জাতীয়

প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, সম্পদ

ঢাকা, ০৭ ডিসেম্বর – প্রতিবন্ধীরা এখন আর বোঝা নয়। তারাও আমাদের সম্পদ। দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে তাদের উন্নয়নেও কাজ করছে সরকার। সমাজে যারা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করছে তাদের সহযোগিতা করা উচিত।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ‘২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরা দেশের কোনো বোঝা নয়। সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক কিছু করেছে বর্তমান সরকার। আপনারা যারা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করছেন আমরাও আপনাদের সহযোগিতায় পাশে থাকবো।

আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কার্যনির্বাহী সভাপতি সাইফুল আলম মানিক বলেন, তারা এখন আর প্রতিবন্ধী নয়। তারাও দেশের সম্পদ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছেন। তাদের উন্নয়নেও নানা কাজ করছে। তাদেরও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান করা হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জন্য। স্কুল রয়েছে স্থানীয় পর্যায়েও। মাতৃকালীন ভাতাসহ নানা ভাতা দেওয়া হয় এখন যা আগে ছিল না। আমরা আপনাদের যেকোনো কাজে সহযোগিতা করবো। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বার্থে আপনাদেরও দরকার।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার কবির বলেন, প্রতিবন্ধীরা আমাদের এই সমাজের বোঝা নয়। তারা আল্লাহরই সৃষ্টি। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন গড়ে তোলে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর। বর্তমান সরকার এখনো নানা কাজ করছে প্রতিবন্ধীদের জন্য। এখন ৮০০ টাকা ভাতা পায় তারা। যদিও অপ্রতুল কিন্তু এটাও কি এক সময় ভাবা যেত? তাদের সামাজিক মর্যাদাও দিয়েছে বর্তমান সরকারই।

সভায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীন সুইটি বলেন, আমাদের সমাজের চারপাশে প্রতিবন্ধীদের দেখি। ২০ বছর আগেও প্রতিবন্ধী সন্তানকে মায়েরা লুকিয়ে রাখতো। আজ সেই পরিস্থিতি নেই। আজ বহু সংগঠন হয়েছে, তাদের থাকার-পড়ার জায়গা রয়েছে। তাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সেটি করেছেন। আমাদের সঙ্গে তাদের ভেদাভেদ নেই। সবাই মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়াবো এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজ যাবো আমরা।

আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধী নাজনীন সুলতানা বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীরা কারও বোঝা নয়। আমি নিজে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করি। একটি স্কুল করেছি আমার নিজ উপজেলায়, সেখানে ৩৫০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়ছে। তাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে এই কারণে বিয়েও করেনি আমি। তাদের প্রতি একটা মায়া কাজ করে। তাদের জন্য যারা কাজ করে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা দরকার।

ঢাকা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. উমর ফারুক বলেন, সংগঠনটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। আমরা চাই প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে যেসব কাজ করা হচ্ছে তা সরকারের আরও নজর দেওয়া। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো এমপিওভুক্ত করা জরুরি।

এসময় ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি। দাবিগুলো হলো-

১. অনলাইনে আবেদনকৃত ১৫২৫টি প্রতিবন্দী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিও ঘোষণা বাস্তবায়ন চাই

২. সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কর্তৃক ইস্যুকৃত এবং জেলা সমাজসেবা ও উপপরিচালক কর্তৃক পরিদর্শনকৃত সকল এনডিডি, নন-এনডিডি বিদ্যালয়ের এমপিও এবং বাকিগুলোর স্বীকৃতি বাস্তবায়ন চাই

৩. করোনাকালীন শিক্ষকপ্রতি ১০ হাজার টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন চাই

৪. করোনাকালীন কর্মচারীপ্রতি আট হাজার টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন চাই

৫. প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে মাসিক ছয় হাজার টাকা বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন চাই

৬. প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর মিড-ডে মিল প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন চাই

৭. বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা বাড়াতে সঠিক পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই

৮. প্রতিবন্ধী ভাতার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের শতভাগ উপবৃত্তি বাস্তবায়ন চাই

৯. প্রতিটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে সরকারি ভবন বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন চাই

১০. প্রতিবন্ধীদের শতভাগ কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন চাই

১১. প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসনসহ সকল বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বাস্তবায়ন চাই।

ঢাকা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বাদশার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি অরুণ সরকার রানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সদস্য সচিব কাজী মহিদুল ইসলাম মইন প্রমুখ।

সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ০৭ ডিসেম্বর

Back to top button