পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধে আদালত অবমাননায় ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ
ঢাকা, ০৮ ডিসেম্বর – অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকারক সব গেমস বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ সঠিকভাবে প্রতিপালন না করার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠিয়েছেন দুই আইনজীবী।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ডাকযোগে এবং ই-মেইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
লিগ্যাল নোটিশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, গ্রামীণফোন কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইয়াসির আজমান, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সিইও এবং চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার এম রিয়াজ রশিদ, বাংলালিংকের সিইও এরিক অ্যাস, টেলিটক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শাহাব উদ্দিনকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে বিষয়টি আইনজীবীদের লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর ১৬ আগস্ট দেশের সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমসহ ক্ষতিকারক সব অনলাইন গেমস অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির।
গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম এবং অ্যাপগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে একটি রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার।
রিটের বিবাদীরা হলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা।
গত ১ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য কঠোর লকডাউনের পর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছিলেন হাইকোর্ট।
ওই সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের কপি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতে বলা হয়।
এর পর গত ১৬ আগস্ট অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ক্ষতিকারক গেমস পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ সব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো সব ধরনের অ্যাপস বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এর মধ্যে নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশেও পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল, পরে আবার চালু করা হয়।
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবিরের মতে, পাবজি এবং ফ্রি ফায়ারের মতো গেমগুলোতে দেশের যুবসমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়ে পড়ছে মেধাহীন। এসব গেমস যেন যুবসমাজকে সহিংসতা প্রশিক্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।
অপরদিকে টিকটক, লাইকি অ্যাপস ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে এবং সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। টিকটক অনুসারীরা বিভিন্ন গোপনীয় জায়গায় পুল পার্টির নামে অনৈতিক বিনোদন যৌন কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে।
একইসঙ্গে সম্প্রতি নারীপাচারের ঘটনা এবং বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থপাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি এবং বিগো লাইভের মাধ্যমে চলছে, যেটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং দেশ, জনস্বার্থ, শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধের পরিপন্থি।
সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ০৮ ডিসেম্বর