জাতীয়

বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

জোবায়ের আহমেদ নবীন

ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর- স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এক অন্যতম নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার রাইজিংস্টার বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এবার জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের যোগ দেয়া বাংলাদেশ বন্দনায় মুখর বিশ্বের প্রায় সব দেশ। অন্য সব বারের চেয়ে এবারের অধিবেশন তাই অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে।

করোনা মহামারিকালে যখন উন্নত বিশ্বের সব দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে তখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এর ফলেই অর্জিত হয়েছে জাতিসংঘের এসডিজি পুরস্কার। মাথাপিছু আয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুপার পাওয়ার ভারতকে পেছনে ফেলে এবং শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদদের চমকে দিয়েছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। আর বিশ্ব মোড়লসহ উন্নত দেশগুলোর নজর এখন বাংলাদেশে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভৌতিক অবকাঠামোর উন্নয়নে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তাই এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে পাঁচ দশকে অর্থনীতি ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ব্যাংক সূত্রে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতের পরিবর্তনের একটি তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, খাদ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, বাজেটের আকার- সব সূচকেই দূরবর্তী এগিয়েছে বাংলাদেশ। কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শিশুমৃত্যুর হার।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, দেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী অর্থনীতির যত পরিবর্তন ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১২ বছরে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

বিশেষ করে পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কৃষিনির্ভরতা কমেছে, বেড়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প ও সেবা খাতের গুরুত্ব। স্বাধীনতার পর যেখানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ৯ ভাগ, তা এখন বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৩৫ ভাগ হয়েছে, যার মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর যেখানে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫০ শতাংশের বেশি, তা এখন হ্রাস পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ শতাংশ হয়েছে।

সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং এক্ষেত্রে দেশটিকে আশা দেখাচ্ছে মূল রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে এ দেশের অর্থনীতিতে ৫ দশমি ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্বাভাসের পুরো সময়জুড়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে থাকবে বিশেষত দৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পরিকল্পিত সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে চলমান সংস্কারের কারণে। এই সংস্থার মতে গত অর্থবছরে প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই হার কমার লক্ষণ দেখা গেছে। তবে অঞ্চলিক রপ্তানি সামষ্টিকভাবে কমে আসলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

আইএমএফের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৃতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল

আর আই

Back to top button