সনাতন

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা সঠিকভাবে পালন করলে বহু ফল পাওয়া যায় মানব জীবনে

মৃত্যুঞ্জয় সরদার

মানুষের মনের ভয় রাখার কোনো জায়গা নেই , মানুষের সবকিছু রাখার জায়গা যেমন রয়েছে। ভয় কোথায় রাখবে সেটাও কিন্তু মানুষ আজও খুঁজে পায়নি। ভয় ভীতির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ঈশ্বরের প্রতি অনুভূতি ও ভক্তর নিষ্ঠাবান শক্তি পাঠ। মানুষের আত্মার একটি দুর্বলতা শক্তি সর্বদাই কাজ করে,সেই আত্মাকে জাগ্রত করতে গেলে মন্ত্র তন্ত্র ও শক্তিকে আরধনা করতে হয়। তখন সে নিষ্ঠাবান শক্তিশালী সাধক হিসেবে ঘোষিত হয়। মানুষের সাধনার মধ্যে সিদ্ধ করতে পারে, এ পৃথিবীতে যখন জীব এসেছে তখন তিনি খালি হাতে এসেছি, আর যখন তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তখন সে খালি হাতেই যাবে ।এটা প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী হয়ে আসছে। স্রষ্টার সৃষ্টি কে আমরা কোনোভাবেই অস্কার করতে পারিনা।সংসার জীবনে সময় সম্পত্তি আসয় বিষয় সবকিছুই যেন একটা পরিপূর্ণ ও নিজে যেন অট্টালিকার পাড়ে বসে থাকি তেমনই আশা মানবহৃদয় জেগে ওঠে।এই সম্পত্তি পাওয়ার আশায় মানুষ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রূপে দেবী কোজাগরী লক্ষ্মী কে জাগ্রত করেছে,কেউ মন্ত্র পাঠ করে, কেউ নিজের আচার-অনুষ্ঠান, কেউ বা আত্মার বিশ্বাসের একটি রূপ পূজিত করে। ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির লোভে, রাতে মানুষ লক্ষ্মী দেবীর সৃষ্টির বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত করেছে।এক একটা দিন এক একটা রীতি-রেওয়াজ লক্ষ্মী দেবীকে নিয়ে প্রচলিত আছে, বাঙ্গালীদের জন্য একটা খুব অবাঙালিদের জন্য আর একরকম ।

সব যেন বাংলা-বিহার-উরিষ্যা ভারত বর্ষ তথা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে লক্ষ্মী দেবীর চিরাচরিত রীতি আজও প্রচলিত। তবে সর্বদাই আমি একটু গবেষণামূলক চরিত্র ভালোবাসি ,সবকিছু খতিয়ে দেখার অভ্যাস আমার সর্বদাই আছে।তাই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস ও তার গবেষণামূলক চরিত্র, আজ আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে পড়ে নিজে যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেটুকু আপনাদের সম্মুখে আমার কলমে পরিবেশন করছি।দেবী লক্ষ্মী হলেন সৌভাগ্য এবং শান্তির প্রতীক।তিনি হলেন ধনসম্পত্তি ও সমৃদ্ধির দেবী এবং হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি ব্যাপকভাবে পূজিতা।ভারতবর্ষে অসংখ্য লক্ষ্মী দেবীর মন্দির রয়েছে।তাঁর সৌন্দর্য অতুলনীয়।দেবী লক্ষ্মী তাঁর ভক্তদের কেবলমাত্র ধন সম্পত্তি দিয়েই আশীর্বাদ করেন না তাদের আধ্যাত্মিকতাকে বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করেন।হিন্দুধর্মের মধ্যে একটা মেয়েকে ঘরের ‘লক্ষ্মী’ রূপেই দেখা হয়ে থাকে।এবং অনেক পিতা-মাতাই পছন্দ করেন তাদের কন্যার নামটি দেবী লক্ষ্মীর নামানুসারে রাখতে, সুতরাং,সেই কারণেই আমরা এখানে তুলে ধরেছি দেবী লক্ষ্মীর নামের কিছু তালিকা আপনার ছোট্ট সোনামণিটির জন্য।সেই তালিকা এই লেখার মধ্যে চেষ্টা করবো বলার যতটা সম্ভব।আজ আমরা লক্ষ্মী কে নিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে অনেক রীতি-রেওয়াজ প্রচলিত আছে। তবে বাংলা সংস্কৃতি বাঙ্গালীদের জন্য ভারতবর্ষের সংস্কৃতি ইতিহাস সেটি অনেকেরই জানা।

প্রতি বছরে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো পালিত হয়। বলা হয় এই পুজো করলে তার ঘরে রাজলক্ষ্মী,ভাগ্য লক্ষ্মী, কুল লক্ষ্মী ও যশ লক্ষ্মী অচলা থাকেন। তার কোনো কিছুরই অভাব থাকে না। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী। অন্যদিকে জনবিশ্বাস অনুযায়ী এটা মানা হয় যে,দেবী লক্ষ্মীর নামানুসারে আপনার কন্যার নামকরণ করলে তা সংসারে সমৃদ্ধি এবং খুশির জোয়ার বয়ে আনে।এই নাম-গুলির রাজকীয়তা তাদের স্পর্শ করে যা কোন ফ্যাশনের থেকে কোনও অংশে কম নয়।দেবী লক্ষ্মীর নামের এই বিস্তৃত তালিকা থেকে আপনার পছন্দের নামটি নির্বাচন করুন নবজাতিকার জন্য এবং তাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে সাহায্য করুন।

এই যুগের হাল-ফ্যাসন দোরস্ত নাম-গুলি সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন এবং নির্বাচন করুন সবচেয়ে সেরা সুন্দর নামটি আপনার ছোট্ট কন্যা-সন্তানটির জন্য।তবে এসব কথা আগেকার লোকেদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, আজ আর তেমনি ভাবে নেই। অনেকেই লক্ষ্মী শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করিও না,লক্ষ্মী দেবীর আশীব্বার্দ তার সম্পদ ছাড়া আমাদের জীবন চলতে পারে না।লক্ষ্মী মানে শ্রী, সুরুচি। লক্ষ্মীসম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী। বৈদিক যুগে মহাশক্তি হিসেবে তাকে পুজো করা হত। তবে পরবর্তীকালে ধনশক্তির মূর্তি নারায়ণের সঙ্গে তাকে জুড়ে দেওয়া হয়,’—বলছেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।

