নদীর পানি বাড়ছেই, বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর – পদ্মার পানি ১৬ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে আছে। যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপরে, বগুড়ায় ৬৫ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। বকশীগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ও দশানির পানি বেড়ে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমির রোপা আমন নিমজ্জিত রয়েছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ও ধরলার পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এতে অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফসলহানি ও ভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
ফরিদপুর : ১৬ দিন ধরে পদ্মার পানি রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মধুমতি ও আড়িয়ালখাঁর পানি। ফরিদপুর পাউবো জানিয়েছে, পদ্মায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
ফরিদপুর জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রামের ফসলি খেত, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুরের বিভিন্ন অংশে।
সরকারিভাবে এসব এলাকায় ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এছাড়াও নগদ অর্থ শিশু খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি এক দিনের ব্যবধানে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গতকাল সকালে কাজিপুরে মেঘাই ঘাটে ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হানিফ জানায়, জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬২ হেক্টরে। এ দিকে, কাজিপুরে নাটুয়ারপাড়া নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের চাপে প্রায় ২০ ফিট ধসে গেছে।
বগুড়া : জেলায় যমুনার তীরবর্তী ও চরবেষ্টিত ৮৮টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে ১৬ হাজারেরও বেশি পরিবারের ৬৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, ২৬ আগস্ট থেকে যমুনায় পানি বাড়ছে। বৃহস্পতিবার যমুনার পানি বগুড়ায় বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারিয়াকান্দির ১৭৭ হেক্টর, সোনাতলার ৮১ হেক্টর ও ধুনটের ২৮২ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
কুড়িগ্রাম : স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙা, যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া এবং চিলমারী উপজেলার চিলমারী, রমনা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের এক হাজারেরও বেশি পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের নন্দির মোড়, জোরগাছ মাঝিপাড়াসহ কয়েকশত বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ভুক্তভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার।
উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের কলেজ শিক্ষার্থী শেখ তৌহিদ আহমেদ জানান, গতকাল সকালে দক্ষিণ খাওরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাংশ নদের গর্ভে চলে গেছে।
উলিপুর উপজেলার পিআইও সিরাজ-উদ-দৌলা জানান, ‘আমরা বারবার তালিকা চাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা এখনো কোনো তালিকা জমা দেননি।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরের ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। হাতিয়া ইউনিয়নে প্রায় আধা কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে লোকাল?য়ে পা?নি ঢুক?ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, বীজতলা ২০ হেক্টর, শাকসবজি ৪০ হেক্টর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌল্লা বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০ টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের বকশীগঞ্জে দশানী নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে উপজেলার সাধুরপাড়া, বগারচর, নিলক্ষিয়া ও মেরুরচর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাধুরপাড়ার একটি কাঠের সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এ ছাড়াও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিলের পাড়, ডেরুরবিল, চর গাজির পাড়া, বাংগালপাড়া, কুতুবের চর, আচ্চাকান্দি, কামালের বার্তী, চর কামালের বাতী, চর আইরমারী, আইরমারী খান পাড়া, মদনের চর, তালতলা, মেরুর ইউনিয়নের ঘুঘরাকান্দি, পূর্ব কলকিহারা, মাইছানিরচর, ভাটি কলকিহারা, উজান কলকিহারা, ফকিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল এখন প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ জানান, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমির রোপা আমন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুন মুন জাহান লিজা জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে ১ লাখ করে ৪ লাখ টাকা ও প্রতি ইউনিয়নে ১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ
এম ইউ/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১