জাতীয়

নুর-রেজার রাজনৈতিক দলের ৪ মূলনীতি, ২১ দফা

ঢাকা, ২৬ অক্টোবর – আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদ। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) পল্টনের জামান টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানে এই দল ঘোষণা করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

এ সময় দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান চার মূলনীতি ও ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। চার মূলনীতি হল- গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ।

আর প্রথম দফা কর্মসূচি হল- গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সব স্তরে সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করা। সুনির্দিষ্ট আইনের আলোকে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ন্যায়বিচার ও সুশাসন। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্স প্রবর্তন, নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে অসহযোগিতা, অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ নিষ্পত্তিত জন্য জনসমাজের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল গঠন করা।

তৃতীয় দফা হচ্ছে নারী অধিকার। সব বাধা দূর করে নারী প্রশ্নে সমতা প্রতিষ্ঠাকে অগ্রগণ্য লক্ষ্য ঘোষণা করে তা অর্জন করতে হবে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের বিলোপ সাধন করা। সংসদ, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ আসন নারীদের জন্য নির্দিষ্ট করা।

চতুর্থ দফা হচ্ছে- দেশে স্বাধীন বিকাশ অনুকূল, মর্যাদাপূর্ণ পরিস্থিতি ও ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। যাতে বিশাল সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর শাসনেও কেউ অস্বস্তি বোধ না করেন।

পঞ্চম দফা- শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিমূলক সরকার ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় গঠনতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করা। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন করা। রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকার প্রধান একই সঙ্গে দলীয় প্রধান হতে পারবেন না; কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি (দশ বছর) সরকার প্রধান কিংবা পাঁচ মেয়াদের অধিক (দশ বছর) দলীয় প্রধান বা অন্য কোন পদ বা একাধিক পদে মিলিত ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

ষষ্ঠ দফায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধকে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়া এবং দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বর্জনের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

সপ্তম দফায় গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- বাক, ব্যক্তি, চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্ত সাংবাদিকতার সুরক্ষায় ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের মতো সব দমন ও নিপীড়নমূলক গণবিরোধী আইন বাতিল করা। নাগরিকদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশে যে কোন নাগরিক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের জন্য আইনিসুরক্ষা এবং হয়রানি থেকে প্রতিকার নিশ্চিত করা।

অষ্টম দফায়- বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রদানকারী, দুর্নীতি ও ঋণের ফাঁদে জড়াবে না তেমন অর্থনৈতিক সহযোহিতাকারী, সামরিক জোটভুক্ত করতে চাপ দেবে না তেমন রাষ্ট্র, সমতা ও বহুমাত্রিক বহুদেশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার উদার নীতিতে সৎভাবে বিশ্বাসীদের সঙ্গে চলার বন্ধুত্বাভিমুখী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে।

নবম দফায় প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে বলা হয়েছে-নাগরিক ও মৌলিক অধিকারহীন স্বাধীনতা এবং জনগণের ভরসা হারানো সার্বভৌমত্বকে আপন মহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য স্বদেশপন্থী দৃঢ় এক প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করে, তা কঠোরভাবে পালন করা।

দশম দফায় কৃষির আধুনিকায়ন, একাদশ দফাতে শিল্প বিকাশ, দ্বাদশ দফাতে আর্থিক খাত ও উন্নয়ন প্রশাসন, ত্রয়োদশ দফায় শ্রম অধিকার, চতুর্দশ দফায় জনশক্তি রপ্তানি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে পঞ্চদশ দফায় বলা হয়েছে- দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা। এ লক্ষ্যে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া এবং তা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেওয়া। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের বেতন, ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে উপযুক্ত সম্মান নিশ্চিত করা। বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশন ও কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ বিতরণে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা। ঔপনিবেশিক কাঠামোর উচ্চতর শিক্ষা ও চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই বৈষম্য নিরসন করে তাদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করা। জাতীয় শিক্ষাবোর্ড নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার আয়োজন করবে, যাতে করে যে কেউ চাইলে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করে আবেদনের শর্ত পূরণ করতে পারে।

ষোড়শ দফায় সামাজিক নিরাপত্তা, ১৭তম দফায় পরিবহন ও যাতায়াত, ১৮তম দফায় জনস্বাস্থ্য সেবা, ১৯তম দফায় দখল ও দূষণ প্রতিরোধ, ২০তম দফায় খাদ্য ও পুষ্টি এবং সর্বশেষ ২১তম দফায় জ্বালানি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে বলা হয়েছে।

সূত্র: বাংলানিউজ
এম ইউ/২৬ অক্টোবর ২০২১

Back to top button