ঢাকা, ০৬ সেপ্টেম্বর – ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের অন্যতম পরিচালক বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার অবৈধ কারবারের সূত্র ধরে আরেক রাঘববোয়ালের খোঁজ মিলেছে। তার নাম আমান উল্লাহ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ছলচাতুরী করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে চলতি বছরের জুনে আমান উল্লাহ ও বীথি নামের এক তরুণীর কাছে ই-অরেঞ্জ বিক্রি করে দেওয়া হয়। ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নগদ হাট ও আমান টেল এবং ডিজিটাল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে আমানের। নামে-বেনামে তারও অঢেল সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বিদেশে তিনি টাকা পাচার করেছেন- এমন তথ্য পেয়েছে একাধিক সংস্থা। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির একাধিক মামলাও রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এক সময়ের প্রতারক আমান বিয়ে করেন পুলিশের এক কর্মকর্তাকে। পরে ওই কর্মকর্তা তাকে ডিভোর্স দেন। এখন পর্যন্ত তিনটি বিএমডব্লিউ, দুটি মার্সিডিজ ও এক প্রাডো গাড়ির মালিকানা থাকার তথ্য আছে আমান উল্লাহর। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাসন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। আমান উল্লাহর বাবা মৃত মোছাদ্দেক চৌধুরী। আমানের শৈশব কেটেছে নানার বাড়ি নলছিটিতে। তিনি ভোলা জেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি কেফায়েত উল্লাহর আপন ভাতিজা। এরই মধ্যে ঢাকায় তার হেফাজত থেকে একটি মার্সিডিজ গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। বসবাস করেন ঢাকার কাঁঠালবাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। আমানের বিত্তবৈভব দেখে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত।
গ্রাহকের প্রায় এগারোশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর আলোচনায় আসে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ। মূলত অরেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলো ই-অরেঞ্জ। শুরু থেকেই অরেঞ্জ বাংলাদেশের সঙ্গে শেখ সোহেল রানার নাম আসে। তবে বরাবর তিনি তা অস্বীকার করে আসছিলেন।
প্রতিষ্ঠানটির কিছু নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠান খুলতে যে টিআইএন সনদ নেওয়া হয়, সেখানে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম আছে। ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নেওয়া ৩৪৯ কোটির টাকার হদিস নেই। দুটি বেসরকারি ব্যাংকে ই-অরেঞ্জের অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০ জুলাই পর্যন্ত একটি ব্যাংকের হিসাবে জমা পড়ে ৬২০ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার ৭২৯ টাকা।
ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, মোট ৬২০ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৯২ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই হিসাব নম্বরে এখন মাত্র ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৭ টাকা জমা আছে। আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ৩০ জুন পর্যন্ত জমা পড়ে ৩৯১ কোটি ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৯ টাকা। সেখানেও জমা আছে দুই কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৯ টাকা। তুলে নেওয়া হয়েছে বাকি ৩৮৮ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫৯ টাকা।
ই-অরেঞ্জের অর্থ আত্মসাতের মামলায় আসামি হওয়ার পরপরই দেশ থেকে পালাতে গিয়ে শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের চ্যাংড়াবান্ধা এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হন বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা। বিনা ভিসায় ভারতে প্রবেশের দায়ে করা মামলায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বর্তমানে তিনি তিন দিনের হেফাজতে রয়েছেন। ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় সোহেলের কাছ থেকে থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। তার পাসপোর্টে ভারতের ভিসা না থাকলেও ছিল থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, চীন ও শেনজেন ভিসা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সোহেল রানা। থাইল্যান্ডের পাতায়ায় হিলটন হোটেলের পাশে একটি পাঁচতারকা হোটেল করার জন্য শতকোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তার। দেশেও একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। এই অঙ্কও প্রায় একশ কোটি টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সুপারশপ, বার ও রেস্টুরেন্টও রয়েছে।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১