ফ্যাশন

হিজাব শুধুমাত্র কোন পর্দা নয় একটি ফ্যাশন ট্রেন্ডও…

হিজাব হচ্ছে এক ধরনের নেকাব। যা দিয়ে সাধারণত নারীরা মুখমন্ডল, ঘাড় ও বুক ঢেকে রাখেন। মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে নারীরা এই হিজাব পরিধান করে থাকেন নিজের মাথার চুল ও চেহারাকে পুরুষদের নজর থেকে এড়াতে এই বস্ত্রটি ব্যবহৃত হয়। এখন অনেক অমুসলিম নারীরাও হিজাব পরে থাকেন। এটা মূলত মুসলিম নারীদের জন্য একটি পর্দা প্রথা যা পুরুষের কাছ থেকে তাদের অনেকখানি আড়াল করে রাখে। শালীনতাবোধ, গোপনতা এবং নৈতিকতার  প্রতীক হিসেবেই মুসলিম নারীরা হিজাব পরিহিত হন। তবে বর্তমান সময়ে হিজাবকে অনেকেই ধর্মীয় পোশাক মানতে নারাজ। একে শুধুই নিজস্ব ফ্যাশনের একটি অংশ মনে করে থাকেন তারা। নিজেকে অভিজাতভাবে ফুটিয়ে তুলতে তাদেরকে হিজাব ব্যবহার করতে দেখা যায়।


এই সময়ে বোরকার পরিবর্তে হিজাব একটি জনপ্রিয় পোশাক আকারে নারীরা ব্যবহার করছে। কারণ হিজাব ব্যবহার অনেক আরামদায়ক ও স্বচ্ছন্দ্য। এই কারণে খুব দ্রূত এই দেশে হিজাব একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন আকারে ফ্যাশনেবল নারীরা গ্রহণ করেছে। স্কার্ফ ছাড়াও জামার ওড়না কিংবা দোপাট্টা দিয়েও অনেকেই হিজাব হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ওড়নাকে বিভিন্ন স্টাইলে মাথায় পেচিয়ে নিচ্ছে তরুণীরা, যা হিজাবের কাজ করছে। বর্তমানে হিজাব শুধু দেশেই তৈরি হচ্ছে না, বিদেশ থেকে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসছে বাংলাদেশে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপনীগুলোতে গড়ে উঠেছে হিজাবের দোকান। সব বয়সী নারীরাই হিজাব পরেন।


তারা হিজাব পরেন শাড়ি, কামিজ, কুর্তা বা অন্য যে কোনো পোশাকের সঙ্গে। তবে হিজাব পরার আগে অবশ্যই লম্বা হাতা বা থ্রি কোয়ার্টার হাতার পোশাক বেছে নেয়া উচিৎ। হিজাবের সঙ্গে ছোট হাতার পোশাক একদমই বেমানান। স্কুল-কলেজ, নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানসহ কর্মস্থলেও মেয়েরা অনায়াসে ব্যবহার করেন হিজাব। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হিজাব পরলে খুব সুন্দর দেখায়। পরনের পোশাকটি বেশি নকশা করা বা প্রিন্টের হলে একরঙা হিজাবও পরতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, পোশাকটি প্রিন্টেড হলে এর সঙ্গে একরঙা হিজাবই বেশি মানাবে।


হিজাব পরে অনেকে পার্টির মধ্যমনি হয়ে উঠতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন ফ্যাশনেবল একটি মন। পার্টিতে অনন্যা হয়ে উঠতে প্রয়োজন হিজাবের রঙ, ডিজাইন, অ্যাক্সেসরিজ এবং পরার ধরনের উপর জোর দেয়া। কিভাবে হিজাব বাঁধলে গড়ে তোলা যাবে স্বতন্ত্র আকর্ষণ এবং পার্টি লুকে হিজাবের সঙ্গে মানানসই অ্যাক্সেসরিজের যথাযথ ব্যবহার। এগুলো মাথায় রাখাটা একজন ফ্যাশনেবল নারীর জন্য জরুরি। বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে বিয়ের কনের সাজেও স্বগর্বে স্থান করে নিয়েছে এই হিজাব। জমকালো সাজকে সবার কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করতে হিজাবকে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন।


