ব্যক্তিত্ব

যে সাতটি কারণে আপনি হয়ে উঠছেন অন্যের অপছন্দের ব্যক্তিত্ব!

 

মানুষের কাছে পছন্দের ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি অপছন্দের হয়ে ওঠা কিন্তু খুব সহজ। সামান্য কোন ব্যবহারেই আপনি কারো অপছন্দের, এমনকি ঘৃণার পাত্রও হয়ে যেতে পারেন। খুঁটিনাটি যে কোন বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কারো কাছে প্রশংসনীয় কিংবা নিন্দনীয় হওয়ার জন্য। আপনার নাম থেকে শুরু করে আপনি কীভাবে হাঁটেন, সেটিও কিন্তু সকলে লক্ষ্য করে। সুতরাং জীবনের পথে পা ফেলার সময়েই খুব সচেতনভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।

আজকের ফিচারে আমরা কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করবো যেগুলো আপনাকে প্রতিনিয়ত মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও নিন্দার পাত্র করে তুলছে। চলুন তবে জেনে আসা যাক-

ফেসবুকে অতিরিক্ত ছবি শেয়ার করা
আপনি যদি এমন মানুষ হয়ে থাকেন যিনি মধুচন্দ্রিমার ছবি থেকে শুরু করে পুত্রের গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে ভালোবাসেন, তবে আপনার একটু ক্ষান্ত দেওয়ার সময় হয়েছে এখন।

২০১৩ সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ফেসবুকে অতিরিক্ত ছবি শেয়ার করলে আপনার সত্যিকারের সম্পর্কগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেখা যায় যে, বন্ধুদের বেশি ছবি পোস্ট করলে আত্মীয়েরা মনঃক্ষুণ্ণ হন আবার আত্মীয়ের বেশি ছবি পোস্ট করলে বন্ধুরা বিরক্ত হন।

বেন মার্ডার, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অধ্যাপক বলেছেন, কোন কিছু শেয়ার করার আগে বেশ কিছুক্ষণ ভাবুন যে অন্যেরা কীভাবে দেখবে এটি। সম্পর্ক যেমন শেয়ার করলে উন্নত হয় তেমনি উল্টোটাও কিন্তু হতে পারে।

ফেসবুকে খুব বেশি কিংবা খুব কম বন্ধু থাকা
­­২০০৮ সালে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি জরিপে গবেষকেরা কয়েকজন ছাত্রকে ফেসবুক ঘাঁটতে দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন যে কয়টি প্রোফাইল মালিককে তারা ভালো মতন চেনেন? ফলাফলে এটি প্রমাণিত হয় যে, তারা এমন মানুষকে পছন্দ করলেন যার অন্তত তিনশ বন্ধু আছে ফেসবুকে। একশজন কিংবা এর চেয়ে কম যাদের বন্ধু আছে, তাদের তারা যেন একদম পাত্তা দিলেন না।

২০১৪ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, ম্যাচিউরড ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গড় বন্ধুর সংখ্যা ৩৩৮ জন। খুব বেশি কিংবা খুব কম বন্ধু আছে এমন ব্যবহারকারীদের খুব একটা পছন্দ করেন না সাধারণ জনগণ!

সম্পর্কের শুরুতেই খুব ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করে ফেলা
সাধারণত, আত্মবিশ্বাসী মানুষদের পছন্দ করেন সবাই। ম্যাচিউরড বা অ্যাডাল্ট অবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করাই হলো বন্ধু বা সঙ্গী পাবার সবচেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু মনোবিশেষজ্ঞগণ বলছেন, সম্পর্কের শুরুতেই একেবারে গোপন কিছু শেয়ার করে ফেলা খুব বোকামির কাজ। সময় নিয়ে কাউকে জেনে অতঃপর নিজের কথাগুলো প্রকাশ করা উচিৎ।

২০১৩ সালে ইলিনইস স্টেট ইউনিভার্সিটির সুসান স্প্রেচারের একটি গবেষণায় জানা যায় যে সঙ্গীর সঙ্গে শখ, সুখকর স্মৃতি এসব নিয়ে কথা বললে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ে।

খুব কাছ থেকে তোলা কোন ছবি আপলোড করলে
লিংকড ইনে হোক কিংবা ফেসবুকে, খুব কাছ থেকে তোলা কোন ছবি পোস্ট না করাই ভালো। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির একটি গবেষণা প্রমাণ করে যে, অন্তত ১৩৫ সেন্টিমিটার কিংবা ৪.৫ ফিট দুরত্বে থেকে ছবি তোলা উচিৎ। সেগুলো যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়।

আবেগ লুকিয়ে রাখা
বিজ্ঞানীরা বলেন, আপন অনুভূতিগুলো ত্যাগের মধ্য দিয়ে নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখা বড্ড বোকামি। সঠিক ও যোগ্য মানুষের কাছে পরিপূর্ণরুপে অনুভূতি শেয়ার করুন। শান্তিতে থাকবেন আপনি। আবেগ লুকিয়ে নিজেকে দুর্বোধ্য করে রাখলে ক্রমশ অন্যের অপছন্দের মানুষ হয়ে উঠবেন।

সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা
পৃথিবীতে সকল মানুষের সঙ্গে মতামত মিলবে না আপনার, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং সে চেষ্টা না করে মাঝে মধ্যে ‘না’ বলতে শিখুন। সকলের সঙ্গেই একইভাবে হেসে কথা বললে, আপনার প্রতারিত হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। জানেন তো? আর এমন মানুষকে অন্যরাও পছন্দ করেন না, সুতরাং এবার সময় হয়েছে সত্যিকার অর্থে নিজের ভালো বোঝার।

খুব সহজেই ভড়কে যাওয়া
আপনি যে ভড়কে যাচ্ছেন কিংবা হতাশ হচ্ছেন এটি অন্য কাউকে বুঝতে দেওয়ার কোন দরকার নেই। এতে করে অপরপক্ষ আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অন্য রকম একটি ধারণা পোষণ করবে।

২০১৩ সালে মনেল কেমিক্যাল সেন্সেস সেন্টারের গবেষকেরা অংসগ্রহণকারীদের বিভিন্ন কর্মজীবি নারীদের ভিডিও দেখাচ্ছিলেন। যেমন- অফিসে কাজ করছে, সন্তানের প্রতিপালন করছে ইত্যাদি। ভিডিওগুলো দেখার সময় তারা তিন ধরনের ঘামের অনুভূতি পায়। ব্যায়াম করার সময়, কষ্টের কোন পরিস্থিতি পার করার সময় এবং সেখান থেকে উদ্ধার সময়।

অতঃপর অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হলো কোন নারী সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী। তারা তৃতীয় অংশের নারীদেরই প্রাধান্য দিলো যারা কষ্টকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।

না হাসা
ধরুন আপনি বেশ জনকোলাহলপূর্ণ কোন জায়গায় গিয়েছেন যেখানে আপনি কাউকে চেনেন না, এমন জায়গায় হাসিমুখ ধরে রাখা বেশ কষ্টকর, কিন্তু তবুও একটু চেষ্টা করুন। সাম্প্রতিককালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ডুইসবার্গ এসেন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন, যে সকল শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথোপকথন কিংবা যোগাযোগ করে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয়।

আরেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রথম দেখায় কারো সঙ্গে যদি আপনি হাসিমুখে কথা বলেন, আপনাকে তার অনেকদিন মনে থাকবে।

এম ইউ

Back to top button