অপরাধ

বিয়ে করে স্ত্রীদের বিদেশে পাচার করতো লিটন

ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর – নাম লিটন মিয়া। ৫ বছর থেকেছেন ইতালিতে। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে করেছেন বহু বিবাহ। প্রথমে ইরাকে মেডিকেল চাকরির প্রলোভন দেখাতো। পরে সখ্যতা গড়ে বিয়ের প্রস্তাব। এরপর কাউকে টেলিফোনে কিংবা সরাসরি দেশে এসে বিয়ে সম্পন্ন করত। মূলত নারীদের বিদেশ পাচারের জন্যই বিয়ে করত লিটন।

শনিবার রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরা এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা লিটন ও আজাদকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্যই জানিয়েছে র‍্যাব। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট কার, বিয়ার, দেশি-বিদেশি জাল টাকা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সিল উদ্ধার করা হয়।

পরে এ ব্যাপারে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার ২ জন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। বিশেষ করে বিউটি পার্লারে কাজ জানা নারী ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত নারীদের পাচার করেছে। সেখানে সুপারশপে চাকরির প্রলোভনে তারা নারীদের পাচার করত। ইরাক, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। এসব দেশে তাদের একাধিক সেফহাউজ রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২’শত নারী-পুরুষকে তারা পাচার করেছে।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে নারীদের বিক্রি করে দেয়া হতো। চক্রে ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশেই কাজ করছিল। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে এসব নারীদের চাকরির আশ্বাসে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানবপাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নেওয়া হতো। চক্রটি ৩০-৪০ জন নারীকে পাচার করেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন , ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করেন লিটন মিয়া। এরপর সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মিথ্যা প্ররোচনা ও অনৈতিক কাজের জন্য সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়। এরপর লিটন ইরানে যায়। এসময় নিজেকে ইরাকের বাগদাদে একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চাকরি করতেন বলে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে কয়েকজন মিলে ইরাকে নারী পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।

সবশেষ পাচার হওয়া এক নারীর বরাতে র‌্যাব জানিয়েছে, তিনি ইরাকে সেফহাউজে থাকাকালে সেখানে ১৫-২০ জনকে দেখেছেন। সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া ২০১৯ সালের পর আর ইরাকে যেতে পারেননি। পরে দেশেই বালি ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।

জানা যায়, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির প্রতারণার বিষয়টি দেখতেন। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়েছে। সে পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেওয়া, টিকেট কেটে দেয়া বিষয়গুলো দেখত।

পাচার করা নারীদের কি কাজে বিক্রি করে দেয়া হতো এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তাদেরকে যৌনকর্মী হিসেবেই বিক্রি করা হতো। তবে এর মধ্যে অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এস, ১১ সেপ্টেম্বর

Back to top button