ছায়ানট (কলকাতা)-এর উদ্যোগে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা
কলকাতা, ০৪ সেপ্টেম্বর – কাজী নজরুল ইসলামের বহুল প্রচলিত ছড়া, কবিতার বাইরেও স্বল্পপরিচিত শিশুসাহিত্য নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ছায়ানট (কলকাতা)। এ কাজটির প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন-“বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোররা একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য না হওয়ায় ঠাকুমা কিংবা দিদিমার কণ্ঠে ছড়া, কবিতা শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
সেইসব শিশু-কিশোরদের কথা ভেবেই ছায়ানট (কলকাতা)-এর এই বিশেষ উদ্যোগ। এখানে কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজীকে ঠাকুমা কিংবা দিদিমা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কল্যাণী কাজী জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হলেও আমরা তাঁকে বাচিকশিল্পে বিশেষভাবে পাইনি। তাঁর এই উপস্থাপনায় নেই কোনো কৃত্রিমতা কিংবা আতিশয্য। তিনি অতি সহজ-সরল ভঙ্গিমায় আন্তরিকতার সঙ্গে আবৃত্তি করেছেন ছড়া, কবিতাগুলো। তাঁর কণ্ঠে মোট ২৫টি ছড়া, কবিতা ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে -চিঠি, ঘুম পাড়ানী গান, প্রভাতী, কালো জামরে ভাই, শিশু সওগাত, প্রার্থনা, বাংলা মা, খুকুমণি, আঁধারে, ভাই, আর্শীবাদ, পুতুল খেলা, মাতৃ-বন্দনা, প্রজাপতি, ক্ষমা কর হজরত্, আমি যদি বাবা হতাম, নতুন পথিক, ঘুম জাগানো পাখি উল্লেখযোগ্য।”
ছায়ানট কলকাতার মহৎ এ কাজে কল্যাণী কাজীর অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ছড়া, কবিতাগুলো আবৃত্তি করতে গিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন এভাবে-
“এই কবিতার কাজটা যে করলাম, এটা আমার কাছে ফিরে পাওয়া। ছোটবেলায় ‘প্রভাতী’ কবিতার মাধ্যমেই বাবাকে (কবি) চেনা। তিনি ছিলেন আমার প্রিয় কবি। আজ সেই প্রিয় কবির কবিতা, ছড়া নিজ কণ্ঠে আবৃত্তি করতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত ও গর্বিত। এ কাজের মাধ্যমে আমি যেন আবার বাবাকে (কবি) ফিরে পেলাম। সর্বোপরি আমার এ কাজ তখনই সার্থক হবে যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এটাকে গ্রহণ করবে। আমি এ কাজের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সকল নাতি-নাতনিদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।”
বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী দেবাশিস বসু কল্যাণী কাজী সম্পর্কে লেখেন: “ছবির জীবনটা অনেকটা ছায়াছবির মতো” — এক মুখ হাসি ছড়িয়ে বলে উঠলেন দিদি। কল্যাণী কাজী — পাশের বাড়ির মিষ্টি মেয়েটির ডাক নাম যে ‘ছবি’। পড়াশোনা, নাচ, গান, আবৃত্তি সবেতেই তুখোড়। পরিবারের একমাত্র কন্যে, আদুরে হবে স্বাভাবিক। তখন বড়জোর স্কুলের ক্লাস থ্রি কিংবা ফোর, আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় নজরুলের ‘প্রভাতী’ কবিতা বলে প্রথম হওয়া। আহা! যেমন কথা, তেমন ছন্দ — কল্যাণী মুগ্ধ। একটু বড় হয়ে গান শেখা ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীত-গুণীর কাছে। এবার নজরুলসঙ্গীতে কল্যাণী আবিষ্ট। সানি-নিনি দুই ভাই। ছোটজন নিনি — সুরের মানুষ। পরিচয় থেকে পরিণয় — কাজী অনিরুদ্ধর ঘরনী, বাড়ির প্রথম পুত্রবধূ। শ্বাশুড়ি-মা প্রমীলা দেবী অসুস্থ। অর্থের অনটন, তবে আনন্দ অফুরান। শ্বশুর-বাবা কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসা। ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’ — কম বয়সে পতিহারা কল্যাণী ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় বড় করেছেন, তাঁরাও যে যাঁর মতো ব্যস্ত। শুনেছি, বার্ধক্য নাকি ‘দ্বিতীয় শৈশব’। পঁচাশি — সংখ্যামাত্র। মনে মনে ক্লাস থ্রি-র ছবি, আবার আবৃত্তি করলেন নজরুলের ছোটদের কবিতা — ছোটদের জন্য। ছায়ানট (কলকাতা)-র আবদার। পুরনো দিনে ফিরে যাওয়া — ছবির জীবনটা সত্যিই অনেকটা ছায়াছবির মতোই।
আজ (৪ঠা সেপ্টেম্বর) নিউটাউন নজরুলতীর্থে বিকেল ৫টায় ছায়ানট (কলকাতা)-এর উদ্যোগে কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড থেকে প্রকাশিত হবে এই অডিও অ্যালবামটি ‘শিশু কিশোরদের নজরুল’। কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় সোমঋতা মল্লিক, নির্মানে স্বাগত গঙ্গোপাধ্যায়।
এন এ/ ০৪ সেপ্টেম্বর