ক্রিকেট

‘চট্টগ্রাম-অ্যাডিলেড’ রূপকথার হাতছানি

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ

আবুধাবি, ২৭ অক্টোবর – টানটান উত্তেজনা, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, রোমাঞ্চকর অপেক্ষা। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ১২ বলে প্রয়োজন ১৬ রান। বোলিংয়ে আসলেন পেসার রুবেল হোসেন। ব্যাটিং প্রান্তে স্টুয়াট ব্রড। রুবেলের ১৪২ কিলোমিটার গতির লেন্থ বল ভেঙে দেয় ব্রডের উইকেট। উল্লাসে ফেটে পড়েন এই ডানহাতি পেসার। ক্রিজে এসে অ্যান্ডারসন। কোনো মতে এক বল খেললেন, পরের বলেই বোল্ড। রুবেল ছুটছেন, তার পিছে যেনো ছুটছে পুরো বাংলাদেশ।

অ্যাডিলেডে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিতে যায় ১৫ রানে। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় অ্যাডিলেড রূপকথা। কাকতালীয়ভাবে চলমান আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন রাতে বাংলাদেশ স্কোয়াডে ঢুকলেন পেসার রুবেল হোসেন। সাইফউদ্দিনের ব্যাক ইনজুরি রুবেলের ভাগ্য খুলে দেয়। তারও চার বছর ঘরের মাঠে যৌথ আয়োজনের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইমরুল কায়েস-শফিউল ইসলামদের কল্যাণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাসি মুখে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। সাগরিকার পাড় চট্টগ্রামে লেখা হয়েছে মহাকাব্য।

এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংলিশদের মুখোমুখি বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত দলটির বিপক্ষে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল। তার মধ্যে চট্টগ্রাম ও অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। অ্যারাবিয়ান সাগরের দ্বীপ আবু ধাবীতে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মহারণে নামবে দুই দল। এবার আবুধাবীতে চট্টগ্রাম-অ্যাডিলেড রূপকথার হাতছানি দিচ্ছে।

বাংলাদেশ বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের ভাষ্যতো এমনই, ‘অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি। বাছাইপর্বটা একটু স্নায়ুক্ষয়ী ছিল। সেখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু এখন আমরা বড় দলের মধ্যে এসেছি এবং আমাদের সবার পরিমাপ একরকম। তাই আমরা এখানে সংখ্যা বাড়াতে আসিনি অবশ্যই জিততে এসেছি।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দারুণ সূচনা করেছে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের বিপক্ষে উইন্ডিজরা মাত্র ১৪.২ ওভারে অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৫৫ রানে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা তৃতীয় সর্বনিম্ন। টার্গেটে খেলতে নেমে ৮.২ বলে ইংল্যান্ড লক্ষ্যে পৌঁছে যায়, তবে তারা হারিয়ে ফেলে ৪টি উইকেট। ২১ থেকে ৩৯ রানের ব্যবধানে এই চারটি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এখানেই সুযোগ দেখছেন গিবসন।

তিনি বলেন, ‘জানি ওরা আমাদের কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করাবে, পাশাপাশি আমাদের সুযোগও দেবে। যেমন উইন্ডিজের সঙ্গে ৫৫ রান তাড়া করতেই ওদের চার উইকেট গিয়েছিল। তো এই জিনিসগুলোকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিতে পারি। আমাদের নিজেদের সেরা খেলা খেলতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে ওরা আমাদের সুযোগ দেবে।’

এদিকে ইংলিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানও জস বাটলার জানিয়েছেন, তারা কোনো ভুল করতে চান না। তবে নিজেদের দিনে যে কেউই যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। ‘জয়ের মোমেন্টামটা মুখ্য। তাই নয়? এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেছে। এখন ভুল করার কোনো জায়গা নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য হলো যে কেউ নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে, এবং যে কোনো একজন ম্যাচ জিতিয়ে আসতে পারে।’

আবুধাবীতে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটি ছিল লো-স্কোরিং। আগে ব্যাটিং করে ১১৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। লক্ষ্যে পৌঁছাতে অস্ট্রেলিয়ার খেলতে হয় ১৯.৪ বল। উইকেট হারায় ৫টি। তুলোনামূলকভাবে এই মাঠের উইকেট একটু স্লো। তাই বাংলাদেশের উইকেটের সঙ্গে তুলোনা করেছেন বাটলার।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শক্তিশালী একটি দল। আমার মনে হয়, গত কয়েক বছরে বিশেষ করে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে ওদের অনেক সাফল্য রয়েছে। ঘরের মাঠে যেমন কন্ডিশন পায় অনেকটা তেমন কন্ডিশনেই খেলবে ওরা। আর ওদের দলে বেশ অভিজ্ঞ কয়েকজন খেলোয়াড় আছে।’

তবে তার ভয় সাকিব আল হাসান-নাসুম আহমেদদের বাঁহাতি স্পিনে, সঙ্গে আইপিএলের সতীর্থ মোস্তাফিজুর রহমানের কথাও উল্লেখ করেছেন। তবে বাংলাদেশকে ভাবতে হবে ইংলিশ স্পিন আক্রমণের দিকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মঈন আলী ও আদিল রশিদ নেন ৬ উইকেট। রশিদ ৪ উইকেট নেন মাত্র ২ রান দিয়ে।

সাইফউদ্দিন ছিটকে যাওয়াতে বাংলাদেশ দলের এক পরিবর্তন নিশ্চিত। মাঠে গিয়ে উইকেট দেখার পর বাকিটা ঠিক করবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। বাংলাদেশ যদি এক পেসার বাড়তি খেলায় তাহলে নাসুম আহমেদ কিংবা শেখ মেহেদীকে বসতে হতে পারে। যেহেতু সাইফউদ্দিনও নেই, মেহেদী থাকলে ব্যাটিংয়েও বাড়তি ভরসা পাওয়া যাবে, তাই হয়তো বাড়তি পেসার খেলালে নাসুমকেই বসতে হতে পারে।

আইপিএলে নিয়মিত খেলে এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে ভালোই জানেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। আর সঙ্গে পাওয়ার হিটিংয়ের অভিজ্ঞতাতো বেড়েছেই। সবকিছু মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা ইংলিশদের বিপক্ষে লড়াইটা খুব কঠিনই। কিন্তু নিজেদের দিনে যে বাংলাদেশ যে কোনো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দিতে পারে, সেটা ইংল্যান্ড থেকে আর বেশি কেইবা জানে?

আবু ধাবীতে কী লেখা হবে চট্টগ্রাম-অ্যাডিলেডের রূপকথার গল্প?

সূত্র : রাইজিংবিডি
এন এইচ, ২৭ অক্টোবর

Back to top button