বাজারে হিজাবের সঙ্গে পরার জন্য পাথর ও পুতির বিভিন্ন ডিজাইন করা ব্রোজ পাওয়া যায়। বাজার ঘুরে কটন, লেস, জর্জেট ও সার্টিনসহ নানা ধরনের কাপড়ের হিজাব দেখা যায়। কাপড়ের মান ও নকশার ওপর ভিত্তি করে এগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বেছে নিন নিজের বাজেটের মাঝে। অফিসের জন্য বেছে নিন হালকা রঙের হিজাব। হিজাবের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ব্রোচ ব্যবহার করুন। এটা আপনার লুকে একটি স্নিগ্ধভাব যুক্ত করবে। খেয়াল রাখবেন আপনার পোশাক যদি একরঙা হয়, তাহলে প্রিন্টেড হিজাব বেছে নিন। অফিসে খুব বেশি চকমকে ব্রোচ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। তবে কোনো পার্টিতে নিজের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে জাঁকজমক ব্রোচটি পরতে ভুলবেন না। হিজাব বাঁধার সময় খেয়াল রাখবেন, একের অধিক ব্রোচ যেন ব্যবহার না করা হয়। রঙিন পিন ব্যবহার করলেও সেই রঙ যেন হিজাবের রঙের সঙ্গে বেখাপ্পা না লাগে।


তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, হিজাব একটি ধর্মীয় পোশাক। আপনি নিজে হিজাবকে ধর্মীয় পোশাক না মানলেও পুরো বিশ্বই হিজাবকে ধর্মীয় আকারে দেখে থাকে। তাই ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা উচিৎ। এবং পর্দা প্রথার নিয়ম মেনেই হিজাব পরেও পার্টিতে হয়ে ওঠা যায় অনন্যা।

কিছু দরকারি টিপস
১। হিজাব পরার আগে অবশ্যই চুল বেঁধে নেবেন। চাইলে একটু টাইট খোঁপা করে নিতে পারেন এতে বাতাস চলাচলের সুযোগ পাবে।
২। যারা নতুন হিজাব করা শুরু করেছেন, প্রথমেই পরিপাটি করে হিজাব পরতে না পারলে চেষ্টা করুন। বাড়িতে বিভিন্ন ভাবে অনুশীলন করুন। দেখবেন আপনি নিজেই নতুন সব স্টাইল করতে পারছেন।
৩। বাইরে যাবার সময় ঝটপট হিজাব পরতে হাতের কাছে বিভিন্ন সাইজের সেফটিপিন, হিজাব পিন রাখুন।
৪। যারা নতুন পরা শুরু করেছেন, হয়তবা প্রথম প্রথম বেশ গরম লাগতে পারে। এতে অধৈর্য্য হবেন না। সময়ের সাথে সাথে গরম লাগা ভাবটিও কমে যাবে।
৫। ছোট চুলগুলোকে সামলাতে হিজাবের নিচে আন্ডার ক্যাপ ব্যবহার করুন। এতে বেশি গরম মনে হলে নিজেই পছন্দমতো সুতির কাপড় কিনে বানিয়ে নিতে পারেন।
৬। খুব বেশি পাতলা জর্জেট বা সার্টিনের কাপড় ব্যবহার করবেন না।
হিজাব একজন নারিকে আরও সুন্দর করে তোলে। বর্তমান যুগের ফ্যাশন হচ্ছে হিজাব। আশাকরি আমাদের উপরের তিনটি নিয়মের মাধ্যমে ওড়না দিয়ে হিজাব বাধার নিয়ম অনেক সহজ মনে হচ্ছে।


কোথায় পাবেনঃ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি,যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউ মার্কেট, পিঙ্ক সিটি, এমনকি আপনার হাতের কাছে যে কোন বিপনি বিতানে।
বাজারে কটন, লেস, জর্জেট ও সাটিনসহ নানা ধরনের কাপড়ের হিজাব পাওয়া যায়। কাপড়ের মান ও নকশার উপর ভিত্তি করে হিজাবগুলো পাবেন ১০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
আপনি চাইলে ঘরে বসেই বিভিন্ন অনলাইন সপগুলো থেকে আপনার হিজাবটি কিনে নিতে পারেন। তাই খুব সহজেই বেছে নিতে পারবেন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের হিজাবটি।


কাপড়, ডিজাইন ও প্রাপ্তির স্থানভেদে হিজাবের দামে রয়েছে তারতম্য। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল এবং ঢাকার অন্য মার্কেটগুলোতে শর্ট হিজাবগুলো ২৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। হিজাবের ওড়না পাওয়া যাবে ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। মাদানি হিজাবের দাম ৩০০ থেকে ৭৫০ টাকা। আর ৩০০ টাকার মধ্যেই কেনা যাবে খোঁপা হিজাব।

পর্দা করার সঙ্গে নিজেকে মার্জিতভাবে উপস্থাপন করতেও হিজাব বেশ উপকারী। তাই এবারের ঈদে আপনার পছন্দের কেনাকাটার সঙ্গে দু একটি হিজাবও হিসাবের লিস্টে রাখতে পারেন।

এম ইউ

Back to top button