জাতীয়

হাজী সেলিমের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি সরকারি জমিও

কাওসার মাহমুদ

ঢাকা, ৩০ অক্টোবর- পুরান ঢাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার পরিবার।

স্থানীয় অসহায় মানুষের জমি দখলের পাশাপাশি তার দখলের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি সরকারি জমিও। বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারি ব্যাংকের জমি দখল করে গুদাম, মার্কেট, ফিলিং স্টেশন ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এই এমপির বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার এলাকায় সরকারি জমি দখলই ছিল সেলিম পরিবারের নেশা। ওই এলাকায় অন্তত পাঁচ একর সরকারি জমি দখলে রয়েছে ওই পরিবারের।

দখল হওয়া জমিগুলোয় একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আবার দখলে নেয়া হয়েছে। দখল থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ মানুষের জমিও।

সেলিম পরিবারের সম্পত্তি দেখাশোনা ও স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখতে পুরান ঢাকায় ২ শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার দাপিয়ে বেড়াত। ওইসব ক্যাডারকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন এমপিপুত্র ইরফান সেলিম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন লালবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় এক একর জমি দখল করে রড, সিমেন্টের মার্কেট নির্মাণ এবং কালুনগর এলাকায় ১০ শতাংশ জমি দখল করে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক বলেন, হাজী সেলিমের দখল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে মার্কেট ও ভবন। এখন আবার দখল হয়ে থাকলে আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: শিল্প সেবা খাতে প্রণোদনা প্যাকেজে বাড়ল আরও ৭ হাজার কোটি টাকা

এছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মালিকানাধীন কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় ১ একর জমি দখল করে গোডাউন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন হাজী সেলিম। ওইসব জমিতে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পুনরায় তা আবার দখলে নিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম-পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, হাজী সেলিমের দখলে থাকা প্রায় জমি উদ্ধার করা গেলেও কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে ১ একর জমি এখনও দখলমুক্ত করা যায়নি। ওই স্থানে তিনি গোডাউন বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে সোমবার মৌলভীবাজারের ৭৮/১ হোল্ডিংয়ে প্রায় ২০ শতাংশ জমি সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখল থেকে উদ্ধার করেছে অগ্রণী ব্যাংক লি.।

ব্যাংকটির মৌলভীবাজারের কর্পোরেট শাখার ওই জমি ১০ বছর দখল করে রেখেছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধ দখলদাররা এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করলেও কাজ শুরু করেননি।

অগ্রণী ব্যাংকের হেড অব সিকিউরিটি প্রটোকল মেজর (অব.) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এমপি হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরার নামে জাল দলিল বানিয়ে ব্যাংকের জমি দখল করে নিয়েছিলেন। জমিতে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলা ভবনটিও গুঁড়িয়ে দেয় তারা। ওই সময় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ নথিও গায়েব হয়ে গেছে।

গত সোমবার রাতে ১০ বছর পর জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন জমির চারদিকে পাকা সীমানা দেয়াল বানিয়ে ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে এর নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাজী সেলিম সাবেক ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঘাট ও বাজার ইজারায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও জমি দখল শুরু করেন মূলত সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে। তার আওতাধীন প্রতিটি ওয়ার্ডেই গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী।

অভিযোগ রয়েছে, সোয়ারিঘাট, চকবাজার এলাকার প্রতিটি মার্কেট থেকে মাসহারা আদায়ে রয়েছে হাজী সেলিমের পৃথক বাহিনী। ট্রাকে ও লরিতে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রেও দৈনিক ভিত্তিতে টাকা গুনতে হয় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের।

তারা জানান, ১৯৯৬ সালের পর লালবাগ ও চকবাজার এলাকার মধ্যে যেখানেই খালি জমি পেয়েছেন, সেখানেই হাত পড়েছে হাজী সেলিমের। এ নিয়ে মুখ খুলতেও সাহস পায়নি কেউ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বারবার কল করা হলে তিনি কল কেটে দেন। এরপর বিষয়বস্তু লিখে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এরপর চকবাজারের বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

সূত্র : যুগান্তর
এন এইচ, ৩০ অক্টোবর

Back to top button