আলোচিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক ‘পলাতক’ আব্দুল আজিজ এখন বাংলাদেশে
ঢাকা, ১২ নভেম্বর – ২০১৮ সালের শেষদিকে জনতা ব্যাংকের প্রায় ৩,৮০০ কোটি টাকা লোপাট করে গা ঢাকা দেন আলোচিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক আব্দুল আজিজ। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন আজিজ এবং তার বড়ভাই আব্দুল কাদেরসহ তাদের মায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ঋণ খেলাপি এবং অর্থ পাচারের মামলা দায়ের করলে আব্দুল কাদের গ্রেফতার হন। আজিজ ও কাদের স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের মা গা ঢাকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান। আর আব্দুল আজিজ কিছুকাল কলকাতায় নায়ক দেব এবং এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকার শেল্টারে অবস্থান করে সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। পুলিশের খাতায় আব্দুল আজিজ, তার মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা মোস্ট ওয়ান্টেড। অথচ তিনি গত কয়েকমাস আগেই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারই মোহাম্মদপুর এলাকার বাসভবনের পাঁচ তলায় নির্মিত একটা কামরায় বসবাস করছেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে সারাদিন ওই কামরাতেই আব্দুল আজিজ জাজ মাল্টিমিডিয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয় করা কিছু নায়িকাকে নিয়ে সময় কাটান আর রাতের অন্ধকারে গাড়ীতে চড়ে বের হন নিষিদ্ধ নেশায়। প্রায় রাতেই তিনি এই নায়িকা ওই নায়িকার বাসায় গিয়ে মদ আর নাচের আড্ডা জমান। দুহাতে ওড়ান বিপুল অর্থ।
মাথায় গ্রেফতারের হুলিয়া নিয়েই কিভাবে এখন ব্যাংক লুটেরা ঢাকায় আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে, আব্দুল আজিজের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করা এক চলচ্চিত্র কর্মী বলেন, “উনি রাঘব বোয়াল শ্রেণীর মানুষ। বিপুল টাকা আছে। আরো আছে সুন্দরী নারীদের বাহিনী। এগুলো প্রয়োগ করলে তার কি আর গ্রেফতার হওয়ার চিন্তা থাকে?”
উল্লেখ্য ২০১২ সাল থেকে একটানা প্রায় ছয় বছর আব্দুল আজিজ তার মালিকানাধীন জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে ভারতের সাথে কথিত যৌথ উদ্যোগের অজুহাতে কয়েক ডজন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলাদেশ থেকে কোটিকোটি টাকা পাচার করেছেন। তিনি ভারতে অফিসও খুলেছিলেন জাজ মাল্টিমিডিয়া ইন্ডিয়া এই নামে। দেখাবে তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন কলকাতায় একজন অভিনেতা আর তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রভাবশালী নেতা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে আব্দুল আজিজ পলাতক হওয়ার পর তার জাজ মাল্টিমিডিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে। এই ফাঁকে গজিয়ে ওঠে আরেক প্রযোজনা সংস্থা যারা এরই মাঝে কলকাতার নায়ক দেব-কে দিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি কলকাতায় অফিসও খুলে বসেছে। আলোচিত এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে যুবলীগের ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা গ্রেফতার হলে তিনিও ভারতে পালিয়ে যান। পরে আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেত্রীর নাম ব্যবহার করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবী, এই প্রযোজনা সংস্থাটি বিদেশে বিপুল অংকের অর্থ পাচারের পাশাপাশি কলকাতার সিনেমাতেও টাকা খাটাচ্ছে। প্রকাশ্যেই কলকাতার দেবকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ কিংবা অফিস খোলার বিষয়ে এরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনোই অনুমতি নেয়নি। বরং সম্প্রতি কলকাতার আরেক নায়িকাকে ঢাকা নিয়ে আসে অন্য আরেকটা চলচ্চিত্রে কাজ করাতে। ওই নায়িকাকেও দেয়া হয়েছে পনেরো লাখ টাকা। অথচ এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, কলকাতার নায়ক দেব প্রত্যেকটা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্যে পারিশ্রমিক নেন ভারতীয় এক কোটি রূপি, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় দেড় কোটি। এই বিপুল অংকের অর্থ কিভাবে ভারতে যাচ্ছে এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কখনোই তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি।
এন এইচ, ১২ নভেম্বর