জাতীয়

বাবরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় মঙ্গলবার

ঢাকা, ১১ অক্টোবর – ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের মামলায় রায় আগামীকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন আদালত। ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করবেন। গত ৪ অক্টোবর মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করে একই আদালত।

গত ৪ অক্টোবর দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে বাবরের পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম অভিযোগ প্রমাণিত হয় নাই খালাস পাওয়ার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে বেকসুর খালাস প্রার্থনা করেন।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে কারাগারে থাকা বিএনপির সাবেক এ নেতাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

খালাসের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বাবরের আইনজীবী বলেন, ‘আমার আসামির (বাবর) বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ একটি বাড়ি নির্মাণে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা কম দেখিয়েছি। এ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য বাড়িটি নির্মাণের জন্য আমরা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেই। তার সঙ্গে ৪১ লাখ টাকা চুক্তি হয়। সেখানে আমরা তাকে ৮ লাখ টাকা প্রদান করি। সেই টাকাই আমরা হিসাবে দেখাই। পিডব্লুডি পরিমাপ করে সেখানে ৩৪ লাখ টাকার কাজ পেয়েছেন মর্মে দেখানো হয়েছে। কিন্তু আমরা তো ঠিকাদারকে ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। তাই তার বাইরে আমরা কিভাবে ৩৪ লাখ টাকা দেখাব? তাই এখানে আমাদের কোন অপরাধ নেই। ’

‘আর একটি অপরাধ বাবর সাহেবের হিসাবে ১০ লাখ ইউএস ডলার বা ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই জমা হয়। কিন্তু আমরা হিসাব দিয়েছি ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই। তাই ওই টাকা দেখানোর সুযোগ ছিল না। আর ওই টাকা আমরা আমাদের বলে স্বীকার করি না, যা আমরা আমাদের আয়কর নথিতে বলেছি। কারণ টাকাটি আমাদের রাজনৈতিকভাবে ফঁসানোর জন্য তৎকালীন ট্রাসফোর্সের সদস্য মেজর জমিস জমা দেয়। তাকে এই মামলায় সাক্ষীও করা হয়নি। তাই কোন অপরাধই আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হয় নাই। ’

জবাবে প্রসিকিউটর কাজল বলেন, বাড়ি নির্মাণে আসামি ৮ লাখ টাকা খরচ দেখিয়েছেন। সেখানে ৩৪ লাখ টাকার কাজ পাওয়া গেছে। বাকি টাকা গোপন করেছেন। আর ১০ লাখ ইউএস ডলার তার হিসাবে জমা হয়। তদন্তকালীন সময়ে এই টাকার উৎস সম্পর্কে বাবর সাহেব কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। তাই উভয় ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ (১) ধারায় অসঙ্গিতপূর্ণ হিসাব দাখিলের জন্য ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২৭ (১) ধারায় জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাবর আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং কোন সাফাই সাক্ষী দিবেন না মর্মে জানান।

২০০৭ সালের ২৮ মে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হওয়া এ আসামির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলাটি ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রমনা থানায় দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা এ চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে বাবরের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদ রাখার অভিযোগ করা হয়। তিনি দুদকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলেন। তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে প্রাইম ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক দুইটি এফডিআর-এ ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা গোপনের কথা উল্লেখ করা হয়।

২০০৮ সাল থেকে কারাগারে থাকা এ আসামির একটি অস্ত্র মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তার ১৭ বছর কারাদণ্ড হয়। এরপর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়। তার বিরুদ্ধে সাব্বির হত্যা মামলার বসুন্ধরার শাহআলম পরিবারকে বাঁচাতে ঘুষ গ্রহণে দুর্নীতি এবং আয়কর ফাঁসির মামলাসহ ছয়টি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ১১ অক্টোবর

Back to top button