জাতীয়

সাবেক বিচাপতি এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড

ঢাকা, ০৯ নভেম্বর – অর্থ আত্মসাতসহ দুই মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় ১৮২ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় মামলার সাতজন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের প্রমাণ মেলায় তাকে এ সাজা দিয়েছেন আদালত। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মামলার অন্যতম আসামি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতিকে (বাবুল চিশতি) কাশিমপুর কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। এছাড়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামিনে থাকা ছয় আসামি।

এর আগে আলোচিত এই মামলার দুই দফা রায় ঘোষণা পেছানো হয়। ৫ অক্টোবর বিচারক অসুস্থ থাকায় এবং ২১ অক্টোবর বিচারক রায় প্রস্তুত করতে না পারায় তা পেছানো হয়।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ২৪ আগস্ট। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

শুনানিতে আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীম ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন এবং ব্যাংকটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা হাজির হন।

আর ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার আসামি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সান্ত্রী রায় ওরফে সিমি ও তার স্বামী রণজিৎ চন্দ্র সাহা পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ১০ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট থেকে মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার নামে মঞ্জুরকৃত ঋণের চার কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সুপ্রিম কোর্ট সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে জমা হয়। সঞ্চয়ী হিসাব নং: ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫-এ জমা হওয়ার পর ওই টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর করে উত্তোলন করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করতে এ ধরনের অপরাধ করেন।

তারা অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে চার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়ের নামীয় হিসাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। পরে সেই অর্থ নিজেদের ভোগদখলে রেখে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস অবস্থান গোপন বা এর ছদ্মাবরণে পাচার করেছেন মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়। যা দণ্ড বিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি এসকে সিনহা। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রমেই সরকারের সঙ্গে বিচারপতি সিনহার দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। নানা নাটকীয়তার পর ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। পরে আর দেশে ফিরেননি, সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০৯ নভেম্বর

Back to top button