শিক্ষা

রবিতে প্রকাশ্যে দুই ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

সিরাজগঞ্জ, ২৪ অক্টোবর – সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ী বহিষ্কার না করায় দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে (রোববার) দুজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে মো. শামীম হোসেন বিষপানে এবং আবিদ হাসান হাতের রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরে আসার আহ্বান জানাতে সেখানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীসহ শিক্ষকদের একদল প্রতিনিধির উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটে।

বিষপানে অসুস্থ শামীমকে প্রথমে পিপিডি নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর শিক্ষার্থী আবিদ হাসানকে প্রাথমিক চিকিৎসার ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাচেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। এসময় সড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এর আগে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন। অপমান সহ্য করতে না পেরে পরের দিন নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের একটি অংশ বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবরোধ চলাকালীন সময়ে বক্তব্য সোহাগ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্বে থাকা মো. শামীম হোসেন আগে থেকেই বলেছিলেন, ‘‘ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করলে আমি আত্মহত্যা করব।’’ গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকার অতিথি ভবনের সিন্ডিকেট সভা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ী অব্যাহতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ও সভা মুলতবি করায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শামীম আত্মহত্যার চেষ্টা করে।’

সোহাগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট সভা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ওই শিক্ষিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এসময় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদেরও তাদের আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলেনের বিষয়ে রবির রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অসহায় অবস্থা এবং অনশনরতদের দুর্ভোগ দেখতে এদিন (রোববার) একাডেমিক ভবনে যাই। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে আমি ও আমার সহকর্মী শিক্ষকরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তারা অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানার স্থায়ী অব্যাহতি ছাড়া আর কোন কথাই শুনতে রাজি হয়নি।’

এর আগে ভিসি আব্দুল লতিফ জানান, ফারহানা ইয়াসমিনের চাকরি হতে স্থায়ী অব্যাহতির ব্যাপারে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও একটু সময় নেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। এ জন্যই সিন্ডিকেটের এ সভা স্থগিত করা হয়। রবির ভিসি আরও বলেন, খুব শিগগিরই সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে বিষয়টির সুরাহা করা হবে।

দীর্ঘ প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য আসা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চুল কাটার মতো একটি অসম্মানজনক ও লজ্জাজনক ঘটনার কোনো সমাধান না করে এবং সর্বশেষ শুক্রবারের সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করে ছাত্রদের প্রতি এ উদাসীনতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্রমেই ফুঁসে উঠছে।

এদিকে ফারহানা ইয়াসমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হলেও তিনি তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হননি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার মধ্যে তার আসার কথা ছিল। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও তিনি না আসায় তার বক্তব্য ছাড়াই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ১৬ কার্যদিবস পরে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গত শুক্রবার দীর্ঘ সময় চলা সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী অব্যাহতির সিদ্ধান্ত না আসায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফা আন্দোলনে যাওয়ায় কার্যত বিশ্বদ্যিালয়টির অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/২৪ অক্টোবর ২০২১

Back to top button