জাতীয়

রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি বুয়েট শিক্ষার্থীদের

ঢাকা, ০৮ ডিসেম্বর – আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সন্তুোষ প্রকাশ করে আসামিদের দণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। বুধবার এ মামলার রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত, পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

এই রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এখন তাদের চাওয়া স্বল্প সময়ের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৩ পলাতক এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসানকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

বুধবার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার এবং দুপুর সোয়া দুইটায় বুয়েটে শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ সাধারণ শিক্ষার্থীরা রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় কার্যকরের দাবি জানান।

রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে বুয়েটের ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত রায় আজকে আমরা পেয়েছি। আবরার হত্যার বিচার অতি অল্প সময়ে হয়েছে, আরও কম সময়ে হতো যদি করোনা পরিস্থিতি না থাকতো। আমার মনে হয় বিচার বিভাগ সঠিকভাবে বিচার করেছেন এবং তাদের প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী বিচার করেছেন। তার জন্য তাদের ওপর আমাদের আস্থা রাখ উচিৎ।

ভিসি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের এটাই মনে রাখতে হবে, যদি কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে, এখানে আর কিছু চাওয়ার আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের সবাই আশা করে যে, এটা যেন সল্প সময়ে কার্যকর হয়। আমরা আশা করবো সল্প সময়ের মধ্যে শাস্তি কার্যকর হবে। আবরারের পরিবারের প্রতি আমরা সর্বোচ্চ সহমর্মিতা দেখিয়েছি, সাহায্য-সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষণা আমরা দিয়েছি। অনেক দেশেই ছাত্র রাজনীতি আছে এবং এই ছাত্র রাজনীতি থেকেই আমার মনে হয় দেশাত্মবোধটা জেগে ওটে। সেখানে যদি তাকে অপরাজনীতি ধাবিত করা হয়, সেটা আইনশৃঙ্খলা দেখবে, বিচার বিভাগ দেখবে।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান মনে করেন, সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই রায়ে সতর্ক হবে। একটি স্ট্রং মেসেজ যাবে যে, শিক্ষাঙ্গনে কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি অপেক্ষা করছে।

এদিকে শহীদ মিনারে বুয়েট শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্য বলেন, আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, শুরু থেকেই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম এবং একইসাথে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি আস্থাশীল ছিলাম। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সকলের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি এবং আবরারের পরিবারের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে, এই রায় শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

‘একইসাথে আমাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র শিক্ষক কাউকেই যেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি না হতে হয় এবং সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।’

তারা আরও বলেন, আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৩ জন (এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান) এখনো পলাতক। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, পলাতক তিনজনকে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনা হোক।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৮ ডিসেম্বর ২০২১

Back to top button