ক্রিকেট

ভারতকে টি-টোয়েন্টি শেখাল পাকিস্তান

দুবাই, ২৫ অক্টোবর – ভারত আর পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই যুদ্ধের দামামা, সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলাধুলা, সব কিছুতেই ভারতের দর্প। পাকিস্তানকে একপ্রকার অচ্ছুত বানিয়ে রেখেছে ভারত। রাজনৈতিক বৈরিতার দোহাই দিয়ে দুই দেশের ক্রিকেটও হয় না ৮ বছর হয়ে গেল। তবে আইসিসি এই সুযোগের ফায়দা নিয়ে ‘উপার্জন’ বাড়াতে সবসময় তৎপর। তাদের বৈশ্বিক ইভেন্ট এলেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কিভাবে ফেলা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা থাকে।

এবারো তার ব্যত্যয় হয়নি। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে তাদের লড়াই হচ্ছে জানা গেছে বেশ আগেভাগে। দুই বছরেরও বেশি সময় পর চিরশত্রু মাঠে, এই লড়াই দেখতে কতটা অধীর অপেক্ষায় ছিলেন ভক্ত-সমর্থকরা, তা বোঝা গেছে টিকিট অনলাইনে ছাড়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ফুরিয়ে যাওয়াতে।

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি আলোর শহর দুবাইতে। ঝকঝকে ভারত, আর ‘ওয়েস্টার্ন ব্লকের’ কাছে অবহেলিত পাকিস্তান। এই ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীতে বারবার জয়ী হিসেবে নাম উঠে আসছিল ভারতের। আর বলা হচ্ছিল, কেবল ভারত ভুল করলেই পাকিস্তান জিততে পারে।

তেমনটাই তো মনে করা উচিত। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে বিশ্বকাপে ১২ বারের দেখায় হেরেছে পাকিস্তান। তাছাড়া তাদের ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপের ঠিক আগে প্রায় এক মাস ধরে এই আমিরাতেই বিশ্বকাপের তিন ভেন্যুতে খেলেছেন আইপিএল। ১৫ জনের দলের প্রত্যেকে এই টুর্নামেন্টের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিয়েছেন সেরা প্রস্তুতি।

লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ঋষভ পান্ত, যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি ও বরুণ চক্রবর্ত্তীকে নিয়ে সাজনো এক ভয়ঙ্কর ব্যাটিং-বোলিং দল। তাছাড়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে দাপটের সঙ্গে।

অন্যদিকে পাকিস্তান! বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে তারা চেয়েছিল ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে। কত্ত আয়োজন, কত্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ভিভিআইপি মর্যাদা দিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে রেখে দিতে পেরেছে মাত্র কয়েক দিন। হুট করে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখিয়ে সিরিজ শুরুর দিন পাকিস্তান ছাড়ে নিউ জিল্যান্ড। তাদের দেখাদেখি ভিন্ন অযুহাতে ইংল্যান্ডও সফর বাতিলের আগাম ঘোষণী দেয়।

ব্যস, পাকিস্তানের মাথায় হাত! কিন্তু তারা দমে যায়নি। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে নীরবে প্রস্তুতি নিয়েছেন বাবর-রিজওয়ানরা। এতটা নীরবে যে কেউ তাদের খোঁজই নেয়নি। তবে প্রস্তুতি মন্দ যায়নি। বাবর ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ ম্যাচে ২৮৬ রান করেন। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ছিল দুটি হাফ সেঞ্চুরি। তারা দুজনই তো ভারতকে হারিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে।

আর বল হাতে শাহীন আফ্রিদি ছিলেন দুর্দান্ত, যেমনটা ছিলেন ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে। ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে তৃতীয় সেরা বোলার। তার উপরে থাকা ইমরান খান ও আর্শাদ ইকবাল তো খেলেছেন তার দ্বিগুণ ম্যাচ।

এমনই আকাশ-পাতাল তফাত নিয়ে ভারত আর পাকিস্তান পা রাখে সুপার টুয়েলভে। কিন্তু ফল কী হলো? যেভাবে ব্যাটে-বলে আর ম্যাচ পরিকল্পনায় নিখুঁত চেহারা দেখাল পাকিস্তান, তাতে বলা যায় ভারতকে টি-টোয়েন্টি শেখাল তারা।

প্রবল আত্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে জয় হলো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে প্রতিরোধ করার দৃঢ় মানসিকতার, যা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মনে তৈরি হতে শুরু করেছিল ঠিক আইপিএল শুরুর দুই দিন আগে থেকে। ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ জিল্যান্ড সিরিজ বাতিল করে। নতুন নির্বাচিত পিসিবি চেয়ারম্যান রমিজ রাজা তখনই তাদের আহ্বান জানান, এই উপেক্ষার কড়া জবাব বাবরদের দিতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে!

বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলে ভারতীয়রা। আর রাজনৈতিক ইস্যুতে সেখানে অংশ নিতে পারেন না পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে (পিএসএল) খেললেও তা আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকাররা উপেক্ষাই করে আসছে। তারাও জবাব পেলেন।

কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে আয়োজন করা আইপিএলেও প্রস্তুতি নিয়ে টিকতে পারল না ভারত। অন্যদিকে নজরের বাইরে থাকা টি-টোয়েন্টি কাপ খেলেই তাদের লাপাত্তা করে দিলো পাকিস্তান। কোহলিও তা স্বীকার করলেন, ‘তারা আমাদের পাত্তাই দিলো না। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা আমাদের কোনো পর্যায়ে ম্যাচে ফিরতে দেয়নি।’

আইপিএলের গত আসরের তৃতীয় শীর্ষ ব্যাটসম্যান রাহুল ৩ রান করেই আউট। তার আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক ও জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিতে যাওয়া রোহিত শূন্য রানেই বিদায়। চারশর বেশি রান করা কোহলি (৫৭) ও পান্ত (৩৯) যা করেছেন তা যথেষ্ট ছিল না। ৭ উইকেটে ১৫১ রানে তাদের থামার পর দায়িত্বটা ছিল আপিএলে দারুণ ফর্মে থাকা বুমরা (২১), শামি (১৯) ও চক্রবর্ত্তীর (১৮)। অথচ তারা পাত্তাই পেলেন না। বর ঘুরল না, গ্রিপও হলো না। এতদিনের প্রস্তুতি সব মাঠে মারা গেল। দর্প চূর্ণ হলো ভারতের। টি-টোয়েন্টি কিভাবে খেলতে হয়, সেই শিক্ষাটাও পেল তারা। এবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বদলা নেওয়ার পালা পাকিস্তানের।

সূত্র : রাইজিংবিডি
এন এইচ, ২৫ অক্টোবর

Back to top button