জাতীয়

এবার হবে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব

শফিকুল ইসলাম

ঢাকা, ০৫ নভেম্বর – জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর— দুটো মিলিয়ে এবারের বিজয় দিবসটি একেবারেই আলাদা। এ কারণে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব উদযাপন করতে চায় সরকার। তাই মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির দিন তথা ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হবে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব।

এবারের অনুষ্ঠানটিকে বর্ণাঢ্য ও মনোমুগ্ধ করার সর্বোচ্চ প্রয়াস থাকবে সরকারের। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে এ আয়োজনের প্রস্তুতি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় ও শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এ কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ উপলক্ষে কয়েকটি উপকমিটিও করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় ও শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এ কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ উপলক্ষে কয়েকটি উপকমিটিও করা হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে সরকারের থাকছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মূল অনুষ্ঠান— বিশেষ করে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণিল কুচকাওয়াজ হবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে। অংশ নেবে নেপাল, ভারত, রাশিয়া ও মেক্সিকো। বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে ভারত ও রাশিয়ার ওয়ার ভেটেরানদের (যুদ্ধজয়ী প্রবীণ যোদ্ধা) সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জানা গেছে, এবার তেজগাঁও পুরান বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হবে। একইসঙ্গে হবে বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাই-পাস্ট ও অ্যারোবেটিক এয়ার শো। থাকবে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে রজ্জু বেয়ে অবতরণ, প্যারাশ্যুট জাম্প। চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন রাষ্ট্রপতি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। এজন্য দিনটিকে মৈত্রী দিবস হিসেবেও উদযাপন করবে দুই দেশ। পৃথিবীর ১৮টি দেশের রাজধানীতে যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। ১৮টি রাজধানীর তালিকায় আছে—জাকার্তা, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, ক্যানবেরা, টোকিও, রিয়াদ, আবুধাবি, কাতার, মস্কো, লন্ডন, ব্রাসেলস, প্যারিস, জেনেভা, প্রিটোরিয়া, কায়রো, ওয়াশিংটন ও অটোয়া।

সূত্র জানিয়েছে, এবারের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে ঢাকা আসবে ভুটান, ভারত, রাশিয়া ও মেক্সিকোর টিম। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ সহায়তাকারী দেশ হিসেবে ভারত, রাশিয়া এবং বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ হিসেবে ভুটান এবং মেক্সিকোকে এ ঐতিহাসিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দ ও ভুটানের সাবেক (চতুর্থ) রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুককে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে অতিথিরা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করবেন। সূত্র জানিয়েছে, দুজনেই বাংলাদেশে আসবেন। দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, এবারের বিজয়োৎসব উদযাপনে ৭টি উপকমিটি করা হয়েছে। এগুলো হলো— মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে বিজয় দিবস উদযাপন স্টিয়ারিং উপকমিটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে আমন্ত্রণ ও সংবর্ধনা উপকমিটি, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসিকে আহ্বায়ক করে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ ব্যবস্থাপনা উপকমিটি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে আলোচনা ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ-সংক্রান্ত উপকমিটি, সেনাবাহিনীর সাভারের ৯ পদাতিক ডিভিশন জিওসিকে (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) আহ্বায়ক করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সশস্ত্র অভিবাদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ উপকমিটি, যান্ত্রিক বহর প্রদর্শন সংক্রান্ত মূল্যায়ন ও স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত উপকমিটি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে প্রধান করে নিরাপত্তা ট্রাফিক ও পুলিশের ব্যবস্থাপনা উপকমিটি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর উপলক্ষে দেশটির সরকারের আমন্ত্রণে ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৩৯ সদস্যের একটি কন্টিনজেন্ট উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছিল। এ কারণে বাংলাদেশের বিজয় উৎসবেও আমন্ত্রণ জানানো হবে মেক্সিকোকে।

সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে এবার মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনী হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আবারও জানিয়েছেন, ১০০ বছরের বঙ্গবন্ধু, ৫০ বছরের বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন হবে আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ। আমাদের দিক থেকে সে চেষ্টাই থাকবে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি সফল। তাই আয়োজিত অনুষ্ঠানে করোনা কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে আশা করছি। এ বছর অনুষ্ঠানের কলেবর বাড়ানো ও ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এইচ, ০৫ নভেম্বর

Back to top button