শিক্ষা

স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না হাজারো শিক্ষার্থী, দুঃচিন্তায় অভিভাবকরা

ঢাকা, ৩০ নভেম্বর – রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তি আবেদন। বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ আবেদন চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছর পূর্ণ না হওয়ায় ও ডিজিটাল নিবন্ধন জটিলতায় এ কার্যক্রমের বাইরে থাকছে হাজারো শিক্ষার্থী। ফলে এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দুঃচিন্তা ও সংশয়।

অভিভাবকরা বলছেন, বাচ্চারা ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য বাবা মায়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। একারণে অনলাইনে আবেদন করতে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। অথচ যদি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করা যেত তবে কোনো বিড়ম্বনায় থাকতো না।

রাজধানীতে ফুল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি স্বপরিবারে ঢাকায় বাস করলেও আমার গ্রামের বাড়ি যশোর। আমার স্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। এখন মেয়ের ডিজিটাল নিবন্ধন করতে আমাকে প্রথমে যশোর যেতে হবে আর আমার স্ত্রীকে যেতে হবে কিশোরগঞ্জ এরপর মেয়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করা সম্ভব হবে। যা শুধুই সময় সাপেক্ষ নয় বিড়ম্বনারও বটে।

অভিভাবক মিনার আবেদিন এ বিষয়ে বলেন, করোনার কারণে গেল বছর আমার মেয়ে আয়শাকে স্কুলে ভর্তি করতে পারিনি। এবার সরকারের নতুন নিয়মে ভর্তি আবেদনই করতে পারছি না। আয়শা স্কুলে ভর্তি হতে পারবে কী না তা আমি বুঝতে পারছি না।

শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনায় বলা হয়েছে প্রার্থীরা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের ক্রমানুসারে নির্বাচন করতে পারবে। ডাবল শিফটের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। একই পছন্দক্রমের বিদ্যালয় কিংবা শিফট দ্বিতীয়বার পছন্দ করা যাবে না।

সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন কার্যক্রমে যুক্ত হলেও এক্ষেত্রে এক হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় এ লটারিতে অংশ নেয়নি। এরমধ্যে ভিকারুননিসাসহ দেশের একাধিক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, অনলাইনে আবেনের জন্য শিক্ষার্থীর ডিজিটাল সনদ লাগবে। সেটা যদি কারোও না থাকে বা এরজন্য কেউ যদি আবেদন না করতে পারে এইমূহুর্তে আমাদের কিছু করার নেই। এছাড়া সফটওয়ারগুলোও আমরা মেইনটেইন করি না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে শর্ত দেয়া হয়েছে এটাতো তাকে মানতেই হবে। তবে যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ভর্তি লটারির বাইরে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থী আশা করি অংশ নিতে পারবে।

অন্যদিকে সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে এসেছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার সন্তানের জন্য ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের সুযোগ থাকলেও তিনি তার ক্যাচমেন্টে তিনটি ও অঞ্চলের বাইরে আরও দুটিতে আবেদন করে ফেলেছেন। এ কারণে তার আবেদনটি বাতিল হয়েছে কী না তা জানতে এসেছেন।

এ বিষয়ে মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে আবেদন করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কিছুই করার থাকেনা। অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রমের কারিগরি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ টেলিটক। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মাউশি সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে। তার আবেদনটি বাতিল না হলেও তিনটি বিদ্যালয়ের লটারিতে তার সন্তানের নাম থাকবে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে লটারি পরিচালনা করবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে। যা মনিটরিং করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ডিজিটাল নিবন্ধনে চলছে রমরমা ব্যবসা

শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনে ডিজিটাল জন্মসনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায় ভিড় বেড়েছে দেশের কম্পিউটার কম্পোজের দোকানগুলোতে। এই সুযোগে সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধুচক্র নির্ধারিত ফি এর থেকে কয়েকগুন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

শামীম হোসেন নামে একভুক্তভোগী বলেন, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের জন্য কম্পিউটার দোকানগুলোতে গেলেই দেখা যায় অন্যরকম চিত্র। গ্রামপর্যায়ে নিবন্ধন ফি ৫০টাকা করা হলেও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নেয়া হচ্ছে হাজার টাকার বেশি। কারণ এখন শুধু আমার ছেলের জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করলেই হচ্ছে না আমার ও আমার স্ত্রীর জন্মনিবন্ধনও ডিজিটাল করতে হচ্ছে। ফলে শুধু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তিনটি জন্মসনদ করতেই লাগছে তিন হাজার টাকা।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম, তাদের জন্মনিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারও মৃত্যুসনদ নিতে হলে প্রয়োজন হচ্ছে ডিজিটাল জন্মসনদের। নাগরিকের ১৮টি সেবা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং চারটি সেবা পেতে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। ২০০৭ সালে ভোটার তালিকা তৈরির কার্যক্রম শুরু হলেও ২০০১-০৬ সালে ২৮টি জেলায় ও চারটি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ শুরু হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি দোকানে কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম করতে পোহাতে হচ্ছে হাজারো দুর্ভোগ। নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে গেলে জন্মনিবন্ধন পাওয়ার কথা। কিন্তু তার জন্য অনেক ঘুরতে হচ্ছে। ঘুষ ছাড়াও মিলছে না এ সেবা। এছাড়াও নানাভাবে দুর্নীতিও হচ্ছে।

দালালের মাধ্যমে করানো হলে সহজেই মিলছে এ সেবা। উত্তর সিটি করপোরেশনের নাগরিক হলে আমার ঠিকানা দেখানো হচ্ছে দক্ষিণের। ফলে তদন্তে আমাকে ও আমার ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। সহজেই ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ আমাকে দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সনদ দেয়ার জন্য অফিস ও জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নতুন করে কিছু অঞ্চল যুক্ত হওয়ায় এক অঞ্চলের অফিসেই তিন অঞ্চলের সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে এক অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন অঞ্চলের নাগরিকদের সেবা দিতে হচ্ছে, যা খুবই কষ্টসাধ্য।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, কেউ যদি অন্য কাউকে নিজের কাজের দায়িত্ব দেয় সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকেনা। ১০০ টাকার কাজ অন্য কাউকে দিয়ে হাজার টাকায় করানো হলে দোষটি আসলে কার?

সিটি করপোরেশনের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি এ কাজে জড়িত নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনলাইনে আবেদন করে আঞ্চলিক অফিসে আসার পর ১০ মিনিটের মধ্যে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধ পাওয়া যাবে। কেউ না পেলে আমাকে ফোন দিবেন। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হবার আহবান জানান তিনি।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/৩০ নভেম্বর ২০২১

Back to top button