তবেই লক্ষ্মী দেবীর আর এক নাম শ্রী। এই শ্রী শক্তির উল্লেখ বহু গ্রন্থেই আছে। পরাশর-সংহিতায় যে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- শ্রী, ভূ (ভূমি) ও লীলা। জয়াখ্য-সংহিতায় লক্ষ্মী কীর্তি, জয়া ও মায়া এই চার দেবীর উল্লেখ আছে। এখন লক্ষ্মী ও শ্রী শব্দের অর্থ জানা আবশ্যক। যাঁর দ্বারা লক্ষত হয় অর্থাৎ সকলে যাকে লক্ষ্য করেন বা দর্শন করেন, তিনিই লক্ষ্মী। অর্থাৎ লক্ষ্মী শব্দের অর্থ সৌন্দর্য। আবার যার দ্বারা সকলে আশ্রিত হয় তিনিই শ্রী। সেহেতু ধন দ্বারা সকলে আশ্রিত হন বা ধনকে আশ্রয় করে সকলে জীবন ধারণ করেন সেহেতু শ্রী অর্থ ধন। অহির্বুধণ্য-সংহিতায় আছে জগৎ রূপে লক্ষ্যমানা বলে তিনি লক্ষ্মী। বৈষ্ণব ভাব আশ্রয় করেন বলে তাকে শ্রী বলা হয়, তাঁর মধ্যে কোন কালভাব বা পুংভাব ব্যক্ত হয় না বলে তিনি পদ্মা। কামদান করেন বলে তিনি কমলা, বিষ্ণুর ভাব পালন করেন বলে তিনি বিষ্ণুশক্তি। রমণ করান বা আনন্দদান করেন বলে তিনি রতি বা রমা। ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলে লক্ষ্মীকে পাওয়া যায় শ্রী দেবী হিসেবে। ঋগ্বেদের শ্রী-সূক্তে শ্রী বা লক্ষ্মী দেবীর যে রূপ পাওয়া যায় তা এরকম- দেবী হিরণ্যবর্ণা বা স্বর্ণময়ী। তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালা ধারণ করেছেন। তিনি ভক্তদের স্বর্ণ, গরু ও অশ্ব দ্বান করেন। দেবীর সামনে অশ্ব, মধ্যে রথ এবং পার্শ্বে হস্তি-নাদের দ্বারা তাঁর বার্তা স্থাপিত হয় অর্থাৎ হস্তির ডাক জানিয়ে দেয় দেবীর আগমন ঘটেছে। দেবী সকলের মনোবাসনা পূরণ করেন এবং অলক্ষ্মী বিনাশ করেন। দেবী পদ্মফুলের উপর বিরাজিতা। দেবী সকলকে যশ-খ্যাতি, ধনসম্পদ ও সৌন্দর্য প্রদান করেন।

অন্যদিকে শ্রী-সূক্তে ঋষি কর্দম দেবীকে যেসব শব্দে সম্বোধন করেছেন, তা হল- আর্দ্রা, গজশুণ্ডাগ্রবতী, পুষ্টিরূপা, পিঙ্গলবর্ণা, পদ্মমালিনী, চন্দ্রাভা, হিরণ্ময়ী, ষষ্টিহস্তা, সুবর্ণা, হেমমালিনী, সূর্যাভা প্রভৃতি। কোন কোন পুরাণ মতে লক্ষ্মী দেবী (শ্রী) হলেন ভৃগুকন্যা। ভাগবত্ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও ব্রহ্মা- পুরাণে বলা হয়েছে, ভৃগুপত্নি খ্যাতির গর্ভে শ্রী দেবীর জন্ম। শতপথ ব্রাহ্মণে অবশ্য বলা হয়েছে, শ্রীদেবী প্রজাপতি (ব্রহ্মা) হতে উৎপন্ন হয়েছেন এবং তিনি ধন, সৌন্দর্য ও সৌভাগ্য প্রদান করেন। এসব নিয়ে পাশ্চাত্য কালের এক গল্প রয়েছে ,যে গল্পটা লেখার মধ্যে না লিখলে হয়তো এলাকাটি অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।এক দেশে রাজা ছিল। তিনি সৎ, ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তার দেশে এক নিয়ম ছিল। হাটে প্রজাদের যে সব জিনিস বিক্রি হবে না, তিনি তা ঠিক দামে তার প্রজাদের কাছ থেকে কিনে নেবেন। এক কামার হাটে একটি লোহার নারীমূর্তি বিক্রি করতে এনেছিলেন কিন্তু সারাদিনেও তা বিক্রি হয়নি। সে রাজবাড়িতে সে কথা জানালে ধর্মপরায়ণ রাজা তা কিনে নেন। সেইদিনই রাত্রে রাজা তার বাড়িতে কান্নার আওয়াজ শুনতে পান, সারা বাড়ি ঘুরে শেষে ঠাকুরঘরে দেখেন এক সুন্দরীনারী বসে কাঁদছে। রাজা তার সামনে গিয়ে বলেন, “কে মা তুমি? কাঁদছো কেন ?”

সে বলে “আমি রাজলক্ষ্মী, তোর বাড়িতে এতদিন ছিলাম,এখন আর থাকতে পারবো না, চলে যেতে হবে তাই কাঁদছি। ”

রাজা বিনয় সুরে হাতজোড় করে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন মা আমি কি করলাম?”

সে বলল, “আমি যে আর থাকতে পারবো না। বাড়িতে যে তুই অলক্ষ্মী কিনে এনেছিস।”

