অপরাধ

৯০০ টাকার চাকরি থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর – এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার রাগীব হাসান ওয়াজ মাহফিলে ব্যবসায়িক প্রচারসহ ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহারের মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। শুক্রবার এক তাকে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় র‌্যাব।

এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সুদবিহীন ‘শরিয়তসম্মত’ ব্যবসার নামে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে।

এ ব্যবসায় চালাতে ‘এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’, ‘এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড’ খুলেছিল কোম্পানিটি। তাদের কয়েকটি মাদ্রাসাও আছে।

রাগীব আহসান নূরে মদিনা ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। একসময় তিনি মসজিদের ইমাম ছিলেন। বাড়ি পিরোজপুর সদরের খলিশাখালী এলাকায়। এক সময় তিনি এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন।

চলতি বছরের শুরুতে গণমাধ্যমে খবর আসে, মাসে মাসে ভালো মুনাফার লোভ দেখিয়ে পিরোজপুর ও আশপাশের জেলার কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছ অর্থ সংগ্রহের পর ওই গ্রুপের কর্মকর্তারা লাপাত্তা হয়ে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, এ গ্রুপের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে এমএলএম কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেপ্তার রাগীব আহসান ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করেন। পরে ১৯৯৬-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ সাল পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করেন। এরপর সে পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করে। ২০০৬-২০০৭ সালে তিনি ইমামতির পাশাপাশি “এহসান এস মাল্টিপারপাস” নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। মূলত এ প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এমএলএম কোম্পানির আদ্যোপান্ত রপ্ত করেন। পরে নিজে ২০০৮ সালে “এহসান রিয়েল এস্টেট” নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সে মূলত ধর্মীয় আবেগ/অনুভূতিকে অপব্যবহার করে এমএলএম ফাঁদ তৈরি করে। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম ও অন্যান্যদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। “শরিয়ত সম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ” এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। এ ছাড়া ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যবসায়িক প্রচার-প্রচারণা করতেন। মূলত লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকা পাওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। ২০০৮ সালে ১০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করতে সমর্থ হন বলে জানান। এখন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, এ গ্রুপে প্রায় তিন শত কর্মচারী রয়েছে। যাদের কোনো বেতন দেওয়া হয় না। কর্মচারীরা মাঠপর্যায় থেকে বিনিয়োগকারী গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের গ্রাহকের বিনিয়োগের ২০% অর্থ পাওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। ফলে কর্মচারীরা দ্রুত গ্রাহকসংখ্যা বারাতে পাড়েন। তবে রাগীব আহসান এখন কর্মচারী, গ্রাহক সবাইকে প্রতারিত করেছেন।

তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের নাম যুক্ত করে ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি করেন রাগীব আহসান। তার কাছের আত্মীয়দের মধ্যে শ্বশুর প্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি, বাবা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, ভগ্নিপতি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এ ছাড়া রাগীব আহসানের তিন ভাইয়ের মধ্যে গ্রেপ্তার আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, বাকি দুই ভাই প্রতিষ্ঠানের সদস্য।

আহসান গ্রাহকদের সঙ্গে কীভাবে প্রতারণা করতেন জানতে চাইলে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, তিনি চেক জালিয়াতি করতেন। অনেকেই পাওনা টাকার চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এ ছাড়া অনেকে ভয়ভীতি, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হতেন বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। আহসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে। তার গ্রাহকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনি মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে উঠে আসে। পাওনা ২৮ লাখ টাকা চাইতে গেলে তার প্রতিষ্ঠানের লোক এক গ্রাহককে অ্যাসিড নিক্ষেপও করে।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ১১ সেপ্টেম্বর

Back to top button