জাতীয়

দ. আফ্রিকাসহ ৫ দেশের যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ

রাশেদ রাব্বি

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর – দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সে অঞ্চলের পাঁচটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের দেশে প্রবেশ বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল অনুষ্ঠিত কমিটির ৪৮তম সভায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি সম্প্রতি এসব দেশে ভ্রমণ করে দেশে ফিরলে তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে। এদের মধ্যে কেউ কোভিড-১৯ আরটিপিসিআর (র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পলিমার চেইন রি-অ্যাকশন) পরীক্ষায় পজিটিভ হলে অবশ্যই আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন) রাখতে হবে।

এদিকে ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দেশের সব বন্দরে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। এ ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় করণীয় ও প্রস্তুতি সম্পর্কে শিগগিরই দেশবাসীকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেসব দেশের যাত্রী প্রবেশ বন্ধে (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফ্লাইটসহ) সুপারিশ করেছেন সেগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বোতসোয়ানা এবং সোয়াজিল্যান্ড। এসব দেশ থেকে যাত্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে ইউরোপের বিভিন্ন দেশও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

পরামর্শক কমিটি জানায়, কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ঘোষণা করেছে। এর বিস্তার রোধে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সে অঞ্চলের পাঁচটি দেশ জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বোতসোয়ানা, সোয়াজিল্যান্ড থেকে যাত্রী আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এসব দেশ এবং যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আগমন বন্ধের সুপারিশ করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তির এসব দেশে ভ্রমণের সাম্প্রতিক (বিগত ১৪ দিনে) ইতিহাস থাকলে তাদের বাংলাদেশে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় পজিটিভ হলে আইসোলেশনে থাকতে হবে।

দেশের প্রতিটি পোর্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করতে (স্কুল কলেজসহ) হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও বিভিন্ন (রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়) সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে পরীক্ষার সুপারিশ করছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

সব বন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা : দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে শনাক্ত করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে দেশের সব বন্দরে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল দুপুরে অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি ওমিক্রন নামক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উৎপন্ন করোনার একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদের সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে নির্দেশনা দিয়েছি। জাতীয় কারিগরি কমিটি, ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটিসহ (নাইট্যাগ) স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সভা করছেন। তারা বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সবার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যেসব কার্যকর উদ্যোগ নিতে হয় সেগুলো নেব। আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে এটি মোকাবিলা করতে চাই, করোনা মোকাবিলা করতে চাই।

মাঝপথে ফিরে এসেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে শনিবার সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশ্বব্যাপী আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং এ বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা ও করণীয় ঠিক করতে দুবাই থেকেই আরেকটি ফ্লাইটে রাত ১১টায় দেশে ফিরে আসেন। এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তিনি খুব দ্রুতই ওমিক্রন মোকাবিলা করার বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে মিডিয়া ব্রিফ করে স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতির আপডেট তথ্য দেশবাসীকে জানান।

টিকা নিয়ে নতুন করে ভাবছে কোম্পানিগুলো : করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যদি ছড়িয়ে পড়ে তা হলে দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের টিকা মানিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের বলে অভিহিত করেছে। এর কারণ মূলত মিউটেশন। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, এর ফলে ভ্যারিয়েন্টটি আবার আক্রান্তের ঝুঁকি তৈরি করছে। ফাইজার-বায়োএনটেক জানায়, ওষুধ নিয়ন্ত্রকের অনুমোদনসাপেক্ষে তারা ১০০ দিনের মধ্যে বিশেষভাবে তৈরি টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন করতে পারবে। মডার্না ঘোষণা দিয়েছে যদি তাদের টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায় তা হলে করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় শক্তিশালী বুস্টার ডোজ তৈরির। যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি ওমিক্রন টিকা প্রতিরোধী কিনা। তবু এসব টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এক বিবৃতিতে জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে তারা জানতে পারবেন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট তাদের টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাশ কাটাতে পারে কিনা। যদি এমনটি ঘটে তা হলে তাদের টিকায় পরিবর্তন আনা হবে। আরেক মার্কিন কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনও নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করছে। নোভাভ্যাক্স জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জ্ঞাত জিনগত সিকুয়েন্সের ভিত্তিতে একটি নতুন রিকম্বি^ন্যান্ট স্পাইক প্রোটিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় গত ৭ নভেম্বর। ওই দেশের আক্রান্তদের অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, বেলজিয়ামসহ যে দেশগুলোয় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে, তাদের সবাই সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করেছেন। ইউরোপ আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগুলোয় দক্ষিণ আফ্রিকার সব ফ্লাইট বাতিল করার পাশাপাশি সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে পিসিআর করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি। বর্তমানে পিসিআর ল্যাবগুলোয় করোনা পরীক্ষা কমেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাতে দেরি করার সুযোগ নেই।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ২৯ নভেম্বর

Back to top button