তারপর কাঁদতে কাঁদতে রাজলক্ষ্মী চলে গেলেন।

খারাপ মন নিয়ে রাজা জানলার ধারে বসে ছিলেন হঠাৎ দেখলেন একজন নারী বেরিয়ে যাচ্ছে অমনি দৌড়ে গিয়ে রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কে মা তুমি? চলে যাচ্ছ কেন?”সে বলল, “আমি তোমার ভাগ্যলক্ষ্মী তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ঘরে অলক্ষ্মী এনেছো থাকতে আর দিলে কই?”রাজা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। এমন সময় দেখেন আরও এক সুন্দরী নারী বেরিয়ে যাচ্ছে, রাজা তাড়াতাড়ি তার পথ আগলে বললেন “তুমি কে মা?চলে যাচ্ছ কেন?”সে বলে, “আমি যশলক্ষ্মী তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি।”এই ভাবে একে একে রাজলক্ষ্মী,ভাগ্যলক্ষ্মী আর যশলক্ষ্মী তিনজনে রাজাকে ছেড়ে চলে গেলেন। রাজার চোখে ঘুম নেই, জানলা ধারে বসে থাকতে থাকতে দেখেন একজন পরম পুরুষ আর এক সুন্দরী নারী বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, রাজা দোর আগলে কে তারা জানতে চাইলে সুন্দরীনারী বলেন আমি কুললক্ষ্মী, ঘরে অলক্ষ্মী আছে তাই তার থাকা হবে না। পরম পুরুষটি জানালেন তিনি  ধর্ম, কিন্তু অলক্ষ্মীর কারণে তাকেও যেতে হচ্ছে। সে কথা শুনে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, ” আমার দোষ কি ?ধর্ম রক্ষা করতেই অলক্ষ্মীকে কিনেছি, ধর্মই আমার সম্বল। এই ধর্মবলে আমি রাজলক্ষ্মী,ভাগ্যলক্ষ্মী,যশলক্ষ্মী ,কুললক্ষ্মী সবাইকে যেতে দিয়েছি।আমি ধর্মপ্রাণ, ধর্ম ত্যাগ করিনি,আমি আপনাকে যেতে দেব না।”ধর্ম দেখলেন রাজার কথাই ঠিক তিনি রয়ে গেলেন। কিন্তু রাজার অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে থাকে, তার সব সুখ হারিয়ে যায়। রানী যে দিন যেমন হয় তাই যত্ন করে রাজাকে খাওয়াতে থাকেন। রাজা খেতে বসলেই পঙ্গপালের মত পিঁপড়ের দল থালার চারদিকে ঘিরে বসত। রাজা রানীকে তার খাবারে ঘি দিতে বারণ করলেন। তিনি খেতে বসেন খাবার থালার চারদিকে পিঁপড়ের দল এসে জড়ো হয় কিন্তু খাবারে তাদের রুচি হয় না। তাই দেখে এক পিঁপড়ে বলে ওই অলক্ষ্মীর জন্য রাজা এমন গরিব হয়েছে যে খাবারে ঘি জুটছে না। তা শুনে রাজা হা হা করে হেসে উঠেন।রানী দেখতে পেয়ে বললেন আপনি এমন নিজের মনে হাসছেন কেন? রাজাও বলবেন না আর রানীও ছাড়বেন না। রাজা তখন বলেন এই কথা বললেই আমার প্রাণ যাবে, তাও যদি তুমি শুনতে চাও তো বলবো। তাও রানী শুনতে চায় শুনে তিনি বলেন আমি মরলে যদি খুশি হও তাহলে ওই নদীর ধারে চলো বলব। রানী ভাবে কথা বললে আবার কেউ মারা যায় নাকি? তারা নদীর ধারে এসেছে,হঠাৎ এক শিয়ালিনী শিয়ালকে বলে ,ওই দেখো জলে মরা ভেসে যাচ্ছে নিয়ে এসো দুজনে খাওয়া যাবে।তাই শুনে শেয়াল বলে আমি কি রাজার মতো বোকা নাকি যে রানীর কথায় প্রাণ দেব। রাজামশাই সে কথা শুনতে পেয়ে রানীকে সেথায় ফেলে রেখে দৌড় দেয়। রানী কাঁদতে কাঁদতে নদীর ধারে থেকে যান।

এই ভাবে অনেক দিন পার হয়ে যায়। এদিকে দেখতে দেখতে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি এল, রানী দেখলেন নদীর ঘাটে শঙ্খ, ঘন্টা, ধুপ ধুনো দিয়ে কারা কি সব করছে। রানী এগিয়ে এসে মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলেন তারা কি করছে, তখন তারা বলে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো করছে। এবং সঙ্গে এও জানায় এই পুজো করলে অলক্ষ্মী দূর হয়, মা লক্ষ্মীর কৃপাদৃষ্টি লাভ হয়। তাই শুনে রানী তাদের কাছ থেকে রং মাখানো পিটুলি চেয়ে লক্ষ্মী গড়ে নারিকেল,চিড়ে, তালের ফোঁপর দিয়ে পুজো করলেন। তারপর গল্প গান করে সারারাত জেগে কাটালেন।ওই দিকে রাজবাড়িতে যে লোহার অলক্ষ্মী ছিল সকাল হতেই তা কোথায় গেল কেউ জানতে পারলো না। ধর্ম এসে রাজাকে বললেন, “আপনার অমঙ্গল কেটে গেছে অলক্ষ্মী দূর হয়েছে। আপনি রানীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।”

রাজা পালকি নিয়ে রানীকে ফিরিয়ে আনলেন। তারপর খুব ঘটা করে লক্ষ্মী পুজো করে আবার সব ফিরে পেলেন।সেই থেকে প্রচলিত হও শুরু হলো মা লক্ষ্মী দেবীর ধর্মের ইতিহাস।ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী। অবাঙালিদের মধ্যে লক্ষ্মীপূজার রেওয়াজ কালীপূজা বা দিওয়ালির দিনে। কিন্তু বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের এই পূর্ণিমাতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার চল রয়েছে। তবে রীতিতে ফারাক রয়েছে দুই বাংলার। পশ্চিমবঙ্গে পূজা হয় মূলত মাটির প্রতিমায়, কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানত সরায় এঁকে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস বহু দেশের রীতি রেওয়াজ বহু রুপরেখা দিয়ে, কিন্তু মূল আরধনা ধনসম্পত্তি দিকে।

কিভাবে হয় এই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা? আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার ব্রত’ বইতে এই লক্ষ্মীপূজা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি জানান, দেবীর কাছে ভালো ফলনের কামনা করাই আসলে এই পূজার নৃতাত্ত্বিক কারণ। পূজা বা ব্রত কথার সঙ্গে আলপনার একটি  সম্পর্ক রয়েছে। আলপনা আসলে ‘কামনার প্রতিচ্ছবি।’ দেবী পূজা উপাচার হিসেবে থাকে ফল, মিষ্টি, মোয়া, নাড়ু প্রভৃতি। কোজাগরী লক্ষ্মীর প্রতি আচার নিবেদনের সঙ্গেও একটি লোকবিশ্বাস জড়িত রয়েছে। পূজার সময় মোট ১৪টি পাত্রে উপাচার রাখা হয়। তারপর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল দানের রীতি রয়েছে। কাঠের জলচৌকির ওপর লক্ষ্মীর সরাটিকে স্থাপন করা হয়। এরপর কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকি দিয়ে সাজানো হয় পূজার স্থানটিকে।এদিকে ভাগ্যদেবী লক্ষ্মী কিভাবে বিষ্ণু-পত্নী হলেন? স্কন্দ পুরাণে এ প্রশ্নের উত্তর মেলে। সেখানে উল্লেখ আছে খ্যাতির গর্ভে জাতা লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ বা বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলেন। তখন ইন্দ্রাদি দেবগণ বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাঁদেরকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন যে, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম। কিন্তু কেউই বিশ্বরূপ দেখাতে না পেরে লজ্জিত হয়ে চলে যান। তাঁরপর লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একদিন বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখালেন। তারপর মহর্ষি ভৃগু তাঁর কন্যা লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর হস্তে সমর্পণ করলেন। এভাবে লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণুপত্নী হলেন।

লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি
বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে। সমুদ্র থেকে দেবীর উদ্ভব বলে দেবীকে বলা হয় সমুদ্রোদ্ভবা। সমুদ্র হল অশেষ ধন-রত্নের আধার। ধনরত্নে পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। যেহেতু লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদের দেবী সেহেতু সমুদ্র থেকে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তির কাহিনী কল্পিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। বিষ্ণু হলেন জগতের প্রতিপালক। প্রজাদের লালন-পালন করতে ধন-রত্নের প্রয়োজন রয়েছে আর সেজন্যই বিষ্ণু ধন-ঐশ্বর্যের লক্ষ্মী দেবীকে বুকে স্থান দিলেন।

লক্ষ্মী দেবীর রূপ

লক্ষ্মী দেবী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে অধিষ্ঠান করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে এই দেবী বৈকুণ্ঠে পরিপূর্ণতমা শ্রেষ্ঠা মহালক্ষ্মী, স্বর্গে ইন্দ্রের সম্পদরূপা স্বর্গলক্ষ্মী, পাতাল ও মর্ত্যে রাজাদের রাজলক্ষ্মী, গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী ও অংশরূপে গৃহিনী এবং গৃহিগণের সম্পদরূপিণী মঙ্গলকারিণী মঙ্গলা। তিনি গাভীদের জননী সুরভী, যজ্ঞের পত্নী দক্ষিণা, তিনি ক্ষীরোদ-সমুদ্রকন্যা, পদ্মফুলের সৌন্দর্যরূপিণী, চন্দ্রের শোভারূপা, সূর্যমণ্ডলের শোভারূপা এবং অলঙ্কারে, রত্নে, ফলে, জলে, নৃপপত্নীতে, গৃহে, সকল শস্যে, বস্ত্রে ও পরিষ্কৃত স্থানে বিরাজমানা।কৃত্যতত্তম-অষ্টবিংশতিতত্ত্বমে আছে, পাশ, অক্ষমালা, পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনা, ত্রিলোকের মাতা, গৌরবর্ণা, সুরূপা, নানা অলঙ্কারে সজ্জিতা, বাম হস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণ করে বরদানকারিণী দেবীকে ধ্যান করি। তন্ত্রসার অনুসারে দেবী চার হস্তে বরমুদ্রা, অভয়মুদ্রা ও দুইটি পদ্ম ধারণ করে আছেন। তাঁর পীনোন্নত স্তনে মুক্তার শোভা পাচ্ছে। তন্ত্রসারের অন্যত্র গজলক্ষ্মীর যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা এরকম- দেবীর দেহ স্বর্ণবর্ণের। চারটি হস্তি শুড় দ্বারা অমৃতপূর্ণ স্বর্ণ-কলস তুলে অমৃতবর্ষণ করে তাঁর অভিষেক করছে।

তিনি ডানদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে বরমুদ্রা এবং বামদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে অভয়মুদ্রা ধারণ করেছেন। তাঁর মস্তকে রত্নমুকুট, পরিধানে পট্টবস্ত্র এবং তিনি পদ্মে উপবিষ্টা আছেন।চণ্ডীতে যে মহালক্ষ্মীর উল্লেখ আছে- তিনি অষ্টাদশ ভূজা। তিনি অষ্টাদশ হস্তে অক্ষমালা, পরশু, গদা, বাণ, বজ্র, পদ্ম, ধনু, কমণ্ডলু, দণ্ড, শক্তি, অসি, ঢাল, ঘণ্টা, শঙ্খ, সুরাপাত্র, শূল, পাশ ও সুদর্শন চক্র ধরে আছেন। তন্ত্ররাজ গ্রন্থে এক সিদ্ধলক্ষ্মীর কথা আছে যার কৃপায় যুদ্ধে জয়লাভ করা যায়। সে সিদ্ধলক্ষ্মীর একশত মুখ, দুইশত বাহু, প্রতিটি মুখ ত্রিনয়ন-বিশিষ্ট, ভয়ঙ্কর এবং সমান আকৃতি বিশিষ্ট শক্তি দ্বারা পরিবৃতা।লক্ষ্মী দেবীর রূপ বিশ্লেষণ করে রজোগুণেরই আধিক্য পাওয়া যায়। হিরণ্যবর্ণ, স্বর্ণমুকুট, নানা অলঙ্কার, হস্তিদের ছেটানো অমৃত-জলে স্নান প্রভৃতি বিষয়গুলো প্রকৃতির রজোগুণকেই সূচিত করে। দেবীর হাতে পদ্ম এবং তিনি পদ্মের উপর বসে থাকেন অর্থাৎ পদ্মের সাথে দেবীর একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পদ্ম হল সূর্যের প্রতীক। আর সূর্য হল বিষ্ণুরই এক রূপ। বিষ্ণুর হাতেও পদ্ম রয়েছে। তাই বিষ্ণুশক্তি হিসেবে লক্ষ্মীর হস্তে পদ্ম থাকাটা স্বাভাবিক। আবার পদ্ম ভক্তিরও প্রতীক। দেবী ভক্তদের ভক্তি প্রদান করেন তাই ভক্তিপদ্ম তার হস্তে।

