সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে নীতি বদলাচ্ছে ভারত
নয়াদিল্লি, ০৩ সেপ্টেম্বর – আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান আসার পর থেকেই দেশটির প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতিতে নড়াচড়া শুরু হয়। পাকিস্তান-চীন তালেবানকে সমর্থন দিতে এক-পা এগিয়ে থাকলেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল ভারত। কারণ, ভারতের মাথার ওপর আছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু সব দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে গত মঙ্গলবার দোহায় ভারতীয় দূতাবাসে তালেবান প্রতিনিধির মুখোমুখি হলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল। তবে তাদের মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
আফগানিস্তানকেন্দ্রিক রাজনীতির অংশ দেশগুলো তালেবানকে আফগানিস্তানের ‘সব গোষ্ঠীকে’ সন্ত্রাসে মদদ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ১৫ আগস্ট কাবুল পতনের দিন এই নিরাপত্তা পরিষদ যে বিবৃতি প্রচার করেছিল, তাতে ‘তালেবান ও অন্যান্য আফগান গোষ্ঠীকে’ সন্ত্রাসের রাশ টানার আহ্বান জানানো হয়েছিল। ১৫ দিনের কম সময়ের ব্যবধানে হুবহু এক বিবৃতি থেকে স্রেফ ‘তালেবান’ শব্দ প্রত্যাহার যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। কূটনীতিতে শব্দচয়ন ও তার প্রয়োগ প্রবল অর্থবহ। আরও গুরুত্বপূর্ণ, গোটা আগস্ট মাস ধরেই নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছে ভারত। বিবৃতি থেকে ‘তালেবান’ শব্দটির বাদ পড়া এটুকু বুঝিয়েছিল, এতদিন ধরে ভারত যাদের ‘সন্ত্রাসের সমার্থক’ বলে মনে করে এসেছে, সেই ‘যুদ্ধবাজদের’ সরকারকে স্বীকৃতির প্রশ্নে আগামী দিনে তারা হয়তো নতুন করে ভাববে। অর্থাৎ নীতিতে পরিবর্তন আসছে।
সেই বিবৃতির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তালেবানের ‘ডেপুটি হেড’ শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই বলেন, এই উপমহাদেশে ভারতের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের সঙ্গে তালেবান তাই সব ধরনের সম্পর্ক ধরে রাখতে আগ্রহী। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক।
ভারতকে আরও এক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। তালেবান নেতৃত্ব অবশ্যই চাইবে তাদের ওপর (বিশেষ করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক) জাতিসংঘের যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার প্রত্যাহার। সিরাজউদ্দিন হাক্কানিসহ একাধিক তালেবান নেতার ওপর আর্থিক লেনদেন, অস্ত্র কেনাবেচা ও যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তালেবান তা তুলে নিতে বলেছে। পাকিস্তানের মদদপুষ্ট হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রতি ভারতের মনোভাব আদৌ গোপন নয়। আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পেছনে ছিল তারাই। কাশ্মীরের জইশ ও লস্কর জঙ্গিদের সাহায্যের প্রমাণও ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আছে।
গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে ভারত দুই ধরনের লগ্নি করেছে। একটি অর্থলগ্নি, অন্যটি মানবসম্পদের সৃষ্টি। অবকাঠামো নির্মাণে ভারত যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশে যা করেছে, আর কোনো দেশ তা করেনি। প্রতিটি প্রদেশে কমবেশি ৫০০ প্রকল্পে ভারত তার বন্ধুত্বের ছাপ রেখে গেছে।
তালেবানের যে অংশ অন্ধ ভারতবিরোধিতায় বিশ্বাসী, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। সেই নিয়ন্ত্রণ প্রকারান্তরে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণেরই শামিল। বৃহত্তর স্বার্থরক্ষায় নীতি যাতে প্রতিবন্ধক না হয়, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম প্রধান কারণও তা। তালেবান সরকারের গঠন ও চরিত্র ভবিষ্যতে কেমন হবে, এখনো অজানা।
স্বীকৃতিদানের পক্ষে যারা তাদের মতে, অযথা টালবাহানা না করে বাস্তবতা মেনে ভারতের শুরু থেকেই নব্য শাসকদের আস্থাভাজন হওয়া দরকার। এই মহল মনে করে, ২০ বছরে তালেবান অনেকটাই বদলেছে। তারা এখন অন্ধের মতো ভারতবিদ্বেষী নয়। সেই প্রমাণও তারা দিচ্ছে। তা ছাড়া কাশ্মীর নিয়ে তারা যথেষ্ট ইতিবাচক কথাবার্তা বলছে এবং বোঝাচ্ছে, পাকিস্তানের হাতের পুতুল থাকতে রাজি নয়। অতএব তাদের কাছে বিশ্বস্ত হওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১