তো ম্যাচ শেষে লিভারপুলের শট যেখানে ২০ টা, জেরার্ডের দলের সেখানে শট মাত্র ৪ টি, যার একটিও আবার টার্গেটেই ছিলো না। অথচ এই অ্যাস্টন ভিলাই গত চার ম্যাচের তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিলো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, আবার চার ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল করেছিলো ভিলার খেলোয়াড়রা। দিনশেষে ঘরে ফেরাটা অবশ্য সুখকর হলো না জেরার্ডের জন্য। তবে ১-০ গোলে জিতে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে সিটেজেনদের (৩৮) ঠিক ঘাড়েই নিশ্বাস ফেলছে অলরেডরা। দিনের আরেক ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে মাঠে নেমেছিলো লিগ টেবিলের তিনে থাকা চেলসি। প্রতিপক্ষ ছিলো লীডস ইউনাইটেড। অন্য দুই ম্যাচে একটি করে হলেও এই এক ম্যাচেই দুই দল মিলে পেয়েছে তিন পেনাল্টি। ম্যাচের ২৮ মিনিটেই লীডসের রাপিনহার পেনাল্টি গোলে প্রথম লীড নেয় মার্সেলো বিয়েলসার শিষ্যরাই। বিরতিতে যাওয়ার কিছু আগে ৪২ মিনিটে মেসন মাউন্টের গোলে সমতায় ফেরে দ্য ব্লুজরা। বিরতি থেকে ফিরে ৫৮ মিনিটে জর্জিনহোর পেনাল্টি গোলে ২-১ গোলের লীড পায় চেলসি। তবে ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার মাত্র সাত মিনিট আগে জো গেলহার্টের গোলে ২-২ এ সমতায় ফেরে লীডস ইউনাইটেড। ম্যাচের অন্তিম মুহুর্ত পর্যন্তও মনে হচ্ছিলো, নিজেদের মাঠেই হয়তো পয়েন্ট হারাতে চলেছে টমাস টুখেলের শিষ্যরা।

কিন্তু ঐ যে ‘পেনাল্টি’ তার জাদু নিয়ে হাজির আবারও। ম্যাচের ইঞ্জুরি টাইমে এন্টনিও রুডিগারকে আটকাতে গিয়ে নিজেদের ডি বক্সে ফেলে দেয় লীডসের পোলিশ মিডফিল্ডার ম্যাথিউস ক্লিচ। আর তাতেই পেনাল্টি পেয়ে যায় চেলসি। পেনাল্টি স্পটে আবার সেই জর্জিনহো। নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৩-২ গোলের জয় এনেই মাঠ ছাড়েন এই তারকা। আর জমজমাট এই লড়াইয়ের পর ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুলের (৩৭) পরে তৃতীয় স্থানেই থাকলো চেলসি।

লিগের শুরুতে অনেকটা সময় ধরে শীর্ষস্থান দখল করে থাকলেও একসময় এসে লিভারপুলের কাছে তা খোয়াতে হয় চেলসিকে। লিভারপুলের কাছ থেকে সে আসন আবার কেড়ে নেয় সিটি। ইপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ তিন দলের এই লড়াই ঠিক যেন ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’। কারো যেন এক চুলও পা হড়কানোর সু্যোগ নেই। একবার হোচট খেলেই চলে যেতে হবে প্রতিপক্ষের নিচে। মৌসুমের অর্ধেকও এখনও শেষ হয়নি অবশ্য, তবে টেবিল টপারদের এই লড়াই বেশ উপভোগ্যই লাগার কথা ফুটবল প্রেমীদের কাছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ১২ ডিসেম্বর

Back to top button