কিশোরগঞ্জ

ঘুমন্ত অবস্থায় ভাই-ভাবি-ভাতিজাকে একাই খুন করে দ্বীন ইসলাম!

কিশোরগঞ্জ, ৩০ অক্টোবর- কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে নিহত আসাদ মিয়ার ছোট ভাই দ্বীন ইসলাম। ঘুমন্ত বড় ভাই আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪৫) ও তাদের শিশু ছেলে লিয়নকে (১২) একাই হত্যা করেছে দ্বীন ইসলাম (৩৮)। পরে সে একাই তিনজনের লাশ একটি গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেয়।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম এ জলিল এ সব তথ্য জানিয়ে বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দ্বীন ইসলাম তার ভাই, ভাবি ও ভাতিজা হত্যকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। শাবল দিয়ে তাদের মেরে ঘরের পেছনে গর্ত খোঁড়ে সে। পরে লাশ টেনে নিয়ে সেই গর্তে প্রথমে ভাইয়ের লাশ, তারপর ভাবির লাশ ও পরে ভাতিজার লাশ রেখে মাটিচাপা দেয় দ্বীন ইসলাম।

ওসি জানান, দ্বীন ইসলাম জানায়- বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ২টার দিকে সে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটায়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাই, ভাবি ও ভাতিজাকে সে হত্যা করেছে বলেও দ্বীন ইসলাম স্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনায় আটক অপর তিনজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট গ্রামে মাটিচাপা দেয়া তিনজনের লাশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটি খুঁড়ে আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তাদের ছেলে লিয়ন এর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আসাদ মিয়া জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে।

আরও পড়ুন: নিজ বাড়ির আঙিনা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

জানা যায়, নিহত আসাদ মিয়ার সাথে তার ছোটভাই দ্বীন ইসলামের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। বুধবার রাতে আসাদ মিয়া স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে তাদের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। রাত দেড়টা থেকে ২টার দিকে দ্বীন ইসলাম ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন ও শিশুসন্তান লিয়নকে লোহার শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাদেরকে হত্যা করে। লাশ গুম করার জন্য ঘরের পাশে বাঁশঝাড়ের নীচে গর্ত করে এক গর্তে তিনটি লাশ ফেলে মাটিচাপা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে আসাদ মিয়ার মেজো ছেলে মোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে মা, বাবা ও ছোট ভাইকে না পেয়ে তাদের খুঁজতে থাকে। ঘরের ভেতর রক্ত দেখে তার সন্দেহ হয়।

সারাদিন খোঁজাখুজি করে তাদের কোন সন্ধান পায়নি মোফাজ্জল। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজন ঘরের পিছনে নতুন মাটি খোঁড়া দেখে অনুসন্ধান করে। কোদাল দিয়ে মাটি উল্টাতেই শিশু বাচ্চাটির হাত বেরিয়ে আসে। তৎক্ষণাৎ কটিয়াদী থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে ঘটনার পর থেকে নিহতের ছোট ভাই দ্বীন ইসলামকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী মুমুরদিয়া বাজারের একটি চা দোকান থেকে দ্বীন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম(বার), হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জলিল বলেন, নিহত তিনজনেরই মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ৩০ অক্টোবর

Back to top button