লক্ষ্মী দেবীর অবতার
বিষ্ণুর মত লক্ষ্মী দেবীরও অবতার রয়েছে। সীতা, রুক্মিণী, রাধা প্রভৃতি দেবী লক্ষ্মীর অবতার। প্রপঞ্চসার তন্ত্রে লক্ষ্মী দেবীর যে নয়টি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- বিভূতি, উন্নতি, কামিত্ম, হৃষ্টি, কীর্তি, সন্নতি, ব্যুষ্টি, উৎকৃষ্টি ও ঋদ্ধি। মৎস্য পুরাণ মতে সরস্বতীর অষ্টশক্তির এক শক্তি হলেন লক্ষ্মী। সরস্বতীর অষ্টশক্তি হল লক্ষ্মী, মেধা, ধরা, পুষ্টি, গৌরী, তুষ্টি, প্রভা ও সতী। প্রকৃতপক্ষে দেবীর এক একটি শক্তি হল দেবীর এক একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। লক্ষ্মী শুধু ধনের দেবী নয়। তিনি কৃষিসম্পদ, খনিজদ্রব্য, পশুসম্পদ, শিল্পসম্পদ ও বাণিজ্যেরও দেবী। তাই কৃষি ক্ষেত্রে, পশুপালনে, শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে দেবীর কৃপালাভ প্রয়োজন। ভূমিতে উৎপন্ন শস্য, খনিতে থাকা স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, লৌহ সব কিছুর অধিষ্ঠাত্রী হলেন লক্ষ্মী দেবী। এজন্য তাঁকে ভূলীলা বলা হয়।

লক্ষ্মী দেবীর প্রিয় ও অপ্রিয়
লক্ষ্মী দেবীর কোন কোন স্থান প্রিয় আর কোন কোন স্থান অপ্রিয়, তা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ আছে। দেবী বলেছেন- যে সকল গৃহে গুরু, ঈশ্বর, পিতামাতা, আত্মীয়, অতিথি ও পিতৃলোক রুষ্ট হন সে সকল গৃহে আমি প্রবেশ করি না। আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃণা বোধ করি, যে সকল ব্যক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, সর্বদা কেবল নাই-নাই বলে, যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল, যারা সত্যহীন মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে, বিশ্বাসঘাতক ও কৃতঘ্ন, যে সকল পাপী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ভয়গ্রস্ত শত্রুগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, অতি কৃপণ, দীক্ষাহীন, শোকার্ত, মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন, স্ত্রী-বশীভূত, কুলটার পতি, দুর্বাক, কলহপরায়ণ, যারা ভগবানের পূজা ও তাঁর নাম-গুণাগুণ-কীর্তনে বিমুখ, যারা শয়নের পূর্বে পা ধোয় না, নগ্ন হয়ে শয়ন করে, বেশী ঘুমায় অথবা প্রভাতে, সায়াহ্নে বা দিনে নিদ্রা যায়, যাদের দাঁত অসংস্কৃত, পরিধেয় বস্ত্র মলিন এবং হাত বিকৃত তাদের গৃহে আমি কখনো গমন করি না। আমি সে গৃহেই বাস করি, যে সকল গৃহে সাদা কবুতর রয়েছে, যেখানে গৃহিনী উজ্জ্বল ও সুশ্রী, যেখানে কলহ নাই, ধানের বর্ণ স্বর্ণের মত, চাল রূপার মত এবং অন্ন-তুষহীন। যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ও ভোগ্যবস্ত্ত সমান ভাগ করে ভোগ করেন, যিনি মিষ্টভাষী বৃদ্ধগণকে সেবা করেন, প্রিয়দর্শন, স্বল্পভাষী, অদীর্ঘসূত্রী অথাৎ কোন কাজে অধিক সময় ব্যয় করেন না, ধার্মিক, জিতেন্দ্রিয়, বিদ্যান, অগর্বিত, যিনি জনগণের সেবাপরায়ণ ও পরকে পীড়া দেন না, যিনি ধীরে সণান করেন, দ্রুত আহার করেন, ফুল তোলার পর গন্ধ নেন না, পরস্ত্রী দর্শন করেন না এবং সংযত সে ব্যক্তিই আমার প্রিয়।

লক্ষ্মী দেবীর আবাস
লক্ষ্মী দেবী গৃহিণীদের মধ্যে গৃহলক্ষ্মী হয়ে বাস করেন। তবে সব গৃহিণীদের মধ্যে নয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেবী বলেছেন- আমি সে সব নারীর শরীরে নিত্য বাস করি যারা গুরুজনের কাছে শিক্ষা লাভ করেছেন এবং যারা গুরুভক্তিপরায়ণা, যারা পতিবাক্য কখনও অবহেলা করেন না এবং পতির ভোজনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা ভোজন করেন, যারা পরিতুষ্টা, বীর্যশালিনী, প্রিয়বাদিনী, সৌভাগ্যবতী, সুশোভনা, লাবণ্যযুক্তা এবং প্রিয়দর্শিনী এরকম পতিব্রতা রমণীর মধ্যেই আমি বাস করি।

লক্ষ্মী দেবীর বাহন
লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা কেন? পেঁচা লক্ষ্মী দেবীর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্ম ধারণ করে। পেঁচা কুৎসিত ও দিবান্ধ। যারা সারা জীবন শুধু ধনলাভের চিন্তায় মগ্ন থাকে, তারা ঐ পেঁচার মতই অন্ধ হয়ে যায়। তাই জ্ঞানের আলো তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। পেঁচা যেমন কালো অন্ধকারে পথ চলে, ধনলোভীরাও তেমনি কালো পথে অর্থাৎ অসৎ পথে ধাবিত হয়। ধনের দেবী তাঁর সঙ্গে পেঁচা রেখে সকলকে জানিয়ে দেন, যিনি ভক্তিধন অন্বেষণ করবে, তিনি আমাকে পাবে আর যিনি পার্থিব-ধন অন্বেষণ করবে তিনি আমাকে নয় আমার পেচাঁকে লাভ করবে। প্রাচীন কাল হতে মা লক্ষী দেবীর প্রচলিত কিছু আচার অনুষ্ঠানের ধরণ ও পন্থা

প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল।

দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয় বাসস্থানে।

বলা হয় সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসি বৃক্ষে আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী দেবী তুলসি হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসি বৃক্ষ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।

ধারাবাহিকভাবে ১২ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।

একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশি হল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।

শুধুমাত্র পুজোর দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা হয় তবে ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই।

যিনি প্রতি শুক্রবার পরমান্ন বা মিষ্ট অন্ন দিয়ে গোসেবা করেন তাঁর প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী।

প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়। এছাড়া টানা ৩০ দিন ধরে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে নিষ্ঠাভরে শ্রী সুক্ত পাঠ করলে বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী। শ্রী সুক্ত হল ১৫টি ভার্সের একটি সম্মেলন।

প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা মঙ্গল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।

ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ গৃহের কল্যাণের জন্য।

লক্ষী পুজোর যা কিছু করা নিষিদ্ধ 
লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যেকরে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়।

শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর স্তোত্র
লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষি তাম্।
রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর স্তোত্রম্
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:- অবশ্যই তিন বার পাঠ করতে হবে
শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।
শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী..

