ব্যবসা

কেন হঠাৎ কমছে রেমিট্যান্স

ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর – করোনা শুরুর পর এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠাচ্ছিলেন। কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির কারণে হুন্ডি চাহিদা কম থাকায় পুরো অর্থ আসছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৩৬ শতাংশ। কিন্তু হঠাৎ করে গত দু’মাস রেমিট্যান্স কমেছে।

রেমিট্যান্স কেন কমছে- উত্তরে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলেছেন, দেশের যে কোনো খারাপ অবস্থা কিংবা উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা সব সময় বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। করোনার অনিশ্চয়তার মধ্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আবার করোনার স্থবিরতার কারণে হুন্ডি প্রবণতা একেবারে কমে যায়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে সব সময় অবৈধ চ্যানেলের অর্থের চাহিদা থাকে। করোনার স্থবিরতার মধ্যে এসব বন্ধ থাকলেও এখন সব খুলতে শুরু করায় ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় কাছে করেও হয়তো অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। এসব কারণে সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদার পরও রেমিট্যান্স কমছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, করোনায় কাজ হারিয়ে অনেকে জমানো অর্থ নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। এখন পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। এতে করে দেশের বাইরে খরচ বেড়েছে। তবে ইতোমধ্যে আবার বিদেশে যাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স পরিস্থিতি শিগগিরই আবার আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে এসেছিল ৪৫৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে দুই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে যেখানে প্রবৃদ্ধি হয় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছর রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। এত প্রবৃদ্ধির পরও এভাবে কমতে থাকায় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বেশি রেমিট্যান্স আসে এ রকম সব দেশ থেকেই রেমিট্যান্স কমছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে হ্রাসের হার তুলনামূলকভাবে কম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৫৬ কোটি ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে ৩৩ কোটি ডলার থেকে কমে ৩০ কোটি ডলারে নেমেছে। রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশ সৌদি আরব থেকে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ কমে ৮৯ কোটি ডলারে নেমেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাস-উল ইসলাম বলেন, প্রতিটি জিনিসের উত্থান-পতন থাকে। রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পর কিছুটা কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে শ্রম রপ্তানি শুরু হওয়ায় শিগগিরই আবার বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ১২ সেপ্টেম্বর

Back to top button