আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন
ঢাকা, ১৬ নভেম্বর – ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রবক্তা চিত্রনায়ক-সমাজসেবক একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন যাবত সমাজ কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখে আসার জন্য ‘ট্র্যাব’ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হতে যাচ্ছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য ‘টেলিভিশন রিপোর্টাস ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব)’ সম্মাননায় ভূষিত হবেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি সালাম মাহমুদ।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন,‘সত্যি বলতে সম্মাননা পাবার আশায় কিন্তু আমি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করছি না। আমি মনে করি একজন নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই আমি কাজ করে যাই। আজ দীর্ঘদিন পরে হলেও নিরাপদ সড়ক চাই জাতীয় ভাবে উদযাপিত হচ্ছে। এটা আমার অনেকদিনের শ্রমের অর্জন। তবে পুরস্কার প্রাপ্তির কথা আসলে মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কারণ, আমার এমন অনেক সিনেমা রয়েছে যেসব সিনেমা দিয়ে আমার বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার শতভাগ সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু আমি পাই নি। কেন পাই নি তাও জানি না।
শ্রদ্ধেয় সুভাষ দত্তের বসুন্ধরা’ সিনেমাটি যখন মুক্তি পেলো-সবাই আমাকে সত্যিকারের পেইন্টারই মনে করেছিলেন। কিন্তু আমাকে পুরস্কার দেয়া হয়নি-অল্প বয়সে পুরস্কার পেয়ে আমার ভাব বেড়ে যেতে পারে বিধায়, বিষয়টি আজও আমার কাছে বোধগম্য নয়। যাই হোক, সালামকে আমি অনেক স্নেহ করি ভালোবাসি। আমাকে স্বশরীরে এসে নিমন্ত্রণ দিয়ে গেছেন, আমি চেষ্টা করবো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করার-ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন এরইমধ্যে শেষ করেছেন ‘নয়া দরবেশ’ নামের একটি কাজ। এটি নির্মাণ করেছেন শাহ আলম নূর। এতে কাজ করে ভীষণ তৃপ্ত তিনি। তিনি জানান, পাবনার পাড় ঘোড়াদহ’তে জাহানারা কাঞ্চন উচ্চ বিদ্যালয়টিকে তিনি কলেজে রূপান্তর করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানকার আরো একটি মজার তথ্যও তিনি জানিয়েছেন। আর তা হলো সেই উচ্চ বিদ্যালয়’কে ঘিরে একটি বাজারেরও সৃষ্টি হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কাঞ্চন’ বাজার। বিষয়টি নিয়ে ভীষণ আবেগাপ্লুত কাঞ্চন।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিষেক ঘটে ১৯৭৭ সালের ২৬ মার্চ সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে ববিতার বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর একই পরিচালকের ‘ডুমুরের ফুল’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। শাবানার বিপরীতে একটি ছবিতেই তিনি অভিনয় করেছেন। আজিজুর রহমান বুলি পরিচালিত সে ছবির নাম ‘শেষ উত্তর’। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন জুটি হয়ে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন চম্পা, দিতি ও অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে। বিশেষত অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোছনা’তো দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী চলচ্চিত্র।
দিতির সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম অভিনয় করেন প্রয়াত পরিচালক মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘স্বর্গ নরক’ ছবিতে। চম্পার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্রে। এই পর্যন্ত তিনি তিন’শ ত্রিশটিরও অধিক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।
আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শাস্তি’ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে একই পুরস্কার দিলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেন। ইলিয়াস কা নের প্রথম একক প্রযোজিত চলচ্চিত্র ‘বাদশা ভাই’। তিনি দুটি ছবি নির্দেশনা দিয়েছেন। ছবি দুটি হচ্ছে ‘বাবা আমার বাবা’ (মুক্তি ২০০৮ সাল) ও ‘মায়ের স্বপ্ন’ ‘মুক্তি ২০১০ সাল)।
এন এইচ, ১৬ নভেম্বর