লক্ষ্মীর চারটি হাত। ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাহয়েছে এভাবেই। যাঁরা মনে করেন মা লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধনের দেবী, তাঁরা সম্ভবত দেবীর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কেঅবহিত নন। সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভব মা লক্ষ্মীর। কিন্তু সবার আগে জানা প্রয়োজন তিনি কে? কীভাবে আবির্ভূতহলেন তিনি। এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কখনও বলা হয় তিনি ছিলেন ঋষি ভৃগুর সন্তান এবং সমুদ্রমন্থনে তাঁর পুনর্জন্ম হয়। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, তিনি সমুদ্রদেব বরুণের কন্যা। মা লক্ষ্মীরও আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। একটি পৌরাণিক গল্পে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার সাত সন্তান, সপ্তঋষির মধ্যে ৬জনই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে দৈবজ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন মহর্ষি ভৃগু। মানবশরীরের ক্ষুধা নিবারণ কীভাবে ঘটে, সেই খোঁজে তিনি বেরিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরটি পান সমু্দ্রদেববরুণের কাছে। মহর্ষি ভৃগু তার পরেই উপলব্ধি করেন যে মগজের বা মননের পুষ্টিলাভ যেমন হয় দেবী সরস্বতীর আরাধনায় তেমনই নশ্বর শরীরের পুষ্টির জন্য মা লক্ষ্মীর আবাহন ও পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মা লক্ষ্মীকে শুধুমাত্র ধনদেবী হিসেবে দেখলে তাঁর মহিমার সম্পূর্ণটা দেখা হয় না। তাঁর আশীর্বাদ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, গৃহস্থের সার্বিক কল্যাণের জন্য। আর এই দুয়ের জন্যই প্রয়োজন অর্থের।

কিন্তু সেই অর্থ পাওয়ার পরে মানুষ তার প্রয়োগ কীভাবে করছে, সেদিকে তাঁর কড়া নজর। অপচয় বা অন্যায় প্রয়োগ তিনি সইতে পারেন না, তাই তিনি চঞ্চলা।যেকোনো পুজোয় হোক না কেন সব পুজোতে পুজোর একটা রীতি নীতি বা আচার অনুষ্ঠান থাকে ভিন্ন ভিন্ন। আর থাকে ভিবিন্ন রকমের মন্ত্র ও নিয়ম। আমাদের সেই মন্ত্র সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে পালন অর্থাৎ উচ্চারণ করে বলাটাই হল একটু জটিল কাজ। প্রত্যেক দেবদেবীর একটা নিজস্ব কিছু রীতি নীতি মন্ত্র ইত্যাদি থাকে। পুজোর সময় সঠিক ভাবে পুজো করাটাও একটা মহৎ কাজ। মা লক্ষীর পুজোতে পুজোর মন্ত্র পরে সুষ্ঠ ভাবে করতে হয় বা করা উচিত। তেমনি সকল প্রকার দেবদেবীর পুজোও আমাদের বিধাতার রীতি নীতি মেনে চলাই হল একমাত্র প্রধান কাজ। আমাদের হিন্দু সাশ্র মতে অনেক দেবদেবীর পুজো আমরা করে থাকি। আমরা প্রত্যেক দেবদেবীর পুজো করে থাকি ভগবানের আশীর্বাদ পাবার জন্য। প্রত্যেক ভগবানের অর্থাৎ প্রত্যেক দেবদেবীর আলাদা আলাদা আশীর্বাদের জন্যই আমরা পুজো করে থাকি। তাদের মধ্যে মা লক্ষী হল আমাদের ধন, সম্পদ, ঐশর্য, সুখ, শান্তি, ইত্যাদি আশীর্বাদের আশায়। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। রীতি নীতি মেনে পুজো করবেন। না জানলে এখানে দেখেনিন পুরোটা পরে।  পুজো আর্চা জেনে নিয়ে করা ভালো না জেনে ভুল ভাবে পুজো করলে অমঙ্গল হয়। পোস্টটি শেয়ার করবেন সবার উদ্দেশে। ধন্যবাদ।দেবী লক্ষী সম্পদ বৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী৷ তিনি সুন্দরী ও মাধুর্য্যময় দেবী৷ তিনি পূজারীদের ধন সম্পদ দান করে থাকেন৷ দেবী লক্ষী শ্রী হিসেবে পরিচিত ৷কেননা তিনি সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রতীক ৷তিনি ভগবান বিষ্ণুর সহধর্মিনী৷ অত্যন্ত সুন্দর এবং দুই হাত বিশিষ্ট ৷তিনি পদ্ম ফুলের উপর উপবিষ৷্ট গায়ের রঙ ধূসর সাদা উজ্জ্বল হলুদ ও নীলাভ হয়ে থাকে ৷দেবী লক্ষী সৌন্দর্যের দেবী ,সম্পদের দেবী ৷আমাদের পরিবারের উন্নতি নির্ভর করে সম্পদের উপর আর এই সম্পদ গুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি পশু জ্ঞান ধৈর্য সততা ইত্যাদি৷ লক্ষী পূজার পদ্ধতি—- যেকোনো পূজা করতে পূজা বিধি অনুসরণ করতে হয় ৷

লক্ষ্মী পূজার পদ্ধতি হিসেবে শুদ্ধ আসনে বসে আচ মন থেকে শুরু করে পঞ্চ দেবতার পূজা করতে হয৷অতঃপর লক্ষী ধ্যান করে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দেবী লক্ষী পূজা করা হয৷লক্ষ্মীপূজো পঞ্চ উপাচার দশ উপাচার আলাদা 16 উপাচার এ করা হয়ে থাকে৷ পূজার মৌলিক নীতি হিসেবে লক্ষীর ধ্যান পূজা ,মন্ত্র পাঠ ,পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও প্রণাম মন্ত্র পাঠ করতে হয় ৷অবশেষে বিসর্জন দিতে হয় ৷সাধারণত প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজা করা হয় ৷লক্ষী পুজা ই লক্ষীর পাঁচালী পড়া হয৷ আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষভাবে লক্ষী পূজা করা হয৷এই লক্ষ্মী পূজা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামে পরিচিত৷ প্রতিটি হিন্দু পরিবারের লক্ষী পূজা করা হয় ৷প্রতি সপ্তাহের বৃহষ্পতিবারে এবং আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ আয়োজন এর মাধ্যমে লক্ষী পূজা করা হয় ৷

