ক্রিকেট

মরুদ্যানে জয়ের ফুল ফোটাতে চায় বাংলাদেশ

মাস্কাট, ১৭ অক্টোবর – ‘হয়্যার ইজ দ্য গেট নাম্বার থ্রি?’-মাসকটের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে কর্মরত জনা পাঁচেক মানুষকে জিজ্ঞেষ করেও জানা গেলো না প্রবেশপথ। সবার উত্তর ‘ডোন্ট নো ব্রাদার।’ তাদের জানার কথাও নয়, কেননা তারা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১-এর মঞ্চ প্রস্তুত করতে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেদের। শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি আঁচড় দেওয়া বেশির ভাগ কর্মীই ভারতীয়। ভ্রাম্যমাণ এই কর্মীদের মতো স্টেডিয়ামের বিভিন্ন স্থাপনাও অস্থায়ী।

জোড়াতালি দিয়ে তৈরি এই স্টেডিয়ামে শুরু হবে লাল সবুজের বাংলাদেশের মিশন বিশ্বকাপ। এই আল আমিরাতের ইনডোরে তৈরি অস্থায়ী সংবাদ সম্মেলনে বসে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ গাইলেন আশার জয়গান। হাসিমুখে প্রবেশ করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন স্কটিশ বাধা কাটিয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ। রোববার (১৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে মাহমুদউল্লাহরা।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে সুখকর সময় পার করছে। টানা তিনটি সিরিজ জয়, র‍্যাংকিংয়ে নিজেদের ইতিহাসে সেরা স্থানে (ষষ্ঠ), এর চেয়ে ভালো কী হতে পারে? বাংলাদেশের সমর্থকরা যখন বিশ্বকাপ স্বপ্নে বিভোর, তখন টানা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে খটকা লাগিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহরা। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুকে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে যে আশার বাণী শুনিয়েছেন দলপতি তা এক কথায় প্রকাশ করলে হবে ‘পরাজয়ে ডরে না বীর।’

‘আমরা দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ হেরেছি। আমার মনে হয় এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা কালকের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত আছি। দলের আত্মবিশ্বাস আগের মতই আছে। আমরা সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে পারব। না, কোনো সতর্কবার্তা না। আমরা জানি প্রস্তুতি ম্যাচে কোন জায়গাগুলো কাজে লাগাতে পারিনি’-ঠিক এভাবেই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে গেলে নেই। মূলপর্বে সর্বশেষ জয় ২০০৭ সালে। এবার সেই হারের বৃত্ত ভেঙে ধাপে ধাপে এগোতে চান মাহমুদউল্লাহ, ‘আমরা আপাতত এই রাউন্ড নিয়েই চিন্তাভাবনা করছি। ইনশাআল্লাহ্ এই রাউন্ড ভালো খেলে, সব ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ডে গেলে এই জিনিসগুলো নিয়ে ভাববো। এর আগে আমি দেশে একটা কথা বলেছিলাম- আমাদের বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে, কিছু বাধা আছে এগুলো ভাঙতে চাই। যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জিততে চাই।’

স্কটিশদের বিপক্ষে নামার আগে আলোচনায় বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। মোহাম্মদ নাইম-লিটন দাস নাকি দুজনের কোনো একজন আর সৌম্য সরকার? আশা-ভরসার জয়গানে অধিনায়ক যা শোনালেন তা চমকে যাওয়ার মতই। ওপেনিংয়ে নাঈম-লিটনের জুটি এক প্রকার নিশ্চিত; তাহেল প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ করা সৌম্য কী বাদ পড়তে যাচ্ছেন? না, এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে দেখা যেতে পারে তিন নম্বরে সাকিব আল হাসানের জায়গায়। তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে কম্বিনেশনের উপর।

‘সৌম্য দারুণ ব্যাটিং করছে। এই দুইটা ম্যাচে ব্যাটিং ভালো করেছে, বোলিংও খুব ভালো করেছে। টিম কম্বিনেশন কীভাবে সাজাচ্ছি এটার ওপর নির্ভর করছে। ওপেনিংয়ের বিবেচনায় সে আছে, অথবা তিন নম্বরেও দেখা যেতে পারে। কাল দেখতে পারবেন কম্বিনেশন কী হয়। তবে সম্ভবত আমরা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজের কম্বিনেশন নিয়েই আমরা নামব।’

অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের কম্বিনেশন অনুযায়ী একাদশ গড়ার কথা জানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে স্পিন কেন্দ্রিক যে হবে না এটাও নিশ্চিত করেছেন। সে ক্ষেত্রে দুই পেসারের সঙ্গে পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে দেখা যেতে পারে। আর স্পিনে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে একাদশে দেখা যেতে পারে নাসুম আহমেদকে। সঙ্গে সাকিব আল হাসানতো আছেনই।

ঘরের মাঠে স্লো উইকেটে বাংলাদেশ নাস্তানাবুদ করেছে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে। ওমানে কেমন উইকেট আশা করছে দল? বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘পিচ ওমানে যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম সেই ম্যাচে ব্যাটসম্যান-বোলারদের সাথে যতটা আলাপ-আলোচনা করেছি, সবাই বলেছে পিচের কন্ডিশন ভালো ছিল, স্পোর্টিং উইকেট ছিল। আশা করি কন্ডিশন ওরকমই থাকবে।’

পাহাড়ের কোলঘেষা সবুজ গলিচায় ভালো শুরু করতে হলে স্কটিশদের হারাতেই হবে। এখন পর্যন্ত দুই দল একবার মুখোমুখি হয়েছে, আর তাতে জয় পেয়েছিল স্কটল্যান্ডই। মরুর বুকে নিরুত্তাপ এই মহাযজ্ঞে প্রাণ সঞ্চার করতে প্রস্তুত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

বিশ্বকাপের আমেজহীন মাসকটে উত্তেজনার রেণু ছড়াতে পারেন ক্রিকেট পাগল প্রবাসীরা। সাকিব-মুশফিকদের চার-ছয়ের মারে কিংবা মোস্তাফিজ-নাসুমদের উইকেটে গ্যালারিতে মাতম তুলবেন তারা। মাহমুদউল্লাহর দল কি পারবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নতুন গল্প রচিত করতে?

সূত্র : রাইজিংবিডি
এন এইচ, ১৭ অক্টোবর

Back to top button