এশিয়া

ওমিক্রন নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক দক্ষিণ কোরিয়া

সিউল, ২৯ নভেম্বর – হঠাৎ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট হলো ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকাতে সদ্য আবিষ্কার হওয়া সার্স-কোভ-২ এর একটি ভ্যারিয়েন্ট বা প্রজাতি ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) করোনার নতুন এ ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টটি এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ইসরায়েল এবং হংকংয়ে শনাক্ত হয়েছে।

তবে এর ধরন এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশিবার জিনগত রূপ বদল করা সংস্করণ। এর জিনগত রূপ পরিবর্তনের তালিকা এত দীর্ঘ যে একজন বিজ্ঞানী একে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন। অপর এক বিজ্ঞানী বলেছেন, তার দেখা ধরনগুলোর মধ্যে নতুন এ ধরন সবচেয়ে মারাত্মক।

করোনার নতুন ধরন নিয়ে উদ্বেগ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ইতিমধ্যে আফ্রিকান আটটি দেশ থেকে কোরিয়া প্রবেশের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার।

কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সি শনিবার (২৭ নভেম্বর) ১৩টি মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। সেখানে নতুন তালিকাভুক্ত আফ্রিকান দেশগুলিতে থাকা সব বিদেশিকে কোরিয়ায় প্রবেশর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া দেশগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, এসওয়াতিনি, মোজাম্বিক ও মালাউই।

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রস্থান করা কোরীয় নাগরিকরা তাদের কোভিড টিকা নেওয়া সুনিশ্চিত করে কোরিয়ায় প্রবেশের পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তাদের কোয়ারেন্টাইনের প্রথম, পঞ্চম এবং শেষ দিনে একটি পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে এবং তাদের ছেড়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই নেতিবাচক হতে হবে।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে উদ্বেগজনক বলে ঘোষণা করার পর থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কোরিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, বৈকল্পিকটি আগের রূপের তুলনায় আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং প্রাথমিক প্রমাণগুলি পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।

কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (কেসিডিসি) এর গত শনিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে কেউ শনাক্ত হয়নি। আফ্রিকা থেকে আসা গত পাঁচ সপ্তাহে ২২ জন যাত্রীর মধ্যে করোনা ধরা পড়ে। যাদের ১৪ জনের মধ্যে জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা পাওয়া গেছে। অন্য আটজনের নমুনা ‘বিশ্লেষণ করা যায়নি’ কারণ ‘ভাইরাসের পরিমাণ খুব কম ছিল।’

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশটিতে মোট জনসংখ্যার ২৪% কোভিড টিকার আওতায় এসেছে। এর চেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে যেসব দেশে সেখানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আদৌ ছড়িয়ে পড়বে কিনা সে বিষয়ে এখনো চিন্তিত স্বাস্থ্য সংস্থা।

এদিকে, ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ব্রিটেনে দুজনের ওমিক্রন ধরনে শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, আক্রান্ত দুই ব্যক্তি সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার পৃথক দুটি দেশ ভ্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে নানা কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

ইউরোপের আরেক দেশ চেক প্রজাতন্ত্রের উত্তরাঞ্চলের লিবারেক শহরের একটি হাসপাতালে একজন নারীর দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক ওই হাসপাতালের একজন এ খবর নিশ্চিত করেন। আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া থেকে সম্প্রতি ওই নারী দক্ষিণ আফ্রিকা ও দুবাই হয়ে দেশে ফেরেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এর আগে বতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরায়েলেও এ ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।

এদিকে, গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) কোরিয়া প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের ঘটনা ঘটে। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৬ জন। শনিবার মধ্যরাতে শেষ হওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫৬ জন মারা যায় যা মহামারি শুরু থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা বলে জানিয়েছে কেসিডিসি। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪৮জন। তবে দেশটি এর প্রাদুর্ভাব অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোরিয়াস্থ সব প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

সূত্র : রাইজিংবিডি
এন এইচ, ২৯ নভেম্বর

Back to top button