হিন্দু সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একাত্মবোধ এর সৃষ্টি করে ৷লক্ষীদেবী ধন সম্পদ দান করেন৷ পূজার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মী দেবীর উপর বিশ্বাস স্থাপিত হয় ৷লক্ষ্মী দেবীর শান্ত স্বভাব পূজারী কেও শান্ত করে তোলে৷ লক্ষীদেবীর পুষ্পাঞ্জলী—- ওঁ নমস্তে সর্বভূতানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে যা গতিস্তৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্তদর্চনাৎ বাংলা অর্থ—হে হরিপ্রিয়া ,তুমি সকলকে বর দিয়ে থাক৷ তোমার আশ্রিতদের যে গতি হয়,তোমার অর্চনার দ্বারা আমরাও যেন তা হয়৷তোমাকে নমষ্কার৷ লক্ষীদেবীর প্রনাম মন্ত্র — ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষী নমোহস্তুতে৷৷ সরলার্থ— হে দেবী কল্যাণী বিশ্বরূপ শ্রী বিষ্ণুর স্ত্রী তুমি পদ্মা ও পদ্মার আলোয় সকলকে শুভ ফল দাও তুমি আমাকে সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করো আমি তোমাকে প্রণাম করি।আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক লক্ষ্মী আরাধনার দিন। পাঠ করুন মা লক্ষ্মীর ১০৮ নাম। এই নাম উচ্চারনে দারিদ্রতা নিবারণ হয়।
……………………………
১) প্রকৃতি ,২) বিক্রুতি , ৩) বিদ্যা , ৪) সর্বভূতহিতপ্রদা, ৫) শ্রদ্ধা , ৬) বিভূতি, ৭) সুরভি, ৮) পরমাত্মিকা , ৯) জয়প্রদা , ১০) পদ্মালয়া , ১১) পদ্মা , ১২) শুচী, ১৩) স্বাহা, ১৪) স্বাধা, ১৫) সুধা , ১৬) ধন্যা , ১৭) হিরন্ময়ী, ১৮) লক্ষ্মী , ১৯) নিত্যাপুষ্টা, ২০) বিভা, ২১) অদিত্যা, ২২) দিত্যা, ২৩) দীপা, ২৪) বসুধা, ২৫) ক্ষীরোদা, ২৬) কমলাসম্ভবা, ২৭) কান্তা, ২৮) কামাক্ষী, ২৯) ক্ষীরোদসম্ভবা , ৩০) অনুগ্রহাপ্রদা, ৩১) ঐশ্বর্য্যা , ৩২) অনঘা, ৩৩) হরিবল্লভী, ৩৪) অশোকা , ৩৫) অমৃতা, ৩৬) দীপ্তা, ৩৭) লোকাশোকবিনাশিনী, ৩৮) ধর্মনিলয়া, ৩৯) করুণা, ৪০) লোকমাতা, ৪১) পদ্মপ্রিয়া, ৪২) পদ্মহস্তা, ৪৩) পদ্মাক্ষী , ৪৪) পদ্মসুন্দরী, ৪৫) পদ্মভবা, ৪৬) পদ্মমুখী, ৪৭) পদ্মনাভপ্রিয়া, ৪৮) রমা, ৪৯) পদ্মমালাধরা , ৫০) দেবী,
৫১) পদ্মিনী, ৫২) পদ্মগন্ধিণী , ৫৩) পুণ্যগন্ধা, ৫৪) সুপ্রসন্না, ৫৫) শশীমুখী , ৫৬) প্রভা, ৫৭) চন্দ্রবদনা, ৫৮) চন্দ্রা , ৫৯) চন্দ্রাসহোদরী , ৬০) চতুর্ভুজা , ৬১) চন্দ্ররূপা , ৬২) ইন্দিরা, ৬৩) ইন্দুশীতলা, ৬৪) আহ্লাদিণী, ৬৫) নারায়নী , ৬৬) বৈকুন্ঠেশ্বরি ৬৭) হরিদ্রা ৬৮) সত্যা , ৬৯) বিমলা, ৭০) বিশ্বজননী, ৭১) তুষ্টি, ৭২) দারিদ্রনাশিণী, ৭৩) ধনদা , ৭৪) শান্তা, ৭৫) শুক্লামাল্যাম্বরা , ৭৬) শ্রী, ৭৭) ভাস্করী , ৭৮) বিল্বনিলয়া , ৭৯) হরিপ্রিয়া , ৮০) যশস্বীনি , ৮১) বসুন্ধরা , ৮২) উদারঙ্গা, ৮৩) হরিণী , ৮৪) মালিনী, ৮৫) গজগামিনী , ৮৬) সিদ্ধি , ৮৭) স্ত্রৈন্যাসৌম্যা , ৮৮) শুভপ্রদা, ৮৯) বিষ্ণুপ্রিয়া , ৯০) বরদা , ৯১) বসুপ্রদা, ৯২) শুভা , ৯৩)চঞ্চলা , ৯৪) সমুদ্রতনয়া , ৯৫) জয়া , ৯৬) মঙ্গলাদেবী, ৯৭) বিষ্ণুবক্ষাস্থলাসিক্তা , ৯৮) বিষ্ণুপত্নী, ৯৯) প্রসন্নাক্ষী , ১০০) নারায়নসমাশ্রিতা ,১০১) দারিদ্রধ্বংসিণী, ১০২) কমলা, ১০৩) সর্বপ্রদায়িনী, ১০৪) পেঁচকবাহিণী, ১০৫) মহালক্ষ্মী, ১০৬) ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাত্মিকা , ১০৭) ত্রিকালজ্ঞানসম্পূর্ণা, ১০৮) ভুবনমোহিনী।
প্রাতঃকালে মা লক্ষ্মীর নিম্নলিখিত নাম উচ্চারনে দারিদ্রতা নিবারণ হয়ঃ-

লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা ।।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিনী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।
এতানি পুণ্যনামানি প্রাতরুত্থায় যঃ পঠেৎ ।
মহাশ্রিয়মবাপ্নোতি ধনধান্যমকল্মষম্ ।।
বঙ্গানুবাদ- শ্রী, কমলা বিদ্যা, মাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া , সতী, পদ্মালয়া, পদ্মহস্তা, পদ্মাক্ষী , পদ্মসুন্দরী, ভূতগণের ঈশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগতা , শুভা, বিষ্ণুপত্নী, ক্ষীরোদতনয়া, ক্ষমাস্বরূপা, অনন্তলোকলাভা , ভূলীলা, সুখপ্রদা, রুক্মিনী, সীতা, বেদবতী- দেবী লক্ষ্মীর এসকল নাম। প্রাতে উত্থান কালে যিনি দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন, তিনি বিপুল ঐশ্বর্য ও নিস্পাপ ধনধান্য প্রাপ্ত হন ।

রোগ-ব্যাধি দূরে পালায়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করলে গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ছোট-বড় সব রোগই দূরে পালায়। শুধু তাই নয় শরীরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই তো মহিলাদের এই মন্ত্রটি নিয়ম করে প্রতি শুক্রবার পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

৩. ব্যবসায় চরম উন্নতির স্বাদ মেলে:
আপনি কি কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত? তাহলে বন্ধু প্রতি শুক্রবার লক্ষ্মী মহা মন্ত্রটি পাঠ করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রচি পাঠ করা শুরু করলে গৃহস্থে মায়ের প্রবেশ ঘটে। ফলে ব্যবসায় একের পর এক সফলতা লাভের সম্ভাবনা যায় বেড়ে। সেই সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যা মিটে যেতেও সময় লাগে না।

হে মাতালক্ষ্মী তুমি সকলের ঘরে অচলা হয়ে থেকো…
জয় মা লক্ষ্মী
জয় লক্ষ্মী নারায়ণের জয়
সবাইকে জানার জন্য শেয়ার করুন।

শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক প্রাচীন বইয়ে এমন অনেক মন্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাদেরকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবিকই জীবনের ছবিটা বদলে ফেলা সম্ভব। কারণ এই সব মন্ত্রের শরীরে এত মাত্রায় পজেটিভ শক্তি মজুত থাকে যে সেগুলি পাঠ করা মাত্র সেই শক্তি আমাদের গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায়। ফলে একাধিক উপকার মিলতে শুরু করে। যেমন লক্ষ্মী মহা মন্ত্রের কথাই ধরুন না। সিংহভাগেরই আজানা এই মন্ত্রটি পাঠ করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভের পথ প্রশস্ত হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতির স্বাদ পেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি আরও নানা সব উপকার পাওয়া যায়, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে সে বিষয়ে যাওয়ার আগে একটা কথা বলতে চাই বন্ধু, লক্ষ জন্ম পেরিয়ে পাওয়া এই মানব জীবনকে যদি বাস্তবিকই সার্থক বানাতে হয়, তাহলে এই লেখায় চোখ রাখতে ভুলবেন না যেন। কারণ লেখাটি পড়া মাত্র আপনার জীবনের ছবিটা যে বদলে যাবে সে বিষয়ে কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই!

“ওম হ্রিম শ্রিম লক্ষ্মী ভায়ো নমহঃ”, এই মন্ত্রটিকেই লক্ষ্মী মহা মন্ত্র বলা হয়ে থাকে। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতি শুক্রবার মায়ের পুজো করার পর এক মনে যদি এই মন্ত্রটি ১০৮ বার পাঠ করা যায়, তাহলে মায়ের নেক দৃষ্টি পরে তার ভক্তের উপর। ফলে একাধিক উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যেমন ধরুন…

কর্মক্ষেত্রে পদন্নতি ঘটে:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! এই মন্ত্রটি এতটাই শক্তিশালী যে নিয়মিত পাঠ করা শুরু করলে কর্মক্ষেত্রে চটজলদি প্রমোশন পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটতেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু ৩০ পেরতে না পেরতেই যদি বাড়ি,গাড়ি এবং মোটা মাইনের মালিক হয়ে উঠতে চান, তাহলে শুধু শুক্রবার নয়, প্রতিদিন লক্ষ্মী মহা মন্ত্রটি জপ করতে ভুলবেন না যেন!

খারাপ শক্তির প্রকোপ কমে যায়:
১.অনেক অনেক টাকার মলিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয়:
মা লক্ষ্মী হলেন অর্থ এবং সমৃদ্ধির দেবী। তাই তো মাকে একবার প্রসন্ন করতে পারলে বড়লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করলে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। তাই তো বলি বন্ধু, জীবনের ক্যানভাসটিকে যদি নানা রঙে রঙিয়ে তোলার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই মন্ত্রটি জপ করতে ভুলবেন না যেন!

বিশ্বাস করুন বা না করুন একথা মানতেই হবে যে আমাদের আশেপাশে পজেটিভ শক্তি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নেগেটিভ বা খারাপ শক্তিও। আর কোনওভাবে যদি এই খারাপ শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ। কারণ সেক্ষেত্রে নানাবিধ খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন বাড়ে, তেমনি হঠাৎ করে কোনও দুর্ঘটনার কবলে পরার সম্ভাবনাও থাকে। তাই তো বলি বন্ধু নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নানাবিধ বিপদ থেকে বাঁচাতে শুক্রবার করে এই মন্ত্রটি জপ করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি জপ করা মাত্র বাড়ির প্রতিটি অংশে পজেটিভ শক্তির মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে খারাপ শক্তি ঘর ছাড়া হতে সময় লাগে না।

মনের যে কোনও ইচ্ছা পূরণ হয়:
গৃহস্থে যখন পজেটিভ শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করলে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর এমনটা যখন হয়, তখন মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে।

পড়াশোনায় উন্নতি ঘটে:
শাস্ত্র মতে প্রতিদিন মায়ের পুজো করার পাশাপাশি লক্ষ্মী মহা মন্ত্র পাঠ করলে বাচ্চাদের মনোযোগ ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে পড়াশোনায় উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে পরিবারের বাকি সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি লাভের পথও প্রশস্ত হয়।

প্রসঙ্গত, যারা ব্যবসা করেন, তারা যদি তাদের অফিসে মায়ের মূর্তি রাখতে পারেন, তাহলে ব্যবসায় উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।

Back to top button