সব হারানোর পর বাংলাদেশের বোধোদয়
দুবাই, ০৪ নভেম্বর – বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখার আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিল বাংলাদেশ। তা যে ফাঁপা ছিল বোঝা গেছে অল্প কদিনের ব্যবধানেই। মাসকটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই দেখতে হয়েছে মুদ্রার উল্টো পিঠ। টেনেটুনে সুপার টুয়েলভে উঠেছে, কিন্তু এখানে শুধু সর্ষে ফুলই দেখেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-সাকিব আল হাসানরা। কোনো ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেও পায়নি জয়, আবার কোনো ম্যাচে পাত্তাই পায়নি।
অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। সবকিছু মিলিয়ে টি-টোয়েন্টির সোনালি সময় পার করছিল লাল সবুজের দল। আর এসব যে বিশ্বমঞ্চে লড়াইয়ের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়, তা এখন টের পাচ্ছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। বুঝতে পেরেছে কোথায় ঘাটতি আর কোথায় ভুল। ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
সুপার টুয়েলভে টানা চার ম্যাচ হেরে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বকাপের আগে সেমিফাইনালের প্রত্যাশা করা দল এখন শুধু চাইছে শেষ ম্যাচটা জিতে মানসিকভাবে চাঙ্গা হতে। এর আগে দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেছিলেন। এবার স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ একই সুরে তাল মেলান। দুজনেরই চাওয়া এক বিন্দুতে গিয়ে ঠেকেছে। সেটি হলো ভালো উইকেট, স্পোর্টিং উইকেট, মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো স্পিন স্বর্গ নয়। বাশার ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত এমন উইকেট চেয়েছেন, আর হেরাথ ঘরের মাঠে আসন্ন পাকিস্তান সিরিজেই প্রত্যাশা করেছেন।
পাকিস্তান সিরিজের উইকেট নিয়ে এক প্রশ্নে হেরাথ বলেন, ‘কেমন উইকেটে খেলা হবে এটা নির্ভর করছে, আমরা কোন মাঠে খেলছি এর ওপর। ভালো পিচে হবে বলেই আশা করি, যেখানে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের (ভালো করার) সুযোগ থাকবে। সেদিক থেকে দেশের মাটিতে আমরা ভালো উইকেট আশা করছি।’
এর আগে হতাশা প্রকাশ করে বাশার বলেছেন, ‘ওয়ানডেতে আমরা ভালো। টেস্টে উত্থান-পতন আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে পারছি না। অবশ্যই শেষ তিন সিরিজের হিসেবে আমাদের এই বিশ্বকাপে অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু আমরা তা অর্জন করতে পারিনি। তবে এখন আমাদের নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। সঠিক উইকেটে (স্পোর্টিং উইকেট) খেলতে হবে, তাহলে অবশ্যই পরের বিশ্বকাপে ভালো করা সম্ভব।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জেতে, আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-২ এ। এই দুটি সিরিজে মিরপুর শের-ই-বাংলায় স্পিনারদের রাজত্বে অসহায় ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। তখনই মিরপুরের মন্থর ও স্পিন বান্ধব উইকেট নিয়ে কথা উঠেছিল। এমন উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি কতটা ফলপ্রসূ হবে? ঠিক তাই হলো, আসল লড়াইয়ে এসে মাহমুদউল্লাহরা যেন দেখেছেন মুদ্রার উল্টোপিঠ।
ব্যাটিংবান্ধব উইকেটের কথা জানিয়ে বাশার বলেছেন, ‘আমাদের টি-টোয়েন্টির উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং উইকেট তৈরি করা। আমরা যখন ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে খেলি তখন একই উইকেটে বারবার খেলার কারণে ভালো উইকেট পাচ্ছি না। যে কারণে পাওয়ার হিটার তৈরি হচ্ছে না। এদিকে যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে যেন পরবর্তীতে আমরা ব্যাটিং উইকেটে খেলতে পারি, ভালো উইকেটে খেলতে পারি।’
বাশার-হেরাথ দুজনেই টিম ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন দল নির্বাচনের দায়িত্বে, আরেকজন সেই দলকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করার দায়িত্বে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি কিংবা অসহায় আত্মসমর্পণ খুব কাছে থেকে দেখেছেন দুজনেই। তাই এখন তাদের কণ্ঠে ঝরছে দেশের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটের আকুতি। সেই আকুতি যাবে তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তাদের কানে?
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০৪ নভেম্বর