কক্সবাজার, ২২ অক্টোবর – রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁকা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর খুনি ও তাদের মদদদাতারা একযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করেছে।
এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে কথিত মুহিবুল্লাহ খুনের মদদদাতা সংগঠন হিসাবে আরসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র বলছে, বৈঠকে বৃষ্টি থেমে গেলে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পের ঘনবসতি স্থানে একযোগে অগ্নিসংযোগ করা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযান নস্যাতে নতুন করে এ পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছে সূত্রটি। এ বিষয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারাও অবহিত।
ইতোমধ্যে ক্যাম্পে অগ্নিংযোগের বিষয়ে সজাগ থাকতে রোহিঙ্গাদের পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় বিভিন্ন গ্রুপে সতর্ক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
কথা হয় ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরাও একই ধরনের তথ্য পেয়েছি। কোনোভাবে যেন দুষ্কৃতকারীরা ক্যাম্পে নাশকতা করতে না পারে এ জন্য সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। তিনি বলেন, ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরমধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যায় গ্রেফতার পাঁচ আসামির কাছ থেকে খুনিদের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা যুবক হামিদ হোসেন বলেন, ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করতে আরসার সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠক করার পরই আমাদের সামাজিক গ্রুপগুলোতে তা প্রচার করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাতে ক্যাম্পে পাহারা বসিয়েছেন।
একই সঙ্গে আরসার সন্ত্রাসীদের দেখলে ধরে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কথা হয় কুতুপালং ক্যাম্পের বসতি নবী উল আলম ও বারাক হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ থেকে জেনেছি, সন্ত্রাসীরা রাতে যে কোনো সময় ক্যাম্পে আগুন লাগানোর চেষ্টা করতে পারে।
বিষয়টি জানার পর আমরাও বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপ ও ফোন করে ক্যাম্পে থাকা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের জানিয়েছি, সবাই এখন সতর্ক। এছাড়া আমরা রাতে ১০ জন করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। খুনি ও তাদের নেপথ্য মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে।
মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে পাঠানো হয়েছে। তবে ১২ অক্টোবর প্রকাশিত মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে মিয়ানমারের হাত! শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ আরও একটি প্রতিবেদন সংস্থার তদন্ত কাজে সহায়ক হয়েছে।
মুহিবুল্লাহ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনেও অনেক কাজে লেগেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা নেতা হত্যার পর প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনই আমাদের তদন্তের জন্য সহায়ক হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদেরও চিহ্নিত করা গেছে।
মুহিবুল্লাহর খুনিরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ে! এদিকে মুহিবুল্লাহর খুনিরা টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা নয়াপড়া মুছনি ক্যাম্পে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের আশ্রয়ে থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুতিয়া গ্রুপ ও গিয়াস বাহিনী নামের এ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো হেন অপকর্ম নেই যা তারা করে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মুহিবুল্লাহর খুনি হিসাবে আলোচনায় নাম আসা কথিত আরসার সক্রিয় সদস্য হামিদ হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়া, শফিউল আলম, কেফায়েত উল্লাহ, কোরবান আলি, ইলিয়াস মাঝি মাস্টার হামিদ ও রহিমসহ আরও কয়েকজনকে মুছনি ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় দেখা গেছে।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পুতিয়া বাহিনী ও গিয়াস বাহিনীর আশ্রয়ে রয়েছে তারা। কথিত আরসার সঙ্গে বহু বছর ধরে পুতিয়া ও গিয়াস বাহিনী ইয়াবা ও অপহরণ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, এ বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে। তথ্য সত্য হলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।
সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/২২ অক্টোবর ২০২১