লালমনিরহাট, ২৯ অক্টোবর – বর্ষার বিদায় ও শীতের আগমনের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে আসা বন্যায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর সঠিক হিসাব বের করা সম্ভব না হলেও বিভিন্ন দপ্তরের জরিপ সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে ধারনা করা হচ্ছে, এ বন্যায় ক্ষতির পরিমান ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায়। ওই উপজেলার গডিমারী ইউনিয়নের অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। অধিকাংশ জমির ফসল পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন করতে কৃষি ও কৃষককে ঘিরে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করবে- এমনটি দাবি তুলেছেন তিস্তাপাড়ের লোকজন।
কৃষি বিভাগ বলছে, লালমনিরহাটে হঠাৎ করে আসা এই বন্যায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
এলজিইডি বলছে, ৯০ কিলোমিটার পাকা রাস্তাসহ বেশ কয়েকটি সেতু নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান ৩৫ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়নের বোর্ডের দাবি, এ বন্যায় তাদের ক্ষতির পরিমান ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া মৎস বিভাগের ৪ কোটি আর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, এ বন্যায় ক্ষতির পরিমান ২শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহটে হঠাৎ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। হাজার হাজার হেক্টর জমির পাকা আমন ধান, আলু, ভুট্টা ও পেঁয়াজ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ৬ বিঘা জমির পাকা ধান ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ছোট ভাইয়ের ১১ বিঘা জমির ভুট্টা ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির একজনের ২৩ বস্তা সার বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোর কাচা-পাকা সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিস্তা তীরবর্তী লোকজনের চলাচল চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
মধ্য গড্ডিমারী এলাকার করিমুল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সড়ক ভেঙে যাওয়ায় মালামাল পারাপারে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, এ বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। তারপরও কৃষকের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করতে ইতোমধ্যে জরিপ শুরু হয়েছে। তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে কৃষি বিভাগ।
এবারের বন্যায় অপূরণীয় ক্ষতি কথা শিকার করে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। তিনি বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ইতোমধ্যে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এস, ২৯ অক্টোবর