আজ ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস
ভোলা, ১০ ডিসেম্বর – আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর), ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় দ্বীপজেলা ভোলা। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়।
ভোলাকে স্বাধীন করে ভোলার বীর সন্তানেরা। সকালে এ খবর পেয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভোলার রাজপথে নেমে আসে। ‘জয় বাংলা’ ‘তোমার নেতা, আমার নেতা’ ‘শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে স্লোাগানে মুখোরিত করে চারপাশ। বিজয়ের উল্লাশে মেতে উঠে সবাই।
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলামসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১-এ দেশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, বাংলা স্কুল, টাউন স্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। বিপুল সংখ্যক পাক সেনাকে হটিয়ে যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারের ধরে এনে হত্যা করে তেঁতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয়া হত। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেঁতুলিয়ার পানি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে চালায় নানান পৈচাশিক কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হয়। ওয়াপদা ভবনের পেছনে গণকবর দেয়া হয়। সেটি এখন বধ্যভূমি। এছাড়াও ভোলার বাংলা বাজারে ২৭ অক্টবর পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে অনেকেই প্রাণ হারায়। এছড়াও গুইংগারহাট, দৌলতখানে গুপ্ত বাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলাতে যুদ্ধ হয়। এসব বদ্ধভূমি ও সম্মূখ মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের স্থান গুলোর মধ্যে শুধু মাত্র ভোলার পাউবোর বদ্ধভূমি ও বাংলা বাজারে মুক্তিযুদ্ধের স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ভোলা বাংলা বাজারে মুক্তিযুদ্ধের স্থান সংরক্ষণের কাজ শুরু হলেও অন্যান্য বদ্ধভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্থানগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি।
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দোস্ত মাহামুদ জানান, ১০ ডিসেম্বর মুক্ত হলে ভোলা শহরের হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে রাস্তায় নেমে আনন্দ করে।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১০ ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ১০ ডিসেম্বর